নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সোহাগ (৩৫), শিমুল আজাদ (২৬) ও নূর হোসেন বাবু (২৬) নামে তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে উপজেলার পূবার্চল উপ-শহরের আলমপুরা এলাকার নয় নম্বর সেক্টরের ১১নং ব্রিজের নিচ থেকে ওই তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত তিন যুবকের স্বজনদের অভিযোগ, ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই তিন যুবককে উঠিয়ে নিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেনÑ ঢাকা জেলার মহাখালীর নিকেতন বাজার এলাকার মৃত শহিবুল্লাহর ছেলে সোহাগ, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানার গোরেলা এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে শিমুল আজাদ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার টুঙ্গিবাড়ির থানার পাইকপাড়া এলাকার মৃত আ. ওহাবের ছেলে নূর হোসেন বাবু। এদের মধ্যে শিমুল ও বাবু সম্পকের্ ভায়রা ভাই। রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদশর্ক (এসআই) ফরিদ আহম্মেদ জানান, উপজেলার পূবার্চল উপ-শহরের আলমপুরা এলাকার ১১নং ব্রিজের নিচে তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ পরে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় নূর হোসেন বাবুর পকেট থেকে ৬৫ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট পায় পুলিশ। তিন মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে থানায় গিয়ে ওই তিন যুবকের লাশ শনাক্ত করেন। শিমুলের মা চায়না বেগম জানান, সোহাগ, শিমুল আজাদ ও নূর হোসেন বাবু তিন বন্ধু। শিমুল আজাদ ও নূর হোসেন বাবু ঝুটের ব্যবসা করে ও আর সোহাগ ডিস ক্যাবলের ব্যবসা করে। সোহাগ ও নূর হোসেন বাবু মিলে বন্ধু শিমুল আজাদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। গত বুধবার রাতে তারা তিন বন্ধু শিমুলের বাড়ি থেকে মাওয়া হয়ে ঢাকা ফিরছিল। গত বুধবার রাত ১টার দিকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তাদের শেষবারের মতো কথা হয়। এরপর থেকে তিনজনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের লোকজন বিভিন্ন দিকে খেঁাজাখঁুজি করে তাদের না পেয়ে ঢাকার সায়েদাবাদ টামির্নালের বাস কাউন্টারে যোগাযোগ করেন। যেখানে বাসের সুপার ভাইজার জানান মাওয়া থেকে ঢাকা আসার পথে সোহাগ, শিমুল আজাদ ও নূর হোসেন বাবুকে ডিবি পরিচয়ে বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার সকালে পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। নিহত শিমুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার আন্নি জানান, গত বুধবার বেড়াতে গিয়ে ফেরার পথে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী বাস থেকে তার স্বামীসহ অন্যদের সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। দুটি মাইক্রোবাস ও একটি গাড়িতে করে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে শিমুল নিখেঁাজ ছিলেন। তার মুঠোফোন বন্ধ ছিল। খবর পেয়ে থানায় এসে তিনি স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। তার স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন বলে জানান তিনি। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান, কাঞ্চন থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পযর্ন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৩শ’ ফুট রাস্তাটি। এ রাস্তার উভয় পাশে তেমন কোনো জনবসতি নেই। ভ্রমণপিপাসু লোকজন ৩শ’ ফুট সড়ক ও তার আশপাশে ঘুরতে যান কিন্তু এলাকাটি সন্ধ্যার পর থেকেই সুনসান হয়ে যায়। রাতের অঁাধারে অপরাধীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। অপরাধীরা নিরাপদ স্থান হিসেবে এ এলাকাটিকে ব্যবহার করে। প্রায় সময় ৩শ’ ফুট সড়কের আশপাশে অপরাধীরা হত্যা করে লাশ ফেলে যায়। পযার্প্ত পরিমাণ পুলিশি টহল ব্যবস্থা না করায় দিন দিন অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কমর্কতার্ (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির জানান, তিন যুবকের হত্যাকাÐের ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। যে কোনো মূল্যে হত্যাকাÐের রহস্য উদঘাটন করে খুনিদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনা হবে।