বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আ’লীগের নিবার্চনী ইশতেহারে ১০০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ইশতেহার ঘোষণা করবেন শেখ হাসিনা থাকবে নতুন ¯েøাগান ও চমক প্রতিটি গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার প্রতিশ্রæতি ১০ বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে
ফয়সাল খান
  ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০৭

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে ইশতেহার তৈরি করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির কয়েক ধাপে সংশোধনের পর সেটা এখন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা যাচাই-বাছাই করছেন। বিগত নিবার্চনের ইশতেহারের সঙ্গে মিল রেখে এবারও থাকছে নতুন ¯েøাগান আর চমক। বিশেষ করে পরিকল্পনা কমিশন প্রণীত ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বা ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ নিবার্চনী ইশতেহারে যোগ করা হচ্ছে। যাতে আগামী ১০০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি রোডম্যাপ থাকবে। এ ছাড়া বিগত সময় সরকারের সাফল্য, আধুনিক, উন্নত, মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কমর্সূচিও থাকছে। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির একাধিক সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সুত্র জানায়, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে এবার ইশতেহার তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। এতে ১০০ বছর মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যানের উল্লেখ থাকছে। যাতে ২১০০ সাল পযর্ন্ত সাবির্ক পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় পদ্মা ও যমুনা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণসহ দেশের সাবির্ক উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় থাকবে ইশতেহারে। পাশাপাশি ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নিবার্চনী ইশতেহারে ঘোষিত বিষয়গুলোর অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ইশতেহারে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে অথৈর্নতিক উন্নয়নের জন্য ইশতেহারের প্রাধান্য পেয়েছে সমুদ্র, প্রকৃতি ও পরিবেশ ঠিক রেখে সমুদ্র সম্পদ আগামীতে হয়ে উঠতে পারে অথর্নীতির মূল ভিত্তি। এই সম্পদকে কীভাবে কাজে লাগানো যাবে, এর বিস্তারিত থাকছে ইশতেহারে। এ ছাড়া বাংলাদেশকে আধুনিক, উন্নত ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও নিদির্ষ্ট কমর্সূচির কথা থাকছে আওয়ামী লীগের এবারের নিবার্চনী ইশতেহারে। তরুণদের তারুণ্য জাগানিয়া ও যুবকদের ভবিষ্যৎ গড়ার নানা কমর্সূচির সঙ্গে থাকছে দেশের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একগুচ্ছ মানবিক উপহার। থাকবে সব ধমের্র মানুষের সমান অধিকার ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দৃঢ় ঘোষণা। নারীর ক্ষমতায়নের ধারা অব্যাহত রাখা ও দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে একে দেশ থেকে একেবারে বিদায় করার অঙ্গীকার। এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে ‘দিনবদলের সনদ’ নামে নিবার্চনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে দলটির ইশতেহারের ¯েøাগান ছিল ‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। এতে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার ঘোষণা ছিল। এবার সেটা বাড়িয়ে ২১০০ সাল পযর্ন্ত দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনিদের্শনার আলোকে দলের সভাপতিমÐলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ইশতেহার তৈরির কাজ সমন্বয় করেছেন। ধানমÐিতে আওয়ামী লীগের নিবার্চন পরিচালনা অফিসে তারা গত অক্টোবর মাস থেকে ধারাবাহিক মিটিং করেছেন। এরপর খসড়া চ‚ড়ান্ত করেও কয়েক দফা সংশোধন করেছেন। নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পরামশর্ও। এবার টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে জাতিকে যুগোপযোগী ভোটারবান্ধব ইশতেহার উপহার দিতে চায় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তাই দলের গত সম্মেলনের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সমন্বয় করে ইশতেহার তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় ঘোষণাপত্র প্রণয়নকারী কমিটির প্রধান ও সভাপতিমÐলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাককে। দলের নেতাদের পাশাপাশি ওই কমিটিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসিসহ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের অন্তভুর্ক্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও দলের সভাপতিমÐলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশের উন্নয়নের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এবারের ইশতেহার প্রণয়ন করা হয়েছে। দারিদ্র্যবিমোচন, তরুণদের কমর্সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কথা থাকবে নিবার্চনী ইশতেহারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইশতেহারের প্রাথমিক খসড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে। উনি সেটা দেখছেন। প্রতিটি মুহ‚তের্ গাইডলাইন দিচ্ছেন, সেগুলো আবার পরিবতর্ন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এর আগে গত ১০ অক্টোবর উচ্চপযাের্য়র এক সভায় দলের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাককে আহŸায়ক করে ১২ সদস্যের উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. মসিউর রহমান, হোসেন তওফিক ইমাম (এইচটি ইমাম), ড. অনুপম সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচাযর্ আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচাযর্ আবদুল মান্নান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া ও ব্যারিস্টার ফরহাদ হোসেন প্রমুখ। উপকমিটির একাধিক সূত্র জানান, এবার ভিশন-২০৪১- কে ফোকাস পয়েন্ট ধরে নিবার্চনী ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে। একটি নতুন পঞ্চবাষির্কী পরিকল্পনাও অন্তভুর্ক্ত থাকবে, কেননা চলমান সপ্তম পঞ্চবাষির্কী পরিকল্পনা ২০২০ সাল নাগাদ শেষ হবে। বিশেষ করে সারাদেশে ১০০টি অথৈর্নতিক অঞ্চল গড়ে তোলার অঙ্গীকারটি পুনরাবৃত্তি হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন মেগা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবাসন প্রকল্পগুলোও অগ্রাধিকার পাবে। উন্নয়ন ও সুশাসনের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে আথর্সামাজিক চলমান অগ্রযাত্রার রোডম্যাপ তুলে ধরে দীঘের্ময়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভবিষ্যৎ করণীয়গুলোও স্পষ্ট করা হবে। থাকবে চমকপ্রদ ¯েøাগান ইশতেহার প্রস্তুত কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ইশতেহারে ‘দিন বদলের সনদ’ ¯েøাগান-সংবলিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনিমাের্ণর প্রতিশ্রæতি দেয় আওয়ামী লীগ। এর আদলে তরুণদের মন জয় আকষের্ণ এবারের ইশতেহারেও একটি আকষর্ণীয় ¯েøাগান অন্তভুর্ক্ত হবে। এরমধ্যে ‘সমৃদ্ধির বাংলাদেশ’, ‘প্রতিটি গ্রাম হবে শহর’ ছাড়াও তিন-চারটি ¯েøাগান প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর মধ্য থেকে একটি চ‚ড়ান্ত করবেন। এ ছাড়া কোনো কিছু সংযোজন বা বিয়োজনের থাকলে সে বিষয়েও তিনি দিকনিদের্শনা দেবেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির এক নেতা যায়যায়দিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি গ্রামকে শহর করে দেব। আমাদের গ্রামে শহরের মতো সব নাগরিক সুবিধা পেঁৗছে যাবে।’ প্রধানমন্ত্রী এটাকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমাদের যেসব প্রতিশ্রæতি, এর মধ্যে এটা ওপরের দিকে থাকবে। আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে গ্রাম ও শহরের ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়া হবে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ঘোষণা আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনের ১৭ দিন আগে ইশতেহার ঘোষণা করেছিল। তবে দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে মাত্র এক সপ্তাহ আগে ইশতেহার ঘোষণা করে দলটি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তজাির্তক সম্মেলনকেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে তা ঘোষণা করেছিলেন। নিবার্চন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুসারে, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৮ নভেম্বর, বাছাই ২ ডিসেম্বর এবং প্রাথির্তা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ ডিসেম্বর। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বঙ্গবন্ধু আন্তজাির্তক সম্মেলনকেন্দ্র অথবা রাজধানীর কোনো পঁাচ তারকা হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার প্রকাশ করবেন শেখ হাসিনা। জানা গেছে, ২০০৮ সালের মতো এবারও নিবার্চনের কমপক্ষে ১৫ দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার প্রকাশ করবে আওয়ামী লীগ। ফলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অথার্ৎ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দুই-একদিন আগে-পরে এই ইশতেহার প্রকাশ করবে ক্ষমতাসীনরা। এ ছাড়া এবারের ইশতেহারে কিছু বিষয়ে চমক থাকবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শতের্ এক নেতা বলেন, এবারের ইশতেহারে চমক থাকবে। কিন্তু তা কি, সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বলবেন। ইশতেহারের খসড়ায় তিন-চারটি ¯েøাগান প্রাথমিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে। কোনটা চ‚ড়ান্ত হবে সেটাও একমাত্র দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই জানেন। তিনিই আনুষ্ঠানিকভাবে সবার সামনে চমক দেবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে