শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রায় প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির কমর্সূচি

যাযাদি রিপোটর্
  ১১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:২০
মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় সরকারের ফরমায়েসি অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। রায়ের প্রতিবাদে মূল দলের দুইদিন এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ৫দিন, মোট সাত দিনের কমর্সূচি ঘোষণা করেছে দলটি। বুধবার রায় ঘোষণার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে সংবাদ সম্মেলনে রায়ের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রয়া জানান দলের মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর কমর্সূচি ঘোষণা করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকাল ৮টা থেকে কাযার্লয়ের সামনে পুলিশ একস্তরের বেষ্টনী দিয়ে সারিবদ্ধভাবে দঁাড়িয়ে থাকে। কাযার্লয়ের ডানদিকে সামান্য দূরে রাখা হয় জলকামানের গাড়ি, সাঁজোয়া যান, প্রিজনভ্যান। এছাড়া কিছুক্ষণ পর পর পুলিশের পেট্রোল কারও আসা-যাওয়া করেছে এই সড়কে। পোশাকধারী পুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা ছিল কাযার্লয়ের সামনে। বিএনপি কাযার্লয়ের প্রধান ফটক খোলা থাকলেও পুলিশের কড়া নজরদারির মধ্যে সিনিয়র কয়েকজন নেতা ছাড়া নেতাকমীের্দর কাউকে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। তবে রায় ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে বিএনপির মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে কাযার্লয়ে আসেন। এরপর স্থায়ী কমিটির সিনিয়র কয়েকজন নেতাও আসেন কাযার্লয়ে। রায় ঘোষণার পর দুপুরে বিএনপির মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতাথর্ করার নগ্ন প্রকাশ। তাই এই ফরমায়েসি রায় বিএনপি প্রত্যাখ্যান করছে। মিজার্ ফখরুল বলেন, জাতির দুভার্গ্য এই, সরকার তার প্রতিহিংসা চরিতাথর্ করার জন্যই আদালতকে ব্যবহার করে আরেকটি মন্দ দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। যেমনটি করেছে মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদÐ দিয়ে। সরকারের এহেন প্রতিহিংসামূলক আচরণ ও আদালতের মাধ্যমে তা কাযর্কর করার নোংরা কৌশল সজাগ হয়ে অনিবাির্চত এ সরকারকে হটিয়ে জনগণের নিবাির্চত সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান জানাচ্ছি। বিএনপি মহাসচিব জানান, বিএনপি এই রায়ের প্রতিবাদে রাজনৈতিক কমর্সূচি থাকবে এবং আইন লড়াই করবে। বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের আর কোনো সম্পৃক্ততা না থাকা সত্তে¡ও তাকে যাবজ্জীবন কারাদÐ দেয়ার মাধ্যমে পুনরায় প্রমাণিত হলো যে, এদেশে কোনো নাগরিকেরই আর সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেয়া ও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কথাই সঠিক প্রমাণিত হলো যে, যে দেশে প্রধান বিচারপতি সুবিচার পায় না, সেদেশে কোনো নাগরিকেরই সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা মামলার ঘটনার পর বিএনপি সরকারের নেয়া পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি সরকারই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করেছে। এসব তদন্তে এবং আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল ১/১১-এর সরকারের আমলের তদন্তে প্রতিবেদনের কোথাও তারেক রহমান কিংবা বিএনপি নেতাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। এমনকি ওই সময়ে ১৬১ ধারা অনুযায়ী তখন তদন্তকারী কমর্কতাের্দর কাছে দেয়া জবানবন্দিতে কারারুদ্ধ শেখ হাসিনাও তারেক রহমান কিংবা বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। ৬২ জনের সাক্ষ্যে কেউ তারেক রহমান কিংবা বিএনপির নামও উচ্চারণ করেননি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটিকে রাজনৈতিক মামলায় রূপান্তরিত করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার বিএনপিকে হেয়, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত করার লক্ষ্যে অবসরপ্রাপ্ত ও বিতকির্ত পুলিশ কমর্কতার্ আব্দুল কাহার আকন্দকে চাকরিতে পুনরায় নিয়োগ দিয়ে এই মামলার তদন্ত কমর্কতার্ নিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে এটিকে একটি রাজনৈতিক মামলায় রূপান্তরিত করে। এই নতুন তদন্ত কমর্কতার্ই মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানকে দীঘির্দন রিমান্ডে নিয়ে, সীমাহীন ও অকথ্য অত্যাচার করে তারেক রহমানকে জড়িয়ে বানানো এক জবানবন্দিতে মুফতি হান্নানের স্বাক্ষর নিয়ে তারেক রহমানকে আসামি হিসেবে অন্তভুর্ক্ত করে। পরবতীের্ত মুফতি হান্নান আদালতে লিখিতভাবে তার সেই কথিত জবানবন্দি এই মমের্ প্রত্যাহার করেন যে, তিনি তারেক রহমানকে চেনেন না, তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি এবং অত্যাচার করে তাকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, এই মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য- প্রমাণ, উপাত্ত-তথ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। তা সত্তে¡ও তাকে যাবজ্জীবন কারাদÐ দিয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য। পরে রুহুল কবির রিজভী বিএনপির দুইদিনের কমর্সূচি ঘোষণার পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনগুলোর পাঁচ দিনের কমর্সূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার ফরমায়েসি রায়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (আজ) ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে জেলা-থানায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হবে। আগামী ১৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে জেলা-মহানগরে কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। অঙ্গসংগঠনের ৫দিনের কমর্সূচির মধ্যে থাকবে, ১৩ অক্টোবর ছাত্র, ১৪ অক্টোবর য্বুদল, ১৫ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ১৭ অক্টোবর মহিলা দল এবং ১৮ অক্টোবর শ্রমিক দলের মানববন্ধন কমর্সূচি হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে