শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর

সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ নয়াপল্টন

পুলিশ বিএনপির নেতাকমীের্দর লক্ষ্য করে বুলেট, কঁাদানি গ্যাস ছোড়ে। বিএনপির নেতাকমীর্রাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের দুটিসহ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়
যাযাদি রিপোটর্
  ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:২৮
রাজধানীর নয়াপল্টনে বুধবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘষের্র সময় কয়েকটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ কমীর্রা ষ আরও ছবি পৃষ্ঠা-১৬

বিএনপির নেতাকমীের্দর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘষের্ রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বুধবার দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির তৃতীয় দিনে দুপুর একটার দিকে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ের সামনে বিএনপির নেতাকমীের্দর সঙ্গে পুলিশের এই সংঘষের্র ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ বিএনপির নেতাকমীের্দর লক্ষ্য করে বুলেট, কঁাদানো গ্যাস ছুড়ে। বিএনপির নেতাকমীর্রাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের দুটিসহ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ নেতাকমীর্রা। এছাড়া রাস্তায় পথচারীদের কয়েকটি গাড়ি এবং মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১২ জন বিএনপির নেতাকমীর্ আহত হয়েছেন। সংঘষের্র ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিশের ছোড়া প্যালেট বুলেটে আহত ১২ জনকে শনাক্ত করা গেছে। এরা হলেনÑ পিরোজপুরের নেছারাবাদের মো. শামসুল হক, রাজধানীর মুগদার মেহেদি হাসান মিরাজ, অরিন, পল্টনের মো. কাদির, হৃদয় শেখ, মতিঝিলের মকবুল হোসেন, সবুজবাগের মনির হোসেন, খিলগঁাওয়ের মোস্তাক, কলাবাগানের সুমন, বিমানবন্দর থানা এলাকার মহিউদ্দিন রতন, মাদারীপুরের সাখাওয়াত হোসেন এবং পিরোজপুরের আসাদুজ্জামান। তাদের গলা, মাথা ও পিঠে গুলির আঘাত লেগেছে। মিজানুর রহমান ও ফিরোজা বেগম নামে এক নারী বন্দুকের গুলির ছররার আঘাতে রক্তাক্ত হন। জ্বালিয়ে দেয়া পুলিশের পিকআপ ভ্যানটির নম্বর ২৩১১। এসি, মতিঝিল গাড়িটি ব্যবহার করতেন বলে জানা গেছে। সংঘষের্র ঘটনায় পুরো পল্টন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদশীর্রা জানায়, তৃতীয় দিনের মতো গতকাল সকাল থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাকমীর্রা মিছিল সহকারে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ের সামনে জড়ো হতে থাকনে। বেলা পৌনে একটার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মিজার্ আব্বাসের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ের সামনে আসে। এতে নেতাকমীের্দর ভিড়ে নয়াপল্টনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক পযাের্য় বেলা একটার দিকে নয়াপল্টন সড়ক থেকে পুলিশ বিএনপির নেতাকমীের্দর সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বাকবিতÐার এক পযাের্য় বিএনপির নেতাকমীের্দর ওপর পুলিশ লাঠিচাজর্ করলে ব্যাপক সংঘষের্র সূত্রপাত হয়। এরপর দফায় দফায় বিএনপির নেতাকমীের্দর সঙ্গে পুলিশের ঘণ্টাব্যাপী সংঘষর্ হয়। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কঁাদানে গ্যাস ও প্যালেট বুলেট ছুড়ে বিএনপির নেতাকমীের্দর ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তবে বিপুল সংখ্যক নেতাকমীর্ থাকায় পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়। একপযাের্য় পুলিশ নাইটএঙ্গেল মোড়ে অবস্থান নেয়। আর বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ের সামনের সড়কে দলটির নেতাকমীর্রা বিক্ষোভ করতে থাকে। সংঘষের্র সময় নয়াপল্টনের আশপাশের গলিতে নেতাকমীর্রা আশ্রয় নেয়। দফায় দফায় এই সংঘষর্ ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী হয়। বিকালের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গোটা নয়াপল্টন এলাকায় থমথম অবস্থা বিরাজ করে। মহিলা দলের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আহত মুকুল আক্তার কনা যায়যায়দিনকে বলেন, তারা কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। পুলিশ তাদের উপর হামলা চালায়। তিনি বলেন, কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখেন চারিদিক থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তার মাথায় একটি ছোররা গুলি লাগে। এ সময় তিনি মাটিতে শুয়ে পড়েন। গুলি ছোড়া কমলে উঠে পাটির্ অফিসে প্রবেশ করেন। বিনা উস্কানিতে পুলিশ তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলে দুপুর দুইটার দিকে বিএনপি অফিসের নিচে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, বিনা উসকানিতে সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশবাহিনী অতকির্তভাবে বিএনপির নেতাকমীের্দর উপর হামলা চালিয়েছে। তারা মৌচাকে ঢিল মেরেছেন। তারা ভেবেছেন শান্তিপূণর্ এই মনোনয়ন ফরম বিক্রি করার সময় হামলা চালিয়ে তাদের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ করবেন সেটি আর হবে না। কোনো রক্ত চক্ষুকে শহীদ জিয়া সৈনিকরা ভয় করে না। এই আক্রমণ সরকারের নিদেের্শ হয়েছে দাবি করে রিজভী নেতাকমীের্দর উদ্দেশে বলেন, ‘সরকারের নিদেের্শই আমাদের নেতাকমীের্দর রক্তাক্ত কর হয়েছে। আমাদের নেতাকমীের্দর গুলি করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’ পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর বিএনপি নেতাকমীর্রা হামলা চালিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ শান্তিপূণর্ভাবে অবস্থান করছিল। হঠাৎ বিএনপির নেতাকমীর্রা পুলিশের উপর চড়াও হয়। তাদের ৮-১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ‘ইস্যু’ তৈরির লক্ষ্যে পল্টনের সংঘষর্ : মনিরুল বিএনপির কমীর্রা নিবার্চন সামনে রেখে ‘ইস্যু তৈরির লক্ষ্যে’ বিনা উসকানিতে নয়া পল্টনে সংঘষের্ জড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি কাযার্লয়ের সামনে এক ঘণ্টার বেশি সময় পুলিশের সঙ্গে দলটির কমীের্দর সংঘষের্র পর কাউন্টার টেররিজমের প্রধান মনিরুলের এ মন্তব্য আসে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মহানগর পুলিশের ?মতিঝিল জোনের এডিসিসহ ১৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়ে হাসপাতালে ভতির্ হয়েছেন। সংঘষর্ থিতিয়ে আসার পর ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ কমর্কতার্ মনিরুল বলেন, ‘বিনা উসকানিতে ইস্যু তৈরি করার জন্য এটা করেছে ওরা।’ নিবার্চনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলেও বিএনপি নেতাকমীর্রা তা মানেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন পুলিশ সদস্য বলেন, বুধবার বেলা পৌনে ১টার দিকে বিএনপি নেতা মিজার্ আব্বাস ও আখতারুজ্জামানের কমীর্-সমথর্করা মিছিল নিয়ে বিএনপি কাযার্লয়ের দিকে আসার সময় সংঘষের্ জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে গেলে বিক্ষুব্ধ নেতাকমীর্রা ঢিল ছুড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ করেন মনিরুল। তিনি বলেন, ‘দুজন রাজনৈতিক প্রাথীর্র মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় হাজার হাজার নেতাকমীর্ পাটির্ অফিসের সামনে আসে। এ সময় রাস্তা বন্ধ হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।’ সংঘষের্র মধ্যে পুলিশের দুটি সেডান গাড়ি ও একটি ভ্যানে বিএনপিকমীর্রা হামলা করে এবং পরে দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানান তিনি। বিএনপি নেতাকমীের্দর সুশৃঙ্খলভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার অনুরোধ জানিয়ে মনিরুল বলেন, ‘পুলিশ রাষ্ট্রের কমর্চারী। পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাববেন না।’ দুপুরে এই সংঘষের্র সময় কাকরাইলের নাইটঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুলের দিকে উভয়পাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিকাল সোয়া ৩টার পর থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে