বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও বাড়ছে না বেসরকারি

 বতর্মানে দেশে ইতিহাসের সবোর্চ্চ বিনিয়োগ, যা জিডিপির ৩১ শতাংশ  মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে বাড়ছে রাষ্ট্রখাতের বিনিয়োগ  ব্যক্তিখাতের বাধা হচ্ছে- জমি না পাওয়া, শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ থাকা, অনুন্নত অবকাঠামো আর ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার
আহমেদ তোফায়েল
  ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ০০:২৩

দেশের ইতিহাসে গত অথর্বছরে সবোর্চ্চ বিনিয়োগ হয়েছে। যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৩১ শতাংশ। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এগিয়ে চলা হচ্ছে এর কারণ। তবে দেশে সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও সে হারে বাড়ছে না বেসরকারি বা ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ।

তবে নিজস্ব অথার্য়নে শুরু করা দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কারণে গেল অথর্বছর রেকডর্ ৭ দশমিক ৮৬ ভাগ প্রবৃদ্ধি অজর্ন করেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী (২০১৭-১৮) অথর্বছরে দেশে জিডিপির ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে। যা এর আগের অথর্বছরে ছিল ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় এক দশক ধরে বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। আশার কথা বতর্মানে প্রবৃদ্ধির উচ্চগতির কারণে ৩১ শতাংশ বিনিয়োগ সম্ভব হয়েছে। যদিও অথর্নীতিবিদরা বলছেন, এই হার ৩৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত ২০১৭-১৮ অথর্বছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির রেকডর্ হয়েছে। ওই অথর্বছর প্রবৃদ্ধি অজির্ত হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বিবিএস বলছে, সরকারি বিনিয়োগ বেড়ে গেছে, এজন্য প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। তবে সে হারে বেসরকারি বিনিয়োগ কম, তাতে খুব সমস্যা হচ্ছে না।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যানুসারে (২০১৬-১৭) অথর্বছরে মোট বিনিয়োগ ছিল ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারি বিনিয়োগ ছিল ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। তিনটি খাতের প্রবৃদ্ধির হিসাব যোগ করে গড় হিসাবে মোট প্রবৃদ্ধি হিসাব করা হয়। এগুলো হলো- কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত।

বিবিএসের হিসাব অনুসারে, গত অথর্বছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ, গত ২০১৬-১৭ অথর্বছরে কৃষিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, যা তার আগের ২০১৬-১৭ অথর্বছরে ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। কৃষি ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেবা খাতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি কমেছে। গত অথর্বছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা ২০১৬-১৭ অথর্বছরে ছিল ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

বিবিএস’র তথ্যে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অথর্বছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২৩ দশমকি ২৬ শতাংশ, যা এর আগের বছর ছিল ২৩ দশমিক ১০ শতাংশ। বিগত দশকজুড়ে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২১ থেকে ২৩ শতাংশে আটকে আছে।

অথর্নীতিবিদরা বলেন, সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগে গতি আসেনি। কিন্তু গত পাঁচ বছর সরকারি বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়ানোর পরও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃত্তের মধ্যেই আটকে আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের নভেম্বরে ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের মে মাসে এসে সেটা দঁাড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৬৫০ কোটি টাকায়। গত দেড় বছরে ব্যাংক খাতের ৩ দশমিক ৫ গুণ অলস টাকা কমেছে। এছাড়াও গত এক বছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে।

ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ না বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ দীঘির্দন বন্ধ থাকায় এবং এখনো ঠিকমতো সংযোগ না পাওয়ায় অনেকে বিনিয়োগ প্রকল্প হাতে নিয়েও শেষ পযর্ন্ত পিছিয়ে গেছেন। এর সঙ্গে আছে অনুন্নত অবকাঠামো। আর বেশি ভোগাচ্ছে ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অথর্নীতিবিদ জাহিদ হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, সামগ্রিক বিনিয়োগ সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই বছরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির দশমিক ৩ শতাংশ এবং সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ১ দশমকি ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুটি প্রশ্ন সামনে আসে। একটি হলো, সরকারি বিনিয়োগের তুলনায় বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না কেন? দ্বিতীয়টি হলো, বাংলাদেশের মতো ভৌগোলিক কৌশলগত সুবিধা প্রাপ্ত দেশে যার বিপুল সংখ্যক প্রতিশ্রæতিশীল উদ্যোক্তা রয়েছে সেখানে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না কেন?

এই অথর্নীতিবিদ বলেন, প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলো- সাম্প্রতিক সময়ে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যার কারণে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে। এসব প্রকল্পের অনেকগুলো শেষের দিকে রয়েছে। এসব প্রকল্প শেষ না হওয়া পযর্ন্ত বেসরকারি খাত সুবিধা পাবে না। এসব বড় বড় প্রকল্প একবার শেষ হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে কিছু পরিচিত বাধা রয়েছে যা হলো- জমি, জ্বালানির অপ্রতুলতা, বাণিজ্য সহায়ক নীতির অভাব, দীঘর্ মেয়াদি ঋণের সংকট, দক্ষতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার জটিলতা। এইসব সমস্যা ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, জমি ও জ্বালানি সংকট এবং বাণিজ্যসহায়ক নীতির অভাব পূরণ করা গেলে অন্য যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোর সঙ্গে উদ্যোক্তারা মোকাবেলা করতে পারবেন। যদি বিশেষায়িত অথৈর্নতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের টামির্নাল নিমার্ণ, বন্দরের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো যায় তাহলে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২১-২৩ শতাংশের ফঁাদ থেকে বের হতে পারে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বিনিয়োগ বাড়ার কারণ হলো- সরকারের সবোর্চ্চ অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এগিয়ে চলা। এ প্রকল্পগুলোর বস্তবায়ন যাতে নিবির্ঘœ হয় সেজন্য যুক্ত করা হয়েছে ফাস্টর্ ট্রাকে। ফাস্টর্ ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পযন্ত সিংগেল লাইন ডুয়াল গেজ ট্র্যাক নিমার্ণ, এলএনজি টানির্মাল নিমার্ণ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প।

কিন্তু সরকারি বিনিয়োগ কেন ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বাড়াতে পারছে না, জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারি বিনিয়োগ মূল্যের দিক থেকে বাড়লেও গুণগত মানের দিক থেকে কমছে। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বেশি লাগছে, ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো থেকে বেসরকারি খাতের যতটা সুবিধা পাওয়ার কথা ততটা পাচ্ছে না। আবার অনেক বড় প্রকল্প কয়েক বছর ধরে চলছে। সে কারণে অনেক প্রকল্পে সরকারি বিনিয়োগ হয়, কিন্তু সেখান থেকে সুফল আসে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<16055 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1