বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শুটআউটে স্পেন আউট

লুঝনিকিতে রুশ বিপ্লব
রাজু আহাম্মেদ
  ০২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
টাইব্রেকারে এভাবেই স্পেনের দুটো শট রুখে দিয়েছেন ইগর অ্যানিকফেভ। ম্যাচজুড়ে এই গোলরক্ষকের দুদার্ন্ত নৈপুণ্যেই স্পেনকে বিদায় করে কোয়াটার্র ফাইনালে উঠেছে স্বাগতিক রাশিয়া Ñওয়েবসাইট

অলৌকিক কিছু করে দেখাতে চেয়েছিল রাশিয়া, রোববার সেই অলৌকিক ঘটনারই সাক্ষী হলো মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়াম। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, যারা এবারও ছিল শিরোপার অন্যতম দাবিদার, টাইব্রেকারে জিতে প্রবল পরাক্রমশালী সেই স্পেনকেই বিদায় করে দিল স্বাগতিকরা। অলৌকিকই বটে।

পরিসংখ্যানে দৃষ্টি দিলে রুশদের এই বিজয় অলৌকিক নয়, বরং এটা স্পেনের নিয়তি! বিশ্বকাপ কিংবা মহাদেশীয় ফুটবলের কোনো আসরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ম্যাচ মানেই স্পেনের দুগির্ত অবধারিত। অতীতে আটবার স্বাগতিকদের মুখোমুখি হয়ে কখনই জিততে পারেনি লা রোজারা। ২০০৬ বিশ্বকাপে তো দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরেই গিয়েছিল তারা। এবারও সেই হারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকল।

আত্মঘাতী গোলে শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল স্পেন। তবে প্রথমাধের্ই পেনাল্টি থেকে সেই গোল শোধ করে দেয় রাশিয়া। এরপর দ্বিতীয়াধের্ আর কোনো গোলের দেখা পায়নি দুই দল। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। সেই ৩০ মিনিট শেষেও স্কোর লাইন ১-১। এরপর টাইব্রেকার। সেখানে ৪-৩ গোলে জিতেছে রাশিয়া। দুটো শট ঠেকিয়ে রাশিয়াকে কোয়াটার্র ফাইনালে তুলে দিয়েছেন রুশ গোলরক্ষক ইগর অ্যানিকফেভ।

স্বাগতিক রাশিয়া এই বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় খেলবে, বেশির ভাগের কাছে এটাই ছিল অপ্রত্যাশিত। কিন্তু গ্রæপ পবের্ গলোভিন-চেরিশেভদের দুরন্ত পারফরম্যান্স, প্রত্যাশার সীমা বাড়িয়ে দিয়েছিল রুশদের। রোববার তাই জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছিল লুঝনিকি স্টেডিয়াম, উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে গ্যালারিতে হাজির হয়েছিলেন স্বাগতিক সমথর্করা। যখনই গলোভিন-চেরিশভরা বল পায়ে এগিয়ে গেছেন স্পেনের রক্ষণের দিকে, তখনই গজের্ উঠেছে গ্যালারি।

ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটে সেই গজের্ন ভাটা পড়ে। ইসকোর নেয়া ফ্রিকিক রুখতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দিয়েছেন সেগের্ই ইগনাসেভিচ। আসলে এই ডিফেন্ডার চেয়েছিলেন সাজির্ও রামোসকে ট্যাকল করে বল বিপদমুক্ত করতে। কিন্তু তালগোল পাকিয়ে ফেললেন, বল আশ্রয় নিল জালে (১-০)। স্পেন শিবিরে উচ্ছ¡াস, রুশ সমথের্ক ভরা গ্যালারিতে পিনপতন নীরবতা। এরপর স্প্যানিশদের বেশ কিছু জোরালো আক্রমণ রুশ সমথর্কদের হাড়ে কঁাপন ধরিয়ে গেছে।

বাম প্রান্ত দিয়ে ইসকো আর ডানপ্রান্ত দিয়ে মাকোর্ আসেনসিও রীতিমতো ত্রাস ছড়িয়েছেন রাশিয়ার রক্ষণে। পঁাচ ডিফেন্ডারে গড়া স্বাগতিকদের রক্ষণ দেয়াল দারুণভাবেই সামলে গেছে স্প্যানিশ আক্রমণগুলো। এদিকে, সুযোগ বুঝে আক্রমণ শানিয়েছেন গলোভিনরাও। ৩৮ মিনিটে স্প্যানিশ রক্ষণদেয়াল নাড়িয়ে দিয়েছিলেন এই মিডফিল্ডার। তার নেয়া দুদার্ন্ত শট বারপোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ যাত্রা রুশদের হতাশাটা অবশ্য দীঘর্ হয়নি, তিন মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা।

আক্রমণে উঠে গিয়ে স্পেনের বক্সে উঁচু করে বল বাড়িয়েছিলেন অ্যালেক্সান্ডার সেমেদভ। হেড নিয়েছিলেন আতের্ম জাইয়োভা। বল গিয়ে লাগে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার জেরাডর্ পিকের হাতে। তাতেই পেনাল্টি পেয়ে যায় রাশিয়া। স্পটকিক থেকে গোল করেন জাইয়োভা (১-১)। বঁাধভাঙা উচ্ছ¡াসে মাতে রুশ শিবির। লুঝনিকির গ্যালারি তখন উন্মাতাল, সেখানে রীতিমতো সমুদ্রের গজর্ন। দ্বিতীয়াধের্র শেষ মুহ‚তর্ পযর্ন্ত সেই গজের্ন ভাটা পড়েনি। রুশদের আক্রমণ হলেও উন্মাতাল গ্যালারি, স্পেনের ব্যথর্ আক্রমণেও।

৭৮ শতাংশ সময় বল নিজেদের দখলে রেখে নিধাির্রত ৯০ মিনিটে মুহুমুর্হু আক্রমণ শানিয়েছে স্পেন। কিন্তু রাশিয়ার রক্ষণে ফাটল ধরেনি। ৮৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন আদ্রেস ইনিয়েস্তা। তবে রুশ গোলরক্ষক ইগর অ্যাকিনফেভকে ফঁাকি দিতে পারেননি। এরপর ইসকোর শট আর রামোসের হেডে বল থাকেনি সঠিক নিশানায়। নিধাির্রত সময় শেষে তাই স্কোরলাইন ১-১। তাতে এবারের বিশ্বকাপ দেখল অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গড়ানো প্রথম ম্যাচ।

স্প্যানিশদের সামনে রীতিমতো চীনের প্রাচীর হয়ে উঠেছিলেন রুশ গোলরক্ষক অ্যাকিনফেভ। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমাধের্ বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন আসেনসিও, অ্যাকিনফেভ ছিলেন বলের লাইনে। ১০৯ এবং ১২০ মিনিটের মাথায় বদলি ফরোয়াডর্ রদ্রিগো মোরেনোর শটর্ দুটো ছিল দুদার্ন্ত, অসাধারণ দক্ষতায় বল রুখে দিয়েছেন রুশ গোলরক্ষক। এরপর টাইব্রেকারে গিয়েও জাদু দেখালেন অ্যাকিনফেভ। ঠেকিয়ে দিলেন কোকে আর লুকাস ভাসকেসের শট, তাতেই সবর্নাশ স্পেনের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে