বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
মানবাধিকার, নিবার্চন

ইইউ-মার্কিন অবস্থানে আওয়ামী লীগে অস্বস্তি

এস এম মামুন হোসেন
  ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৩৬

জাতীয় সংসদ নিবার্চনের তফসিল ঘোষণার এক সপ্তাহ পার না হতেই এক দিনের ব্যবধানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চরম অস্বস্তিতে পড়েছে। কেননা বাংলাদেশের মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিরোধী দল দমন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং জাতীয় সংসদ নিবার্চন নিয়ে এ দেশগুলো আগে কঠোর সমালোচনা করলেও এবার এর সঙ্গে পণ্য শুল্ক, কোটামুক্ত বাণিজ্য ও বাণিজ্য সুবিধা কাটছঁাটের হুশিয়ারি যোগ হয়েছে, যা ক্ষমতাসীনদের অস্বস্তির মূল কারণ বলে জানা গেছে। শাসক দল আওয়ামী লীগ মনে করে, এত প্রতিক‚লতা সত্তে¡ও তাদের শক্তভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রধান শক্তি হলো উন্নয়ন। বিশেষ করে পোশাক শিল্প, চামড়া, ওষুধ, আইটিসহ যেসব খাতের উন্নয়নের কারণে সরকার বিগত ১০ বছরে দেশের আথর্সামাজিক খাতে বিপুল পরিবতর্ন এনেছে তার প্রায় প্রতিটিই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ দেশগুলোই এসব পণ্যের প্রধান বাজার। ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ৬০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করেছে তার সিংহভাগও এ দেশগুলোতে রপ্তানির ওপর নিভর্র করছে। এ অবস্থায় বাণিজ্য সুবিধা কাটছাঁটের হুশিয়ারি নিবার্চনের আগে দেশগুলোর অবস্থান নিয়ে আরও বিচার-বিশ্লেষণ দরকার। সরকারি দল বলছে তারা যেকোনো মূল্যে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে রপ্তানির ওপর কোনো ধরনের বাধা যাতে না আসে সে জন্য সবর্দা সতকর্। দলটির শীষর্ পযাের্য়র সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে দেশের সব পযাের্য়র রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রাজনীতিতে নিজের উদার অবস্থান জানান দিয়েছেন। প্রয়োজন হলে বিরোধীদের আরও ছাড় দেয়ার প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন তারা। কিন্তু নিবার্চন-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ যেন কোনো ধরনের বাণিজ্য সুবিধা না হারায় তার জন্য আইন ও সংবিধানের ভেতরে থেকে যতটুকু ছাড় দেয়ার তার সবটুকু দেয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগের নীতিনিধার্রণী পযাের্য়র একজন নেতা যায়যায়দিনকে বলেন, নিবার্চন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান তারাও পযের্বক্ষণ করছেন। এ বিষয়ে তাদের বিশেষ টিম সাবর্ক্ষণিক কাজ করছে। প্রয়োজন হলে এসব দেশের ক‚টনীতিকদের ডেকে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে। তবে যে উন্নয়নের জন্য দেশের মানুষের কাছে শেখ হাসিনার সরকারের এত গ্রহণযোগ্যতা সে উন্নয়ন থেমে যেতে পারেÑ এমন কোনো সুযোগ দিতে চান না তারা। গত বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পালাের্মন্টে বাংলাদেশ নিয়ে এক আলোচনায় বলা হয়, বিদ্যমান বাণিজ্য সুবিধা বহাল রাখতে চাইলে বাংলাদেশকে অবশ্যই মানবাধিকার ও অন্যান্য ইস্যুতে তার অঙ্গীকারগুলো পূরণ করতে হবে। শান্তিপূণর্, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নিবার্চনের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে ঘিরে যে ধরনের সহিংসতা হয়েছিল তা তারা আর দেখতে চায় না জানিয়ে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করার আহŸান জানানো হয়। আর তা না হলে ইইউতে বাংলাদেশ যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পায় তা স্থগিত এবং পোশাক শিল্পসহ প্রধান রপ্তানি পণ্যের বাণিজ্য সুবিধায় কাটছঁাট করার কথা বলা হয়। এর ঠিক একদিন পরেই শুক্রবার মাকির্ন কংগ্রেসের দ্বিদলীয় ককাসেও বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে প্রবল সমালোচনা করা হয়। সেখানেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাষায় কথা বলেছেন মাকির্ন নীতিনিধার্রকেরা। সেখানেও বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানির এ বাজারে এরই মধ্যে দেশের ব্যবসায়ীদের নানা প্রতিক‚লতার মুখে পড়তে হচ্ছে। সূত্র জানায়, বিগত প্রায় পঁাচ বছর ধরে দীঘর্ চেষ্টার পরেও দেশের প্রধান রপ্তানির এ দেশটিতে আগের সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যথর্ হয়েছে বাংলাদেশ। এরপর যদি আরও প্রতিক‚লতার সৃষ্টি হয় তবে তা সরকারের প্রধান ভরসার জায়গা ‘উন্নয়নের’ উপরেই বাধার সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে রপ্তানির ৬০ শতাংশই যে বাজার থেকে আসে সেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থানকে সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকারের শীষর্ মহল। আর সেই ইইউ এমন কঠোর অবস্থানে যাওয়াকে ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ নিজেদের ব্যথর্তা হিসেবেও দেখছে। আর এ কারণে দলটির আন্তজাির্তক উইংকে আরও শক্তিশালী করার কথাও বলছে তারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তজাির্তক সম্পকর্ বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, তারা এসব বক্তব্য বিবৃতি শুনেছেন। এসব বিষয়ে তারা সচেতন রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাত্র ১০ বছরের মধ্যে এ দেশে যে উন্নয়ন করেছে তা আর কেউ করতে পারেনি। তারা এ উন্নয়নকে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে দেবেন না। এ জন্য যা যা করণীয় তাই করবেন। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে কি বড় আর ছোট সব দলের সঙ্গে আন্তরিকভাবে আলোচনা করেছেন। যার সংসদে নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে তার কি এত উদার হওয়ার কোনো দরকার ছিল? পৃথিবীর কোন দেশের সরকারপ্রধান এতটা উদার হন? তিনি বতর্মান বিশ্বর সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদদের একজন। এ কারণেই দেশের বৃহৎ স্বাথের্ই সব দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। তিনি দেশের স্বাথের্ ছাড় দিতে জানেন। ২০১৪ সালে নিবার্চনেও তিনি বিএনপিকে ডেকেছিলেন। কিন্তু তারা আসেই নি, প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করেছে। তারপরও তিনি কোনো রাগ করেননি। এত ছাড় কেন দিচ্ছেন। দেশের স্বাথের্ই তো। তারপরও কিভাবে এসব কথা হয় তা তারা বুঝতে পারেন না। ড. শাম্মি আহম্মেদ আরও বলেন, ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র মিত্র রাষ্ট্র। একে অন্যের সুবিধা অসুবিধায় সব সময়ই পাশে থেকে তারা কাজ করেছেন। তারা কোনো পরামশর্ দিলে তা ইতিবাচকভাবেই দেখেন। তবে জোর-জুলুম করলে ভুল হবে। তারা মনে করেন এসব বিষয়ে বিরোধীদের সঙ্গে প্রয়োজন হলে আরও আলাপ-আলোচনার সুযোগ রয়েছে। বিদেশি ক‚টনীতিকদের সঙ্গেও আলোচনা হতে পারে। তারা দেশের উন্নয়ন, জনগণের ভাগ্য বদলের জন্য সব কিছু করতে পারে। এ দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নই তাদের প্রধান লক্ষ্য। ফলে আশা করেন এসব সমস্যা তারা সমঝোতার মাধ্যমে সহজেই উতরাতে পারবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে