মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

১২ কিশোর ফুটবলার ও কোচ পেল নতুন জীবন

রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষ
নতুনধারা
  ১১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১১ জুলাই ২০১৮, ০০:১৪
কোচের সঙ্গে গুহায় আটকা পড়া থাইল্যান্ডের সেই কিশোর ফুটবলাররা Ñফাইল ছবি

যাযাদি ডেস্ক থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে থাকা ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনদিনের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের মধ্য দিয়ে মৃত্যুক‚প থেকে সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। তিনটি দলে ভাগ করে তাদের উদ্ধার করেন উদ্ধারকারী দল। থাই নেভি সিলের ফেসবুক পেজে সবাইকে নিরাপদে উদ্ধারের কথা জানানো হয়েছে। উদ্ধার সবাই সুস্থ আছেন। রোববার ও সোমবার মোট আটজনকে থাম লুয়াং গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার তৃতীয় দিনে ৫ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদে গুহার বাইরে আনেন উদ্ধারকারীরা। পুরো উদ্ধার-প্রক্রিয়ায় ৯০ জনের একটি ডুবুরি দল কাজ করে। তাদের মধ্যে ৪০ জন থাইল্যান্ডের। অন্যরা বিদেশি। এএফপি, রয়টাসর্ ও বিবিসির খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো অভিযান শুরু হলে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার দিকে গুহায় থাকা নবম কিশোরকে উদ্ধার করে আনা হয়। এর ১৫ মিনিট পর ১০ম কিশোরকে গুহা থেকে বের করে আনেন উদ্ধারকারীরা। এর ৩০ মিনিটের ব্যবধানে একাদশ কিশোরকে গুহা থেকে উদ্ধার করে আনা হয়। এরপর একে একে বাকি কিশোরকে বের বের করে আনা হয়। সবশেষে কিশোর ফুটবল দলের কোচকে গুহা থেকে বের করে আনেন উদ্ধারকারীরা। সবাই ভালো আছে বলে জানিয়েছে কতৃর্পক্ষ। এখনো গুহার ভেতরে চারজন ডুবুরি অবস্থান করছে বলে সিএনএনে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অভিযানের প্রধান এবং চিয়াং রাইয়ের গভনর্র নারংসাক ওসোত্তানাকনর্ বলেন, উদ্ধার অভিযানে প্রথম দিন লেগেছিল ১১ ঘণ্টা, দ্বিতীয় দিনে লেগেছে ৯ ঘণ্টা। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৮ মিনিটে তৃতীয় দিনের অভিযানে যান উদ্ধারকমীর্রা। ১৯ সদস্যের একটি ডুবুরি দল এই উদ্ধার কাযর্ক্রমে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। আগের দুই দিনের মতো গতকাল উদ্ধার হওয়াদের গুহার প্রবেশমুখ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে পাশের ফিল্ড হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। এরপর হেলিকপ্টারে চিয়াং রাই শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আগের দুই দিনে উদ্ধার হওয়া আট কিশোরও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। চিঠিতে যোগাযোগ : হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া ফুটবলার ও তাদের কোচ সুস্থ আছেন। তাদের খেতে দেয়া হচ্ছে। উদ্ধার হওয়াদের বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া কিশোরদের সঙ্গে এখনো দেখা করতে পারেনি তাদের স্বজনরা। তবে জানালা দিয়ে স্বজনরা তাদের দেখেছেন। চিঠির মধ্য দিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কিশোরদের যোগাযোগ হচ্ছে। মাস্ক পরিয়ে উদ্ধার গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে হেঁটে, কাদা মাড়িয়ে, কখনো চড়াইয়ে উঠে, আবার কখনো পানির নিচ দিয়ে সঁাতরে ওই কিশোরদের বের করে আনা হয়। উদ্ধার কাজের জন্য বাইরে থেকে ওই ফুটবল দলের অবস্থানস্থল পযর্ন্ত দড়ি বঁাধা হয়। উদ্ধারের সময় প্রত্যেক কিশোরকে অক্সিজেন মাস্ক পরানো হয়, দড়ি দিয়ে বঁাধা হয় সামনে থাকা ডুবুরির সঙ্গে। একজন গুহায় বঁাধা দড়ি এবং অক্সিজেনের বোতল নিয়ে যান খুদে ফুটবলারদের কাছে। কোনো সমস্যা হলে সহায়তার জন্য তাদের পেছনে ছিলেন আরেকজন ডুবুরি। গুহার সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গাটি ‘টি-জংশন’ নামে পরিচিত। এই এলাকা এতটাই সংকীণর্ যে এখানে ডুবুরিদের অক্সিজেন ট্যাংকও খুলে ফেলতে হয়। এই এলাকার আগে ‘চেম্বার-থ্রি’ নামের প্রকোষ্ঠে বেস ক্যাম্প বানানো হয়েছে। সবের্শষ ধাপটি অতিক্রমের আগে এখানে কিছু সময় বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা হয়। মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তের কাছে ১০ কিলোমিটার দীঘর্ থাম লুয়াং গুহা থাইল্যান্ডের দীঘর্তম গুহা। কম চওড়া আর অনেক প্রকোষ্ঠ থাকায় গুহার ভেতরে চলাচল করা কঠিন। ওই গুহায় ঢোকার পর গত ২৩ জুন নিখেঁাজ হয় ১২ খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ। খুদে ফুটবলারদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। আর তাদের সহকারী কোচ এক্কাপোল জানথাওংয়ের বয়স ২৫ বছর। তারা মু পা নামের একটি ফুটবল দলের সদস্য। ৯ দিন সেখানে আটকে থাকার পর ২ জুলাই ব্রিটিশ ডুবুরি রিচাডর্ স্ট্যানটন ও জন ভলানথেন তাদের সন্ধান পান। ২৩ জুন বেড়াতে গিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং নং নন গুহায় আটকা পড়ে ওয়াইল্ড বোয়ার ফুটবল ক্লাবের ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ। তাদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। ১০ কিলোমিটার দীঘর্ গুহাটি থাইল্যান্ডের অন্যতম দীঘর্ গুহা। এখানে যাত্রাপথের দিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ভারী বষর্ণ আর কাদায় থাম লুয়াংয়ের প্রবেশ মুখ বন্ধ হয়ে গেলে তারা সেখানে আটকা পড়ে। নিখেঁাজের পর গুহার পাশে তাদের সাইকেল এবং খেলার সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা যায়। নিখেঁাজের ৯ দিন পর সোমবার (২ জুলাই) দুজন ব্রিটিশ ডুবুরি চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং গুহায় তাদের জীবিত সন্ধান পান। এরপরই উদ্ধারে শুরু হয় অভিযান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে