বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
রােডমার্চ কমর্সূচি বাতিল

সমঝোতা ছাড়াই সংলাপ শেষ

আমরা চেষ্টা করেছি, বল এখন সরকারের কোটে: ড. কামাল আমরা আন্দোলনে আছি, কাল রাজশাহীতে সমাবেশ: ফখরুল সংসদ ভেঙে দিয়ে ৯০ দিনের মধ্যেই নিবার্চন সম্ভব: মান্না
যাযাদি রিপোটর্
  ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৪৮
বুধবার গণভবনে সংলাপের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে পাশে ছিলেন. আমীর হোসেন আমু, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তফা মোহসীন মন্টু Ñফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপেও কোনো সমঝোতা হয়নি। সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট নিজেদের ৭দফা দাবিতে অনড় থেকেছে। এই দাবি অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওয়ান ইলেভেনের মতো তৃতীয় কোনো অপশক্তির অনভিপ্রেত-অস্বাভাবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় সংবিধানের বাইরে কোনো দাবি মানা সম্ভব নয়। বতর্মান সরকারের অধীনেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নিবার্চন সম্ভব। সংলাপে দাবি আদায় না হওয়ায় আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আন্দোলনে থাকারও ঘোষণা দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। অবশ্য এই ঘোষণার একঘণ্টা পর সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী অভিমুখে আজকের রোডর্মাচর্ কমর্সূচি বাতিল কা হয়। ফলে দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক জোট নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে দ্বিতীয় দফার সংলাপ। বুধবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে শুরু হয় সংলাপ। প্রায় ৩ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি চলে। সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের প্রতিনিধিদলে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়াকার্সর্ পাটির্র সভাপতি রাশেদ খান মেনন। আর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে ছিলেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু, গণফোরামের কাযর্করী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, নাগরিক ঐক্যের নেতা এসএম আকরাম, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। সংলাপে সাত দফার আলোকে সুনিদির্ষ্ট চারটি প্রস্তাব দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এগুলো হলো- সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবতীর্ ৯০ দিনের মধ্যে নিবার্চন, ১০ সদস্যের নিরপেক্ষ নিবার্চনকালীন সরকার গঠন, নিবার্চন কমিশন পুনগর্ঠন এবং কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি। সংলাপ শেষে গণভবন থেকে বের হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ঐক্যফ্রন্টকে নিবার্চনে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন। পাশাপাশি এও বলেছেন অবাধ, সুষ্ঠু নিবার্চন করে এবার দেখিয়ে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে সংলাপ শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীষর্ নেতা ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় গিয়ে ফ্রন্টের নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন। এক ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক শেষে তিনি সংলাপ ও পরবতীর্ করণীয় বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় দ্বিতীয় দফা সংলাপের ফলাফল জানতে চাইলে ড. কামাল সুষ্ঠু নিবার্চন নিয়ে সৃষ্ট সংকট সমাধানে ‘বল এখন সরকারের কোটের্’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তো সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি, করছি, করে যাব যে, দেশে একটা স্থিতিশীল অবস্থা, একটা শান্তিপূণর্ অবস্থার মধ্যে সব কিছু হোক। দায়িত্ব তো সরকারের। বল এখন সরকারের কোটের্।’ দুই দফা সংলাপে বসার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘সংলাপে আমরা আমাদের ৭ দফা দাবি নিয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করে বলেছি, যে অল্প পরিসরে আরও আলোচনা করার ব্যাপারে ইচ্ছুক।’ তিনি বলেন, ‘সংলাপে সারাদেশে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কমীর্র বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা ও গায়েবি মামলা করা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে আর কোনো গায়েবি ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের হবে না, ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের গ্রেপ্তার করা হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। সংলাপে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘৭ দফার প্রথম দফাটাই ছিল বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে দেয়া, নিবার্চনকালীন সরকার গঠন ও নিবার্চন কমিশন পুনগর্ঠন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে অবশ্যই আলোচনা হয়েছে। আমরা জোর দিয়ে বলেছি যে, আইনগতভাবে উনি মুক্তি পাওয়ার যোগ্য, জামিন পাওয়ার যোগ্য।’ বেগম জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই ধরনের কোনো প্রস্তাবই আমরা দেইনি। সেই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। একাদশ নিবার্চনের তফসিল ঘোষণা করা হলে ফ্রন্টের অবস্থান কি হবে জানতে চাইলে মিজার্ ফখরুল বলেন, তাহলে নিবার্চন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রার কমর্সূচি হবে। এছাড়া পূবের্ঘাষিত কমর্সূচি বৃহস্পতিবার রাজশাহী অভিমুখে রোড মাচর্ হবে ৭ দফার দাবিতে। শুক্রবার রাজশাহীতে জনসভা হবে। নিবার্চন কমিশন বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে- এ প্রসঙ্গে মিজার্ ফখরুল বলেন, তফসিলের সঙ্গে আলোচনার কোনো সম্পকর্ থাকবে না। প্রয়োজনে তফসিল আবার পরেও ঘোষণা করা যাবে। ওটাকে রিসিডিউল করা যেতে পারে। বতর্মান সংকট নিরসন আলোচনায় সম্ভব কিনা প্রশ্ন করা হলে ফ্রন্টের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা সবসময় সংলাপকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। পাটর্ অব আওয়ার মুভমেন্ট। আমরা এখনো বিশ্বাস করি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। সরকার যদি সেই পথে না আসে, সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে একটা জায়গায় পৌঁছাতে না চায় এর দায়-দায়িত্ব তাদের ওপরই বতাের্ব।’ নিবার্চনকালীন সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংলাপ শেষে দেয়া বক্তব্যে দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দেবার ৯০ দিনই পরেই তো নিবার্চন হবে। সংসদ ভেঙে দেয়াটা সংবিধানের অন্তগর্ত এবং এমনই এটি সংবিধানে আছে। একই সাথে দুটি সংসদ থাকবে- এটা তো কোনো নিয়মই হতে পারে না। উনারা যদি বলেন এটা নেই তাহলে উনারা ভুল বলেছেন। এটি সংবিধানের মধ্যে আছে, সাংবিধানিকভাবেই আমরা প্রস্তাব করেছি। সেক্ষেত্রে সংসদ ভেঙে দেবার পরের ৯০ দিনের মধ্যে নিবার্চনের প্রস্তাব করেছি। এর মানে নিবার্চন আমরা পেছাতে চাইছি এমনটা নয়। মিজার্ ফখরুল বলেন, আমরা এ বিষয়ে প্রস্তাব করেছি। তারা (সরকার) বলেছেন যে, আলোচনা হতে পারে। নিবার্চনকালীন সরকারের বিষয়ে এখনো সরকার তার অবস্থানে অনঢ় তাহলে আপনারা কী আশা করছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখানে আশার কোনো প্রশ্ন নেই। আমরা একটি নিবার্চনকালীন সরকার চাচ্ছি জনগণের দাবি হিসেবে। এটাতে সরকার যদি না মানে তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা তা আদায় করব।’ এই দুই দফা সংলাপে আপনারা কী পেলেন মূল্যায়ন জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, পাওয়ার ব্যাপারটা রিলেটিভ ব্যাপার। আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের কাছে গেছি। তারা বলেছে যে, ভবিষ্যতে তারা আলোচনা করে দেখতে পারে, সুযোগ আছে আমরা আমাদের দাবি নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে এই দাবি আদায় করব। নিবার্চন পেছানো দাবি একটা টালবাহানা ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, এটা বলার অথর্ই হলো জনগণের সাথে তাদের কোনো সম্পকর্ নেই। জনগণের দাবির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নেই বলে এমন কথা তারা বলছেন। নিবার্চন পেছানো কথা আমরা বলছি, এজন্য যে, নিবার্চনকে শুধুমাত্র একটা অথর্বহ করার জন্য। প্রসঙ্গত, গত ১ নভেম্বর গণভবনে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রথম দফা সংলাপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সংলাপে কোনো ফল না আসায় গত ৪ নভেম্বর আবার সংলাপ চেয়ে কামালের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হলে বুধবার বেলা ১১টায় ‘ছোট পরিসরে’ সংলাপের সময় দেয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে