আজকের যায়যায়দিন

বতর্মানে দেশে ৪০টি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকলেও ১২৯টি দল নিয়ে ‘ঐতিহাসিক’ জোট গড়তে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এসব দলের ক্ষমতাসীনদের জোটে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চ‚ড়ান্ত। এর বাইরে আরও অন্তত ২০টি দল মহাজোটে যোগ দিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বেশিরভাগ দলেরই নিবন্ধন নেই। এসব দলের সবাইকে সঙ্গে নেয়া বা না নেয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও ৩টি জোটের নেতৃত্বে প্রায় ৮৯টি দল মহাজোটে যুক্ত হতে পারে। বাকি দলগুলোর ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার আগ পযর্ন্ত ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু জাতীয় পাটির্র নেতৃত্বে ৫৮ দলের ইউনাইটেড ন্যাশনাল এলায়েন্স (ইউএনএ) এবং সাবেক বিএনপি নেতা নাজমুল হুদার নেতৃত্বে ৩১ দলের বাংলাদেশ ন্যাশনাল এলায়েন্স (বিএনএ) ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যোগ দেয়ার পর ১০৩টি দলের নেতৃত্ব চলে আসছে আওয়ামী লীগের হাতে। তাছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন ৮ দলের যুক্তফ্রন্ট ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মিছবাউর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে সমমনা ১৮ দল নিয়ে গঠিত আইডিএ জোটও যুক্ত হচ্ছে সরকারি দলের সঙ্গে। ফলে আওয়ামী লীগের জোটে দলের সংখ্যা দঁাড়াচ্ছে ১২৯টি। এর বাইরে আরও অন্তত ২০টি দল নিয়মিত ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। সংলাপেও অংশ নিয়েছে দলগুলো। তবে এসব দলের বেশিরভাগই নিবার্চন কমিশনে নিবন্ধিত নয়। অথার্ৎ দলগুলো নিবার্চনে আলাদাভাবে প্রাথীর্ দিতে পারবে না। এই দলের নেতারা স্বতন্ত্রভাবে বা নিবন্ধিত অন্য দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রাথীর্ হতে পারবেন। এরপর বিভিন্ন সময় নিবার্চন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীকে আলাদা চিঠি দিয়েছে দলগুলো। গত ৭ অক্টোবর ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ৩১ দলের জোটের পাশাপাশি সংলাপে অংশ নেয় ১৮টি দল নিয়ে গঠিত জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট- এনডিএ। এর বাইরেও কয়েকটি ছোট দল অংশ নেয়। এর মধ্যে তৃণমূল এনডিএম নামের একটি দলও সংলাপে অংশ নেয়। দলের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিবার্চনে অংশ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও নিবার্চন কমিশনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান খোকন চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী আশস্ত করেছেন। সরকারের পাশে থাকার আহŸান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আহŸানের প্রতি সম্মান জানিয়ে তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের শরিক হিসেবে নিবার্চন করার জন্য আগামী সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানান তিনি। তাছাড়া অন্য ছোট দলগুলোও একই প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে বলে জানিয়েছে দলের একটি সূত্র। মহাজোট সূত্রে জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসলেও এরশাদ, মিছবাউর রহমান ও বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জোটগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রায় চূড়ান্ত। রাজনৈতিক সমীকরণের কারণে জোট সম্প্রসারণের ঘোষণা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট শেষ পযর্ন্ত নিবার্চনে না এলে এসব দলকে আসন ছেড়ে দিয়ে আলাদা নিবার্চন করতে বলা হতে পারে। তাছাড়া নামসবর্স্ব সব দলকে মহাজোটে অন্তভুর্ক্ত করতে গেলেও জটিল সমস্যায় পড়তে হবে। আবার তাদের ছেড়ে দিলে বিরোধী জোটে যোগ দিতে পারে। এমন চিন্তায় আপাতত চ‚ড়ান্ত ঘোষণা দিতে চাচ্ছেন না জোটের নীতিনিধার্রকরা। নাম প্রকাশ না করার শতের্ ১৪ দলীয় জোটের একজন প্রভাবশালী নেতা জানান, ১৪ দলীয় জোট ১৪ দলীয়ই থাকবে। এখন যারা আসতে চায় তাদের নিয়ে নিবার্চনী জোট হতে পারে। তবে নিবর্চানের এসব জোট নিয়ে আগেভাগেই কোনো ঘোষণা দিতে চাচ্ছেন না। শেষ মুহ‚তের্ পরিস্থিতি বোঝে ঘোষণা হতে পারে। এদিকে আসন্ন একাদশ সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জোটের পরিধি বড় করতে বিভিন্ন ছোট দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে করছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ছোট দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা। কিছু ছোট দল নিজেদের উদ্যোগে যোগাযোগ রক্ষা করছে । দেশের অপর বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোটের পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্ট যুক্ত হওয়ায় তাদের হালকাভাবে নিচ্ছে না সরকারি দল। তাই নামসবর্স্ব ছোট দলগুলোকে হাতছাড়া করে বিরোধীদের পাল্লা ভারী করতে চায় না ক্ষমতাসীনরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসান মাহমুদ যায়যায়দিনকে বলেন, মহাজোট সম্প্রসারণ হতে পারে। তবে কত দল থাকবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জাতীয় পাটির্ আগে থেকেই মহাজোটে আছে। সম্মিলিত জাতীয় জোটের ৫৮ দলের মধ্যে এখন পযর্ন্ত শুধু জাতীয় পাটির্ই মহাজোটে আছে। তাদের জোটের দলগুলোকে নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তারা আসতে চায়। নাজমুল হুদার জোট সম্পকের্ও একই রকম মন্তব্য করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তফ্রন্টের যে দলগুলো আছে তারা সবাই মহাজোটে থাকার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এরবাইরেও কিছু দল নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি। চাইলে জাতীয় পাটির্র মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র এবিএম রহুল আমীন হাওলাদার যায়যায়দিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত নিবার্চনের ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জোটগতভাবে নিবার্চন করলে সম্মিলিত জাতীয় জোটের সব দলকে নিয়েই করবেন বলে জানান তিনি। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সরকারবিরোধী সমমনা দল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়। পরবতীের্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পাটির্র সঙ্গেও নিবার্চনী জোট করে আওয়ামী লীগ। এরপর ১৪ দলীয় জোট আর এরশাদের জাতীয় পাটির্ মিলে ‘মহাজোট’ গঠন করে নিবার্চনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। অবশ্য ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি নিবার্চন প্রধান বিরোধী জোট ওই নিবার্চন বজর্ন করায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে আলাদাভাবে নিবার্চনে অংশ নেয় জাতীয় পাটির্। এরপর ২০১৭ সালে ৫৮টি দল নিয়ে আলাদা জোট গঠন করেন তারা। বিভিন্ন সময় ৩০০ আসনে প্রাথীর্ দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছে দলটি। তবে শেষ পযর্ন্ত ঐক্যফ্রন্ট নিবার্চনে না এলে আলাদাভাবে নিবার্চনের চিন্তাও আছে তাদের। এরশাদের নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোটে ৫৮ দল : এ জোটে নিবন্ধিত দল সংখ্যা ২টি। জাতীয় পাটির্ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। জাতীয় ইসলামী মহাজোট ও বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) সমন্বয়ে সম্মিলিত জাতীয় জোট করা হয়েছে। জাপার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী মহাজোটে ৩৪ ও বিএনএতে ২২টি দল নিয়ে জোট শুরু হয়। পরবতীের্ত আরও দুটি দল তাদের জোটে যোগ দেয়। বিএনএতে ২২ দল : ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পাটির্, আওয়ামী পাটির্ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ইসলামী ডেমোক্রেটিক পাটির্, বাংলাদেশ প্রতিবাদী জনতা পাটির্, বাংলাদেশ তফসিল ফেডারেশন, বাংলাদেশ সচেতন হিন্দু পাটির্, ইউনাইটেড মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ গণজাগরণ পাটির্, বাংলাদেশ গ্রামীণ পাটির্, বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ, তৃণমূল লীগ, গণ-অধিকার পাটির্, বাংলাদেশ ন্যাশনাল মাইনরিটি পাটির্, বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পাটির্, বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্ট, জাতীয় হিন্দু লীগ ও বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পাটির্। ইসলামী মহাজোটের ৩৪ দল : জাতীয় ইসলামী জোট, ওলামা মাশায়েখ সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফেডারেশন, জমিয়তে মুসলেমিন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক লীগ, শরিয়া আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জনতা পাটির্, খেলাফত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামিক জনকল্যাণ পাটির্, জাতীয় শরিয়া আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী গণআন্দোলন, জাতীয় ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় ইসলামিক মুভমেন্ট, ইসলামি মূল্যবোধ সংরক্ষণ পাটির্, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, ন্যাপ ভাসানী, বাংলাদেশ ইসলামী আক্বীদা সংরক্ষণ আন্দোলন, খেদমতে খালক পাটির্, বাংলাদেশ ইত্তেহাদুল মুসলেমিন, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট বই পাটির্, হেফাজতে মুসলেমিন বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত বাস্তবায়ন পাটির্, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, মুসলিম জনতা পাটির্, বাংলাদেশ খেলাফাতুল উম্মাহ, বাংলাদেশ আকিমুদ্বীন মজলিশ, ইসলামী আক্বীদা সংরক্ষণ পাটির্, ইউনাইটেড ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামী পাটির্, ইসলামী সমাজকল্যাণ আন্দোলন এবং লিবারেল পাটির্ বাংলাদেশ। বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টে ৮ দল : যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়া দলগুলো হলো- সাবেক মন্ত্রী নাজিম উদ্দিন আজাদের বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটির্ (বিএলডিপি), সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজার জাতীয় পাটির্ (জাফর), খন্দকার গোলাম মতুর্জার এলডিপি, মাহবুবুর রহমান জয়ের বাংলাদেশ জনদল, ২০ দল থেকে বেরিয়ে আসা হামিদুল্লাহ আল মেহেদির বাংলাদেশ লেবার পাটির্ ও জেবেল রহমান গানির বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পাটির্ (বাংলাদেশ ন্যাপ), দীলিপ কুমার দাসের বাংলাদেশ মাইনরিটি ইউনাইটেড ফ্রন্ট ও কামাল পাশার গণফ্রন্ট। তাছাড়া ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন ৩১টি দল নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ) সরকারের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছে। তরীকত ফেডারেশনের নেতা ও সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল ও বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাউর রহমানের নেতৃত্বে সমমনা ১৮টি ইসলামী দলের জোটও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নিবার্চনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।