আজকের যায়যায়দিন

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। শুক্রবার সকাল থেকেই নেতাকমীর্ ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ধানমÐির দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কাযার্লয়। এ সময় ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে আসা নেতাকমীের্দর সমাগমে ধানমÐি ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল সকাল ১০টা থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা শুরু হয়। প্রথমে দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ২টি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর মধ্যে একটি ফরম কেনা হয়েছে শেখ হাসিনার নিজের আসন গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া)-এর জন্য। কিন্তু অন্যটি কোন আসনের জন্য কেনা হয়েছে তা পরে প্রকাশ করা হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। এরপর শেখ হাসিনার ফরমটি আওয়ামী লীগের ধমির্বষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লার কাছে হস্তান্তর করেন তিনি।

এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর জন্য রংপুর-৬ আসনের মনোনয়ন ফরম কিনে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার কাছে হস্তান্তর করেন ওবায়দুল কাদের। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের জন্য নোয়াখালী-৫ আসনের একটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।

ফরম বিতরণ কাযর্ক্রমের সূচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রচÐ আগ্রহ ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তাদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১১ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের মনোনয়ন বোডের্র সভা হবে। সেখানেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী / সংলাপে বিরোধ নিষ্পত্তি করুন, যুদ্ধকে 'না' বলুন

দলের শীষর্ নেতাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শেষ হলে সারাদেশ থেকে আসা মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ফরম সংগ্রহ করেন। ফরম সংগ্রহ করতে আসা নেতাকমীের্দর ভিড়ে ধানমÐিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কাযার্লয়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দলে দলে মিছিল নিয়ে হাজির হন নেতারা। তাদের বহরে ব্যানার-ফেস্টুনসহ নানা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে দেখা যায়। তবে মূল কাযার্লয়ের ভেতরে বেশি লোকজন নিয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি। নেতাকমীের্দর ভিড় সামলাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বেগ পেতে হয়েছে। প্রায় সারাদিনই মিছিলে মিছিলে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা।

ঢাকা বিভাগীয় বুথের প্রথম মনোনয়ন ফরম কেনেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম। তিনি ঢাকা-৪ আসনের জন্য ফরম কিনেছেন। ফরম বিক্রির দায়িত্বে থাকা দলের এক নেতা বলেন, দুপুর ১২টা পযর্ন্ত ৫ শতাধিক ফরম বিক্রি হয়েছে।

সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে জুমার নামাজের জন্য ১টা থেকে ৩টা পযর্ন্ত বিরতি দেয়া হয়। এরপর আবারও ফরম বিক্রি শুরু হয়। বিকাল ৩টার দিকে নেতাকমীের্দর নিয়ে ঢাকা-৫ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কেনেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে একই আসনের বতর্মান সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার জন্য মনোনয়ন ফরম কেনেন তার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল। একই সময় ঢাকা-১২ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী।

প্রথমদিন বিকাল ৫টা পযর্ন্ত ফরম বিক্রির সিদ্ধান্ত থাকলেও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চাপে রাত ৮টা পযর্ন্ত ফরম বিক্রি করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানন, প্রথমদিন আনুমানিক দেড় হাজার ফরম বিক্রি হয়েছে।

এবার মনোনয়ন ফরমের দাম ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ফরম বিক্রি থেকে গতবার আওয়ামী লীগের তহবিলে জমা পড়ে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা। এবার তা ১০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সবের্শষ দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে মোট দুই হাজার ৬০৮ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। এবার সেই সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা নেতাদের।

আটটি বুথ থেকে ৮ বিভাগের ফরম বিরতণ করা হচ্ছে। রেওয়াজ মেনে দলীয় সভাপতি শুরুতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। ৮ বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছেন।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলবল নিয়ে মনোনয়ন ফরম কিনতে গেলে ধানমÐি ও এর আশপাশের এলাকায় প্রচুর ভিড় লেগে যায়। এ সময় ধানমÐি, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। যা পরে সাইন্সল্যাব, সিটি কলেজ, নিউমাকের্ট, আসাদ গেট, শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ছুটির দিনও অনেককেই হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।