মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বৈরী আবহাওয়ায় বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ঝুঁকিতে : বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

প্রাকৃতিক দুযোের্গর কারণে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বাষির্ক এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি জানায়, ঘূণির্ঝড়কে শস্য ক্ষতির সবচেয়ে বড় হুমকি বিবেচনা করেছে তারা। এছাড়া খরা ও বন্যার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মূলত উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূণির্ঝড় বেশি হয়। এতে করে সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা মিঠা পানিতে জমা হচ্ছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে খাদ্য উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।

‘স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন’ শীষর্ক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে যেখানে প্রাকৃতিক দুযোর্গ বেশি হয় সেখানে মানুষ পুষ্টিহীনতায় বেশি ভোগে। এছাড়া যেসব দেশের জনসংখ্যার বিশাল অংশ কৃষিক্ষেত্রের ওপর নিভর্রশীল সেসব দেশেও প্রাকৃতিক দুযোের্গর কারণে পুষ্টিহীনতা দেখা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খরার মতো দুযোর্গকেই আগে শুধু শস্য ধ্বংসের দুযোর্গ মনে করা হতো। কিন্তু অন্যান্য প্রাকৃতিক দুযোর্গ, বিশেষ করে ঘূণির্ঝড়ের বিষয়টিকে কখনোই গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

ঘূণির্ঝড় সিডর ও আইলার আঘাতে বাংলাদেশে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। এতে করে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল চাষাবাদের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবতের্নর কারণে বাংলাদেশে ধান উৎপাদন কম হলে প্রায়ই চালের দাম বেড়ে যায়।

এফএওর প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘূণির্ঝড়ের কারণে লবণাক্ত পানি উপকূল পেরিয়ে আসে। হঠাৎ বন্যার কারণে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়, বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাছ। সবকিছু একইসাথে হতে পারে। তারা জানায়, বিরূপ জলবায়ু পরিবতের্নর কারণে কৃষিব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত এবং সবাই অন্য কোথাও জীবিকার খেঁাজ করতে পারে। দেখা দিতে পারে অনাহার ও মৃত্যুরও।

২০১৪ সালে প্রাকৃতিক দুযোের্গর কারণে বিশ্বে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ১ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। সংস্থাটি জানায়, বেশিরভাগই ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় মূলত হঠাৎ ঝড়ে। কখনও কখনও স্থায়ীভাবে অঞ্চল ছাড়তে হয় তাদের। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের ২২ শতাংশ মানুষ জলোচ্ছ¡াসের শিকার হয়। আর ১৬ শতাংশ মানুষ নদীভাঙনের শিকার। এই মানুষগুলোই জীবিকা ও নিরাপত্তার কারণে শহরমুখী হচ্ছে।

বিশ্বের জলবায়ু পরিবতের্নর কারণে ইতোমধ্যে শস্য উৎপাদনের হার কমে গেছে। বিশেষ করে গম ও চাল। জলবায়ু পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এটি আর ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত কয়েকবছরে শস্য উৎপাদন হয়ে এমন অঞ্চলে উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং শস্য উৎপাদনের হার হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া বৃষ্টিপাতেও অনেক পরিবতর্ন এসেছে। আগে যেসব স্থানে বৃষ্টিপাত হতো এখন তেমনটা নেই।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিস (বিসিএএস) এই গবেষণা নিয়ে জানায়, মাটিতে লবনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণই হচ্ছে জলবায়ু পরিবতর্ন। বিশেষ করে ঘূণির্ঝড় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে চাল উৎপাদন কমে গেছে। সংস্থাটি জানায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এখানকার মাটিতে লবন ও দারিদ্রতা বেশি হওয়ার তাদের ঝুঁকি বেশি। গত ২০ বছরে সাতক্ষীরার মাটিতে লবন অনেক বেড়েছে।

বিসিএএসের রিপোটের্ বলা হয়, লবন বেশি থাকলেও উৎপাদন করা যায় এমন ধানের জাত আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু ২০০৯ সালে আইলার আঘাতের পর লবন অনেক বেড়ে যায়। ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় অঞ্চল। ওই বছর কৃষকরা তাদের পুরো আমন ধানের চাষযোগ্য জমি হারায়।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কমর্সূচি একটি পৃথক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে প্রতি বগির্কলোমিটারে ৯৪০ জন মানুষ বসবাস করে। আর মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষ যেখানে বসবাস করে তারা সবাই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ মিটার উঁচুতে রয়েছেন। ফলে এই মানুষেরা বন্যা, ঘূণির্ঝড়, লবণ পানি ও নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, দেশের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুযোের্গর শিকার হয়। সূত্র: বাসস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<14205 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1