বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি-বিকল্পধারা রেষারেষিতে ঐক্যের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

বিকল্পধারার অন্যায় আবদারের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিএনপির প্রায় সব পযাের্য় দাবি উঠেছে, তারা আসলে কী চায় তা খতিয়ে দেখতে এবং প্রয়োজনে তাদের বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে
হাসান মোল্লা
  ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

জাতীয় ঐক্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একের পর এক শতাের্রাপের কারণে বিকল্পধারার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে বিএনপিতে। দলের সিনিয়র নেতারা এই দলটির বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা না বললেও প্রয়োজনে বিকল্পধারাকে বাদ দিয়েই ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার দাবি উঠেছে বিএনপির অভ্যন্তরে। পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের শরিক ২/১টি দলও নাখোশ বিকল্পধারার কমর্কাÐে। সব মিলে দ্রæত সময়ের মধ্যে অবাস্তবায়নযোগ্য শতাের্রাপ থেকে বিকল্পধারা পিছু না হটলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে এই দলটিকে বাদ দেয়ার দাবি জানাতে পারে বিএনপি।

গত ২২ সেপ্টেম্বর নাগরিক সমাবেশের ব্যানারে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সম্মেলন হয়। এতে ৫ দফা দাবি জানানো হয় সরকারের উদ্দেশ্যে। আর এই দাবির সঙ্গে মিল রেখে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করে বিএনপি। সঙ্গত কারণে বৃহত্তর ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও এই প্রক্রিয়ায় বিএনপিকে শতের্র উপর শতর্ আরোপ করে বিষয়টি অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বিকল্পধারা। যুক্তফন্টের প্রধান দল বিকল্পধারা বাংলাদেশের তরফ থেকে বিএনপির কাছে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০টি দাবি করেন মাহী বি. চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি শতর্ দিয়েছেন, প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত এবং পরোক্ষ বিরোধীদের কাউকেই জাতীয় ঐক্যে নেবে না তার ফ্রন্ট। ঐক্যে আসতে হলে ২০ দলীয় জোটের প্রধান বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পকর্ ছিন্ন করতে হবে। বিএনপিসহ ২০ দলের প্রতি কঠিন সব দাবি-দাওয়া ও শতর্ দেয়ায় রাজনীতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে, মাহী বি. চৌধুরীর ইচ্ছাই গুরুত্ব পাচ্ছে বিকল্পধারায়। সঙ্গত কারণে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের শরিক কয়েকটি দলের বিকল্প ধারার ওপর ক্ষুব্ধ ।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, জাতীয় এক্য গঠনে বিএনপিই সবচেয়ে বেশি আন্তরিক। এর প্রমাণও নানাভাবে বিএনপি দিয়েছে। ভোটের মাঠে নিয়ামক শক্তি নয় এমন দলের নেতাকে ঐক্যের নেতা মানতে দ্বিধ্বা করেনি তারা। এরপরেও একের পর এক অবাস্তবায়নযোগ্য দাবি এবং শতর্ সামনে আসায় বিএনপির উচ্চপযাের্য় সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আর তৃণমূলে শুরু থেকেই নামসবর্স্ব দলগুলোকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দেয়ায় তারা ক্ষুব্ধ ছিল। এরপরেও অন্যায় আবদারের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় দলের প্রায় সব পযাের্য় দাবি উঠেছে, বিকল্প ধারায় আসলে কি চায় তা খতিয়ে দেখতে এবং প্রয়োজনে এই দলটিকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে।

দলের নেতাকমীের্দর ক্ষোভের বিষয়টি আর প্রকাশ্যে আসে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানে বিএনপির জনসভায়। এত দেনদরবার করে ঐক্য প্রক্রিয়ার একটি পযাের্য় নেয়ার পর দলের নীতি নিধার্রণী ফোরাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন পযাের্য়র নেতারা প্রয়োজনে একা পথ চলার ঘোষণা দেন। জনসভায় দেয়া বক্তৃতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মিজার্ আব্বাস বলেন, ঐক্য হলে ভালো, না হলে ক্ষতি নেই; বিএনপি একাই আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

সূত্রমতে, নিবার্চনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সবাই যার যার স্বাথর্ রক্ষার জন্য কাজ করবে এ বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়াকে টিকিয়ে রাখার জন্য ছোট অংশীজনদের সবোর্চ্চ ছাড় দেয়ার চিন্তাভাবনা বিএনপির এখনও আছে। এখনও দূরত্ব রেখে চলা আরও কয়েকটি দল বৃহত্তর এই জোটে যোগ দেবে বলে বিএনপির নেতারা মনে করেন। তবে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ নিয়ে বিএনপি সন্দেহমুক্ত নয়। বিএনপির শীষর্ নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, বি চৌধুরীর ব্যক্তিগত ও দলীয় চাওয়া-পাওয়াকে কেন্দ্র করে শেষ পযর্ন্ত বৃহত্তর এই রাজনৈতিক জোটে ধাক্কা লাগতে পারে। কারণ, বি চৌধুরীর দল বিকল্পধারা সরকারবিরোধী জোটের পাশাপাশি সরকারি জোটের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন।

সূত্রমতে, বিকল্পধারা শতর্গুলোর বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে বিএনপিতে। ভোটের মাঠে জামায়াতের সাড়ে সাতভাগ ভোট থাকার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। অথচ জামায়াতকে যারা মঞ্চে তুলতে চায় না তাদের ভোট এক শতাংশেরও কম। দলের নীতি নিধার্রকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, শেষ পযর্ন্ত বি চৌধুরী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে নাও থাকতে পারেন। তাই ড. কামাল হোসেনকে প্রধান ধরেই এগোচ্ছে এই ঐক্য প্রক্রিয়া।

এদিকে বিকল্পধারার শতাের্রাপের রাজনীতিতে বিএনপির পাশাপাশি ক্ষুব্ধ ২০ দলীয় জোটের শরিক কয়েকটি রাজনৈতিক দলও। বিশেষ করে জামায়াত ও এলডিপি। জামায়াত কৌশলগত কারণে প্রাকাশ্যে কোনো কথা না বললেও বিকল্পধারার অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি কনের্ল (অব.) অলি আহমদ। তিনি বলেছেন, বি চৌধুরী জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করেছেন, রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। তখন ভালো ছিল, এখন খারাপ হলো কেন? মাহী বি চৌধুরীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করছেন আবার সরকারবিরোধী মঞ্চেও আছেন- এ কেমন অবস্থান? বি চৌধুরী তার ছেলে (মাহী) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই তার নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলন হবে এমনটা আশা করা যায় না।

অন্যদিকে যুক্তফ্রন্ট সূত্রমতে, বিএনপি ও ২০ দলের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিকল্পধারার বতর্মান অবস্থানে ক্ষোভ আছে যুক্তফ্রন্টেও। নাম প্রকাশ না করার শতের্ যুক্তফ্রন্টের শরিক দলের এক নেতা বলেন, তারা বিকল্পধারার চালচলন পযের্বক্ষণ করছেন। তারা যেসব দাবি ও শতর্ দিয়েছে তাতে কোনোদিনই ঐক্য হবে না। আর ঐক্য না হলে সরকারের পতনও ঘটবে না। শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিকল্পধারা শেষ পযর্ন্ত যুক্তফ্রন্ট থেকে ছিটকে পড়তে পারে। ভাঙতে পারে ফ্রন্টও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<15874 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1