বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
সড়ক শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

এত বড়ো আন্দোলন হলো তারপরও সচেতনতা নেই

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরও রাস্তায় চলাফেরায় সাধারণ নাগরিকরা সচেতন না হওয়ায় আক্ষেপ ঝরেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে।
যাযাদি রিপোটর্
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:১৩
বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা Ñফোকাস বাংলা

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরও রাস্তায় চলাফেরায় সাধারণ নাগরিকরা সচেতন না হওয়ায় আক্ষেপ ঝরেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে। জাতীয় সংসদের বুধবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নিধাির্রত প্রশ্নোত্তর পবের্ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত বড় একটা দুঘর্টনা ঘটল, এ রকম একটা আন্দোলন হলো, তারপরও আমরা দেখি মানুষের মধ্য সে সচেতনতা নাই। যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছে।’ গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই স্কুলশিক্ষাথীর্র মৃত্যুর পর আন্দোলনে নামে ছাত্রছাত্রীরা, যা পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। টানা ১০ দিনের সেই আন্দোলনের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তায় নেমে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করতে দেখা যায়। রাস্তায় যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টাও করে তারা। কিন্তু ওই আন্দোলনের পর ঢাকার রাস্তায় আইন অমান্য করার পুরনো চিত্র আবার দেখা যায়, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ নূর ই হাসনা চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী নাগরিকদের অসচেতনতার কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এমনকি পত্রিকায় ছবি ওঠেছিল- এক বাবা বাচ্চাকে বুকে নিয়ে .. ফেন্সের মাথাগুলো সরু করে উঁচু করে দেয়া, সে মাথাগুলো ডিঙিয়ে এমনভাবে পার হচ্ছে, কোনোভাবে যদি পা ¯িøপ করে তাহলে ওই বাচ্চা ওই ফেন্সের সরু মাথায় একেবারে গেঁথে যাবে, সেখানেই মৃত্যু হবে। বাবার কি এই সচেতনতা থাকা উচিত ছিল না? সচেতনতার যথেষ্ট অভাব আমাদের। এত বড় একটা ঘটনার পরও দেখবেন, বাচ্চার হাত ধরে দ্রæত রাস্তা পার হচ্ছে। রাস্তা পারাপারে সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, একটা অদ্ভুত মানসিকতা এদেশের মানুষের আছে যে তারা রাস্তা পারাপারের সময়, মানে একটা দ্রæত যান আসছে হাত দেখানোর সাথে সাথে গাড়িটা থেমে যেতে পারে না। এটা যারা গাড়ি চালায় তারা বলতে পারবে.. পট করে গাড়ি থামতে পারে না। আমরা কি দেখি ছোট্ট শিশুর হাত ধরে মা রাস্তায় চলে যাচ্ছে অথবা বাবা বাচ্চাদের নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এমনভাবে যেখানে অনবরত গাড়ি আসছে। তরুণদেরও ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, তাদেরও দেখেছি কাছেই ওভারপাস আছে.. যেতে পারে.. সেখানে না গিয়ে ফট করে দেঁৗড় মেরে পার হতে চায়। তার ফলে অ্যাকসিডেন্ট হয়। অ্যাকসিডেন্ট হলে এটাও বিবেচ্য বিষয় যারা রাস্তা পারাপার করছে তাদের দোষ কতটুকু দেয়া যায়, সেটাও দেখা দরকার। আরেকটা বিষয়- সেটা হলো কোনো একটা অ্যাকসিডেন্ট হলো বা গাড়িতে ধাক্কা লাগল, ড্রাইভার তখন জীবন বঁাচাতে এর ওপর দিয়ে দ্রæত চলে যেতে চেষ্টা করে। ফলে যার বঁাচার সম্ভাবনা ছিল, সে আর বঁাচে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন যাওয়ার চেষ্টা করে? তার কারণ হলো আমাদের মানুষের অবস্থাটা এরকম, যে ধাক্কা খেল তাকে বাঁচানোর থেকেও বেশি আগ্রহ হয়ে যায় ড্রাইভারকে টেনে নামিয়ে মারধর করা এবং মারতে মারতে এমনও ঘটনা ঘটে মেরেই ফেলে। আইন কারো হাতে তুলে নেয়া উচিত না। মারধর যদি বন্ধ হয় তাহলে অনেক অ্যাকসিডেন্ট কমে যায়; এটা হলো বাস্তবতা। রাস্তা পারাপারে ট্রাফিক আইন মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা রাস্তা পার হবেন, ইতোমধ্যে জেব্রা ক্রসিং করা, আন্ডার পাস করার যেখানে জায়গা আছে করে দেয়া, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, সব করে যাচ্ছি। তারপরও বলব আমাদের দেশের মানুষের একটু সচেতন হওয়া উচিত। এই যে হঠাৎ দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হতে যাওয়া, ছোট শিশুকে নিয়ে পার হতে যাওয়া বা দুটি বাস দঁাড়িয়ে আছে, যে কোনো সময় বাস ছাড়তে পারে, দেখা গেল ফাঁক দিয়ে বেরুতে গিয়ে, বাস ড্রাইভারের পক্ষে তো দেখা সম্ভব না। যখন গাড়ি চলে গেল সাথে সাথে অ্যাকসিডেন্ট হয়ে গেল। অথবা গাড়িতে বসার সময় জানালায় হাত ঝুলিয়ে রাখা, বা মাথা বের করে রাখা। আরেকটা গাড়ি ধাক্কা মারতেই পারে। যেকোনো সমস্যা হতে পারে, তখন ড্রাইভারকে দোষ দেবেন কি করে? গণপরিবহন ব্যবহারেও সচেতন হওয়ার আহŸান জানান শেখ হাসিনা। গাড়িতে থেকে নামতেও তাদের একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন আছে। তাদেরও ট্রাফিক রুলটা মেনে চলা উচিত। ড্রাইভারের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যাবে সেটা বলেন? এভাবে যদি যেখানে সেখানে রাস্তা পার হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই এটা থামবে। নাহলে থামবে না। প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত প্রশ্নের জবাবে মৃত্যুদÐের বিধান রেখে নিরাপদ সড়ক আইন প্রণয়ন কাযর্ক্রম গ্রহণ, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ৫টি বাস প্রদান, কলেজের সামনে জেব্রা ক্রসিং নিমার্ণ ও আন্ডারপাস নিমার্ণ কাজের উদ্বোধন, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ ও সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ২টি আন্ডারপাস নিমাের্ণর নিদের্শনা, কারওয়ান বাজার ও গুলিস্তান আন্ডারপাসে লাইটিং ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কে স্পিড ব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিং নিমার্ণ, ছাত্রছাত্রীদের রাস্তা পারাপারে স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশ মোতায়েনসহ নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে চার বছর মেয়াদি ন্যাশনাল রোড সেফটি অ্যাকশন প্লান (২০১৭-২০২০) প্রণয়ন, একটানা পঁাচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালানোর নিদের্শনা, দূরপাল্লার বাসে দুইজন চালক রাখা, হাইওয়ের পাশে বিশ্রামাগার স্থাপনসহ আরও কিছু উদ্যোগের কথাও বলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে