বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আব্বাস আক্রান্ত খোকন গুলিবিদ্ধ

বিভিন্নস্থানে নির্বাচনী সহিংসতা অব্যাহত
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০৫
মিজার্ আব্বাস
গণসংযোগ চালানোর সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ওপর ঢাকায় হামলা হয়েছে। আর নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বিএনপি যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও এমপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
শনিবার বেলা ১২টায় রাজধানীর সেগুন বাগিচা কাঁচাবাজারের কাছে মির্জা আব্বাস গণসংযোগ করার সময় ৩০/৪০ জন যুবক হামলা চালায়। এতে আহত হয়েছেন বিএনপির প্রায় ৬০ জন নেতাকর্মী। আহতদের মধ্যে রয়েছেনÑ আওয়াল, আবুল কালাম, শাহাদাত হোসেন, নুর আলম, মো. রানা, জাহানারা বেগম, বিলকিস, মনি, রাশিদা, কফিল উদ্দিন, জাহিদ হোসেন, আলম, আবদুস সালাম, নাদিয়া পাঠান পাপন, মানিক, ইমন, শওকত আলী স্বপন, মিজান, আলীমুদ্দিন প্রমুখ। হামলাকারীদের হাতে লাঠি, লোহার রড, চাপাতি ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলে আহতদের কয়েকজন অভিযোগ করেন।
পরে দুপুরে মির্জা আব্বাস তার শাহজাহানপুরস্থ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রচারণার কার্যক্রমে আওয়ামী লীগ এভাবে সহিংস আক্রমণ চালাবে আমি
ভাবতেও পারিনি। নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রমে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ আমাদের নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারপিট করে আহত করে। অন্যদিকে এই আহত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।’
তিনি সংবাদ সম্মেলনে আহত নেতাকর্মীদের মাথায়, পিঠে, হাতে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন সাংবাদিকদের দেখান।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই হচ্ছে আজকে সারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি। সরকার বলছে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কি না আসলে আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে রাখবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। আমরা নির্বাচন করতে পারব কিনা এ বিষয়ে দেশের জনগণের মাঝে সন্দেহ রয়েছে।’
‘আমি সাংবাদিক বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে চাই, আসলে সরকার কি চায়? বিএনপিকে নির্বাচন করতে আদৌ দেবে কি দেবে না এই বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট হওয়া উচিত। তফসিল ঘোষণার সময় সরকার বলেছিল, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে নতুন কোনো মামলা হবে না এবং পুরাতন মামলায় গ্রেপ্তার করা হবে না। এই বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, নতুন নতুন গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে। আমরা নির্বাচনে থাকতে চাই বলেই সরকারের এই আক্রোশ। মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। পালানোর সুযোগ আমাদের নেই। আজ আমার ওপর হামলা হয়েছে, চার দিন আগে ঢাকা- চালানো হয়েছে। কিন্তু হামলা মামলা যতই হোক নির্বাচনের মাঠ আমরা ছাড়ব না।’
মাহাবুব উদ্দিন খোকন গুলিবিদ্ধ
আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালী-১ (চাটখিল ও সোনাইমুড়ী) আসনের কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও বিএনপির এমপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন শনিবার সোনাইমুড়ী বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শনিবার বিকালে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগকালে সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ২০ নেতাকর্মী আহত হন। পরে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও ৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তার বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে।
আহতরা হলেন, গুলিবিদ্ধ ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, পিএস ইকবাল হোসেন রুবেল (৩০), ছাত্রদল নেতা সোহেলকে (৩০) নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপর গুলিবিদ্ধ যুবদল কর্মী রায়হান (৩২), বিএনপির কর্মী খোকন (৪২), হারুন (৩৫), ফারুক (৩৩), মজিদ (৩৫), নাজমুল (৩২), রিয়াদ (৩১), সেলিমসহ (৩০) অপর অজ্ঞাতনামা গুলিবিদ্ধ ও আহতদের চৌমুহনী পৌরসভার বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার বিকেলে উপজেলা সোনাইমুড়ী বাজারের প্রধান সড়কে এ আসনের বিএনপির এমপি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের গণসংযোগ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
পরে খবর পেয়ে ওসি নিজেই ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের পিঠে ৫টি, থুতনিতে ১টি ও হাতে ২টি রাবার্ট বুলেট ছুড়ে। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের পিএসসহ নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে তাদেরকেও ওসি এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় তিনিসহ ২০ জন গুলিবিদ্ধ হন।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে বিএনপির এমপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন দাবি করে বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টায় সোনাইমুড়ী বাজারে প্রধান সড়কের পাশে আমি আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করছি। এ সময় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কর্মীরা গণসংযোগে বাধা দিয়ে ১০-১২ জন কর্মীকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে বিএনপির সমর্থিত ৩০-৪০টি দোকান ভাঙচুর করে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কর্মীদের বিএনপির কর্মীরা ধাওয়া করলে ওসি আবদুল মজিদ নিজেই আমার মুখের নিচে (থুতনিতে), পিঠে ৫টি, হাতে ২টি, থুতনিতে ১টি গুলি, পিএস ইকবাল হোসেন রুবেলের পায়ে গুলিসহ ২০ জন নেতাকর্মীকে গুলি করছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, নোয়াখালী-১ (চাটখিল ও সোনাইমুড়ী) আসনের বিএনপির এমপি প্রার্থী, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় সোনাইমুড়ী বাজারে প্রধান সড়কে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করছিলেন। ওঁত পেতে থেকে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের অস্ত্রধারী কর্মীরা বিএনপির এমপি প্রার্থীর গণসংযোগে বাধা দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ১০-১২ জনকে আহত করে।
বিএনপির সমর্থিত ধানসিঁড়ি হোটেল, নুরু মিয়ার ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ডাক্তার গাজির ফার্মেসি, জয়নালের ফার্মেসি, টুটুলের মুদি দোকান, হলি স্কয়ার হাসপাতালসহ ৩০-৪০টি দোকান ভাঙচুর করে। বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কর্মীদের ধাওয়া করলে ওসি দৌড়ে নিজেই গুলি করেন। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ দিকে সোনাইমুড়ী থানার ওসি আবদুল মজিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়লে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও তার পিএসসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে