বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের মাঠে কবে নামবে বিএনপি

মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে অধিকাংশ প্রাথীর্ই ঘরছাড়া নিবার্চনী প্রচারণার ছক তৈরি করতে পারেনি অনেকে কমীর্-সমথর্করাও রয়েছেন পুলিশের ধাওয়ার ওপর সরকারকে চাপে রাখতে না পারায় হতাশা
সাখাওয়াত হোসেন
  ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:১৯

আগামী ২৩ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন সে হিসেবে দেড় মাসের কম সময় হাতে রয়েছে। এরইমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রাথীর্রা নিবার্চনী প্রচার-প্রচারণার আধা মাঠ চষে ফেলেছেন। কেউ কেউ আবার প্রচারণায় আরও অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছেন। অথচ বিএনপির অধিকাংশ প্রাথীর্ মাঠে নামা দূরে থাক, এখনো নিবার্চনী প্রচারণা ছকও ঠিকমতো কষতে পারেননি। একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে তাদের অনেকেই এখনো ধাওয়ার উপর রয়েছেন। এ অবস্থায় কবে তারা কোন কৌশলে কিভাবে নিবার্চনী মাঠে নামবেন সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি এখন সেদিকে। যদিও বিএনপির নীতি-নিধার্রকদের দাবি, সরাসরি মাঠে নামতে না পারলেও দলের সম্ভাব্যপ্রাথীর্রা নানা কৌশলে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিছুদিনের মধ্যেই সব প্রতিবন্ধকতা ঠেলে সারাদেশে তারা একযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবার্চনী মাঠে নামবেন। এর আগে ঐক্যবদ্ধ শান্তিপূণর্ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সরকারকে চাপের মুখে রেখে নিবার্চনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে। হাতে সময় খুব কম থাকলেও সুষ্ঠু পরিবেশে নিবার্চনী সাবির্ক কাযর্ক্রম গুটিয়ে আনতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না বলেও দাবি করেন তারা। তবে বিএনপির নীতি-নিধার্রকদের এই সরল সমাধান মেনে নিতে পারছেন না সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতাকমীর্রাও। তাদের ভাষ্য, তফসিল ঘোষণার পর ভোটের যে সামান্য সময় বাকি আছে, তার মধ্যে জোট এবং ঐক্যফন্টের শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনসহ নিবার্চনী অন্যান্য কাযর্ক্রম সমাধা করা বাস্তবিক অথের্ই কঠিন হবে। অন্যদিকে দলের সক্রিয় নেতাদের শঙ্কা, নিবার্চনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসবে, তাদের উপর হয়রানি-নিযার্তনের খড়গ ততই জোরালোভাবে চেপে বসবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতদুষ্ট কমর্কতার্ এবং সরকারি দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের অপতৎপরতার মুখে এ সময় তারা আদৌও মাঠে নামতে পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেন অনেকেই। তৃণমূল কমীর্রা আপেক্ষের সুরে বলেন, আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রাথীর্রা ব্যানার-পোস্টার ও বিলবোডর্ টাঙিয়ে রাস্তাঘাট, অলি-গলি সব জায়গা ছেয়ে ফেলেছে। অথচ বিএনপির প্রায় কেউই এখনো সামান্য লিফলেটও বিলি করতে পারেননি। এ অবস্থায় এখনই তারা প্রচারণায় নামলেও দশর্নীয় কোথাও পোস্টার লাগানোর জায়গা পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তৃণমূল কমীের্দর ভাষ্য, বিএনপি দলীয় প্রাথীর্ কি যোগ্যতা নিয়ে নিবার্চনে অংশ নিচ্ছে; দলের নিবার্চনী ইশতেহার কি- এ বাতার্ ভোটের বেশ আগেই সাধারণ মানুষের কাছে পেঁৗছে দেয়া জরুরি। তা না হলে ভোটাররা তড়িঘড়ি করে এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যথর্ হবেন। এদিকে তৃণমূলের নেতাকমীের্দর সংশয় ও সন্দেহ যে অমূলক নয়, তা ঢাকাসহ সারাদেশের প্রচার-প্রচারণা চিত্র এবং সাধারণ ভোটারদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটসহ প্রতিটি বিভাগ, জেলা শহর, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের সবখানেই নৌকা প্রতীকের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোডের্ ছেয়ে গেছে। অথচ বিএনপির নেতাকমীর্রা এখনো কোনো প্রাথীর্র পক্ষে ধানের শীষের কোনো পোস্টার লাগাতে পারেননি। যা বিএনপির নেতাকমীের্দর পাশাপাশি দলীয় সমথর্কদেরও চরম হতাশ করেছে। রাজনৈতিক পযের্বক্ষকরা জানান, আওয়ামী লীগ যখন নিবার্চনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত, তখন মাঠের বিরোধী দল বিএনপি জাতীয় ঐক্য নিয়ে তৎপরতা দেখাচ্ছেন। প্রথম দফা সংলাপে বসে হতাশ হওয়ার পর দ্বিতীয় দফা সংলাপেও কোনো দাবি আদায় করতে পারেনি, অথচ এ ইস্যুতে সরকারি দল ও জোট আশ্বাসের মুলা ঝুলিয়ে ঐক্যফ্রন্টের পাশাপাশি বিএনপিকে আন্দোলন ও নিবার্চনী প্রচার-প্রচারণা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে বলে মনে করেন পযের্বক্ষকরা। তবে অনেকের মতে, কারারুদ্ধ দলীয় চেয়ারপারসনকে মুক্তির আন্দোলন জমাতে না পেরে বিএনপি এখন জাতীয় ঐক্যেই নিজেদের মুক্তি দেখছে। যদিও তারা বলছেন খালেদার মুক্তির আন্দোলন, নিবার্চনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি এবং নিবার্চনী প্রস্তুতি একসঙ্গে চলছে। অথচ বাস্তবে তারা কোনোটাতেই এখনো যুৎসইভাবে আগাতে পারেনি। গত ১ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির বিশাল সমাবেশের পর সবাই ভেবেছিল সেখান থেকে কঠোর কমর্সূচি আসবে। কিন্তু সেরকম কোনো কমর্সূচি না আশায় খোদ দলীয় নেতাকমীের্দর মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে। অনেকে অভিযোগ করছেন, বিএনপির শীষর্ নেতাদের মনোযোগ এখন যে কোনো উপায়ে নিবার্চনে অংশগ্রহণ। কারণ তারা সরকারের হাবভাব দেখে বুঝে গেছে, নিরপেক্ষ নিবার্চনকালীন সরকারের আশা সুদূরপরাহত। তাই যে কোনোভাবে নিবার্চনে গিয়ে সংসদে নিজেদের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে হবে। বিষয়টিকে আপাতত সুবিধাবাদী মনে হলেও বিএনপির কাছে এই মুহূতের্ এর চেয়ে অন্য কোনো পথ খোলা নেই। কারণ দুবার্র আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি আদায় করার মতো রাজনৈতিক শক্তি বা মনোবল আপাতত বিএনপির নেই। সে জন্য অপেক্ষাকৃত নরম কমর্সূচি এবং সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যেই দলটির তজর্ন-গজর্ন সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এদিকে নিবার্চনী প্রচার-প্রচারণায় বিরোধী দল বিএনপি বেশখানিকটা পিছিয়ে থাকলেও শেষ সময়ে জোরালো তৎপরতা চালিয়ে তা পুষিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা। তাদের ভাষ্য, নিবার্চন মানেই রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের সামনে হাজির হওয়া। ভোট পাওয়ার আশা করলে ‘কিছু নিয়ে’ তাদের সামনে দঁাড়াতে হয়। জনগণের মধ্যে যারা কোনো না কোনো দলের সমথর্ক, তারা সাধারণত সব অবস্থাতেই নিজের দলের প্রাথীের্ক ভোট দেন। এর বাইরে যারা আছেন, তারাই আসলে নিবার্চনের ফলাফল ঠিক করেন। কারণ, সময়ে-সময়ে তারা অবস্থান বদল করেন। এই মানুষগুলোর ভোট নিজেদের পক্ষে নেয়াই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পযের্বক্ষকরা মনে করেন, নিবার্চনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ উন্নয়নকে মূল ইস্যু হিসেবে তুলে ধরছে। কিন্তু কোন দল ক্ষমতায় থাকবে বা থাকবে না- এই হিসাব-নিকাশে ‘উন্নয়ন’ ইস্যুর চেয়ে ‘রাজনীতির’ বিবেচনাই বড় হয়ে দেখা দেয়। আওয়ামী লীগ দুই দফা ক্ষমতায় থেকেছে, এবার তৃতীয় দফা ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের কাছে ভোট চাইতে হবে। ৫ জানুয়ারির নিবার্চনে যেহেতু জনগণ প্রাথীর্ বাছাইয়ের সুযোগ পায়নি, তাই সামনের নিবার্চনটি সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হলে জনগণের কাছে তা একটি বড় ‘রাজনৈতিক ইস্যু’ হিসেবে হাজির হবে। আমেরিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসাচর্ সেন্টারের এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬৫ ভাগ মানুষ উচ্চমাত্রায় ও ২৯ ভাগ মধ্যমমাত্রায় রাজনীতি-সক্রিয়। এর মানে দঁাড়ায় দেশের ৯৪ ভাগ মানুষই কোনো না কোনো মাত্রায় রাজনীতি-সক্রিয়। শুধু ‘উন্নয়ন’ ইস্যু সামনের এই অতিমাত্রায় রাজনৈতিক নিবার্চনে ফল না-ও দিতে পারে। অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা মনে করেন, ক্ষমতায় থাকলে দলের লোকজন দুনীির্ত, সন্ত্রাস ও নানা অপকমর্সহ স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়ে। সরকারের কোনো অবস্থান বা আচরণও জনগণকে ক্ষুব্ধ করে। নিবার্চন তাদের সেই ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। তখন দলের একনিষ্ঠ সমথর্ক ছাড়া যে ২০ ভাগের মতো ভোটার আছেন, তাদের একটি বড় অংশ ক্ষমতায় থাকা দলের বিরুদ্ধে ভোট দেন। এ বিবেচনায় টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের পক্ষে জোরশোর প্রচার-প্রচারণা চললেও নিবার্চনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ তাদের পক্ষে কঠিন হবে। এছাড়াও বতর্মান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য আরও কিছু বিষয় বোঝা হয়ে দঁাড়াতে পারে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও শিক্ষাথীের্দর নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সরকার যে কায়দায় সামাল দিয়েছে, তা দেশের তরুণদের একটি বড় অংশকে ক্ষুব্ধ করেছে। অবস্থান বদল করতে পারে- এমন যে ২০ ভাগ ভোটারের কথা বলা হচ্ছে, তাদের মধ্যে এই তরুণ বা নতুন অনেক ভোটার রয়েছেন। এমন কিছু প্রতিক‚ল বাস্তবতায় আওয়ামী লীগকে আবার জনগণের কাছে ভোট চাইতে হবে। এ অবস্থায় বড় ধরনের কোনো চমক ছাড়া এই ভাসমান ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানা আওয়ামী লীগের জন্য অনেকটা অসম্ভব। তাই নিবার্চনী প্রচার-প্রচারণায় বিএনপি যথেষ্ট পিছিয়ে থাকলেও তা ভোটের মাঠে বড় কোনো ‘ফ্যাক্টর’ হবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক পযের্বক্ষকরা।

ভোটে যাচ্ছে বিএনপি

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শুক্রবার আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রিও শুরু করেছে। তফসিল ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার বিএনপি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর পর গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বসে। সেই বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এ বিষয়ে আজ দলীয়ভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা ইতিবাচক। এছাড়া নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। বিএনপি এখন যেহেতু জোটবদ্ধভাবে আন্দোলন করছে, সে কারণে হুট করে এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ঘোষণা দেবে না বিএনপি।

এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়ে দলটি নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। ওই নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়টিও সরকার মেনে নেয়নি। বর্তমানে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তিসহ আরও কিছু বিষয়ে আন্দোলন করছে দলটি।

দলের অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সরকারের কাছে দীর্ঘদিন থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। সরকার এই ইস্যুতে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। এখন খালেদা জিয়াকে ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে বলে মনে হয় না। এই মুহূর্তে বিএনপির সামনে নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য বিএনপি জোটগতভাবে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলন সফল করতে হলেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিকল্প নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়ার বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে না। এই নির্বাচন করে কোনো লাভ নেই, শুধু সরকারকে বৈধতা দেয়া হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে না গেলে বিএনপির যেসব প্রার্থী নির্বাচনে যেতে চান, তাঁরা মনঃক্ষুণœ হতে পারেন। সব মিলিয়ে অনেক বিষয় পর্যালোচনা হয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শনিবার একটি বৈঠক আছে, সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে