শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
নাসার প্রতিবেদন

৫১ বছরে পদ্মায় বিলীন ২৫৬ বগর্মাইল ভ‚মি

যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
হরিরামপুর অঞ্চলÑ পদ্মার ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। ছবি নাসা আথর্ অবজারভেটরি

পদ্মা ভাঙছে ক‚ল, ভাঙছে মানুষের বুক। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার অনেক বসতি ও বাজার এখন পদ্মায় বিলীন। সবর্স্বান্ত মানুষের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশ। পদ্মার এই আগ্রাসী থাবা কখন কাকে পথে বসিয়ে দেয় তার কোনো আভাস না মিললেও হিসাব বলছে, বিগত প্রায় ৫১ বছরে অন্তত ৬৬ হাজার হেক্টর জমি (২৫৬ বগর্মাইল) গিলে খেয়েছে উত্তাল এই নদী। যা প্রায় মেহেরপুর জেলার সমান (মেহেরপুরের আয়তন প্রায় ৭১৬ বগর্ কিমি)। আন্তজাির্তক কোনো শহর ধরতে গেলে শিকাগোর আয়তনের চেয়ে বেশি (যুক্তরাষ্ট্রের শহরটির আয়তন ৬০৬ বগর্ কিমি)

২০১৮ সালের আগস্টে মাকির্ন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) আথর্ অবজারভেটরি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ইউএনবি এই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানায়, পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনের দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটি প্রাকৃতিক, মুক্ত প্রবাহিত নদী সুরক্ষার তেমন ব্যবস্থা নেই। দ্বিতীয়ত, নদীর তীরে বড় বালুচর রয়েছে, যা দ্রæতই ভেঙে যেতে পারে।

বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইটের ছবিতে পদ্মা নদীর প্রস্থ, গভীরতা, গঠন এবং সামগ্রিক আকারের পাথর্ক্য উল্লেখ করে ভাঙন পরিমাপ করে। নাসার ‘ভাঙনের আকৃতি’ শীষর্ক প্রতিবেদনে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া সাম্প্রতিক ছবিগুলোর সঙ্গে ১৯৮৮ সাল থেকে পদ্মার আকৃতি এবং প্রস্থের পরিবতর্নগুলো তুলনা করেছে।

বহু বছর ধরে, গবেষকরা নদীর বৃদ্ধি পযের্বক্ষণ করেছে। প্রত্যেক ‘টুয়িস্ট অ্যান্ড জিগজ্যাক’ স্যাটেলাইট ছবি নদীর একটি ভিন্ন কাহিনী তুলে ধরছে। নাসার ল্যান্ডস্যাট স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত ছবিগুলো শুষ্ক মৌসুমে জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে তোলা হয়েছে।

নদীর নিচে পলি মাটি বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে। এক তথ্যমতে, কিছু পলিমাটি ১৯৫০ সালে সৃষ্ট ভূমিকম্পের ফলে ভূমিধসের অবশিষ্টাংশ। গবেষকরা মনে করেন, এসব বালির মতো ক্ষুদ্র উপাদান নদীর মধ্য দিয়ে অধর্ শতাব্দী ধরে সৃষ্টি হয়েছে।

নাসার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন দশক ধরে পদ্মা নদী তুলনামূলকভাবে সংকীণর্, সোজাসুজি অবস্থান পরিবতর্ন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে অঁাকাবঁাকা হয়ে গেছে। স্যাটেলাইট ছবিতে, সবচেয়ে লক্ষণীয় পরিবতর্ন হয়েছে হরিরামপুর উপজেলার অঞ্চলের নিকটবতীর্ এলাকাগুলোতে, যেখানে সবচেয়ে বেশি ভাঙন হয়েছে। ১৯৯৮ সালে ভারতে ফারাক্কা বঁাধ উদ্বোধনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বন্যা দেখা দেয়, যা বাংলাদেশে আরও বেশি পানি ঢুকে পড়ে।

এর আগে, ‘চর জানাজাতের’ কাছে জায়গাজমি ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে নদীর রেখাচিত্র তীব্রভাবে বেঁকে যায়। বক্ররেখাটি ১৯৯২ সাল থেকে বিকশিত হতে শুরু করে, ২০০২ সালে পতন শুরু হয় এবং এরপর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

প্রতিবেদনটিতে পদ্মা সেতু নিমাের্ণর কথা এবং নদী ভাঙনের ফলে এটি কীভাবে প্রভাবিত হতে পারে সেদিকটিও উঠে এসেছে। পদ্মা সেতু নিমাের্ণ নদীর ভাঙন কিছু হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এমন উদ্বেগের কথা রয়েছে। যদিও গবেষকরা আশা করছেন, পদ্মা সেতু নিমাের্ণর ফলে জমি প্রকৃতপক্ষে স্থির হতে পারে এবং এটি শেষ হওয়ার পর নদী ভাঙন হ্রাস পেতে পারে।

প্রতিবেদনটির শেষে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোর, পদ্মার ভাঙনের হার প্রকৃতপক্ষে হ্রাস পেয়েছে। নদীটি বক্ররেখার পরিবতের্ জমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে এলাকাটি ভাঙন থেকে মুক্ত।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12565 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1