বহুল আকাক্সিক্ষত দ্বৈরথের এমন করুণ পরিণতি! কেউ কি ভাবতে পেরেছিলেন ভারত-পাকিস্তানের যে ম্যাচকে ঘিরে উন্মাদনা আরব আমিরাতের উষ্ণতাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম, সেই ম্যাচ এমন ম্যাড়ম্যাড়ে হবে? যে ম্যাচ শুরুর বেশ আগেই যুদ্ধের দামামা বাজায়, বাতাসে বারুদে গন্ধ ভাসে, সেই ম্যাচেই কিনা ময়দানে কিঞ্চিৎ লড়াইয়ের স্ফুলিঙ্গও উড়ল না! ভারত জিতল অনায়াসে, ৮ উইকেটে।
এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের এমন করুণ পরিণতি নিশ্চিতই ক্রিকেট রোমান্টিকদের হৃদয়ে করেছে রক্তক্ষরণ। এর দায় পুরোটাই পাকিস্তানের, আরও নিদির্ষ্ট করে বললে দলটির ব্যাটিংয়ের। হাতের তালুর মতো চেনা দুবাই আন্তজাির্তক স্টেডিয়ামে বুধবার ন্যূনতম লড়াইও গড়তে পারেনি তারা। সরফরাজ-আমির-মালিকরা চিরায়ত দ্বৈরথে লেপন করেছেন কলঙ্কের কালিমা। ভারতের যে বোলিং আগের দিন হংকংয়ের মতো দলের বিপক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল, সেই বোলিংই এদিন খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে।
শুষ্ক-রুক্ষ উইকেটে ভুবনেশ্বর কুমার-জাসপ্রিত বুমরাহদের গতি, সুইং আর বাউন্স ধেয়ে গেল সঁাপের ফণা তুলে। স্পিনে মায়ার জাল ফেলে শিকার ধরলেন কেদার যাদব-কুলদীপ যাদবরা। তাতে ৪৩.১ ওভারে পাকিস্তান অলআউট ১৬২ রানে। ‘বহুল আকাক্সিক্ষত দ্বৈরথের করুণ পরিণতি’ গল্পের পান্ডুলিপি লেখার শুরু ওখানেই। ২১ ওভার অব্যবহৃত রেখে হেসেখেলে ওই রান টপকে রোহিত শমার্র ভারত শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে গল্পের ইতি টেনেছে।
নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি নেই। তার ওপর আরব আমিরাতের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে হতশ্রী পরিসংখ্যান, ৮ জয়ের (এই ম্যাচের জয়সহ) বিপরীতে ১৯ পরাজয়, এই ভারতকে নিয়ে বাজি ধরার লোক তুলনামূলক কমই ছিল। ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতা পাকিস্তানই ছিল ফেভারিট। কিন্তু গত বছরের জুনে যে ভারতকে ১৮০ রানে হারিয়ে শিরোপার উৎসব করেছিল সরফরাজরা, এদিন ওই হারের শোধ কড়ায় গÐায় তুলেছে রোহিতের দল।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে সেঞ্চুরি হঁাকিয়ে যে ফখর জামান তারকা বনে গিয়েছিলেন, এদিন সেই ফখর রানের খাতা খোলার আগেই ভুবনেশ্বরের শিকার। ম্যাচে তিন উইকেট নেয়া ডানহাতি ভারতীয় পেসার এর আগের ওভারেই ফিরিয়ে দেন ইমাম উল হককে। বাবর আজম (৪৭) আর শোয়েব মালিকের (৪৩) তৃতীয় উইকেট জুটির ৮২ রানে ঘুরে দঁাড়ানোর আভাস ছিল, কিন্তু কুলদীপ আর কেদার যাদবের ঘূণিের্ত দুবাইয়ের উষ্ণতায় মিলিয়ে গেছে সব। ১২১ রানে ৭ উইকেট হারানো পাকিস্তান ১৫০ রানের গÐি পেরোতে পারবে কিনা, শঙ্কা জেগেছিল সেটা নিয়েও। ফাহিম আশরাফ (২১) আর মোহাম্মদ আমির (১৮*) সেই শঙ্কা দূর করে ১৬২ পযর্ন্ত নিয়ে যান পাকিস্তানকে।
তারকায় ঠাসা ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের সামনে ওই রান ছিল নস্যিতুল্য! যে বোলিং নিয়ে গবের্র শেষ নেই পাকিস্তানের, সেই বোলিংও এদিন সামান্য আলোর রেখা ফেলতে পারেনি পাকিস্তানের সম্ভাবনায়। স্বল্প পুঁজি নিয়ে লড়াইটা করতে পারেননি আমিরÑশাদাবরা। রোহিত-ধাওয়ানরা ব্যাট চালিয়েছে নিভার্র হয়ে। তাতেই ৮৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। ৩৯ বলে ৫২ রান করে রোহিত ফিরলে জুটি ভাঙে। এরপর আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ধাওয়ান ৪৬ রান করে থামলেও সমস্যা হয়নি ভারতের। আম্বাতি রাইডু (৩১*) আর দিনেশ কাতিের্কর (৩১*) অবিচ্ছিন্ন ৬০ রানের জুটিতে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলেছে তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৪৩.১ ওভারে ১৬২ (বাবর ৪৭, মালিক ৪৩, সরফরাজ ৬, আসিফ ৯, ফাহিম ২১, আমির ১৮*; ভুবনেশ্বর ৩/১৫, কেদার ৩/২৩, বুমরাহ ২/২৩, কুলদীপ ১/৩৭)
ভারত : ২৯ ওভারে ১৬৪/২ (রোহিত ৫২, ধাওয়ান ৪৬, রাইডু ৩১*, কাতির্ক ৩১*; শাদাব ১/৬, ফাহিম ১/৩১)
ফল : ভারত ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : ভুবনেশ্বর কুমার