শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ আমার ছেলেডারে অনেক মারছে, ও বঁাচতে চায়: রাশেদের মা

যাযাদি রিপোটর্
  ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
সংবাদ সম্মেলনে সালেহা বেগম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজের সন্তান ভিক্ষা চাইলেন কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদের মা সালেহা বেগম। ছেলের চাকরি চান না, রাশেদের সব মামলা ও রিমান্ড প্রত্যাহার করে ছেলের মুক্তির দাবি জানান তিনি।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর ক্রাইম রিপোটার্সর্ অ্যাসোসিয়েশনে (ক্রাব) এক সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমন দাবি জানান।

সালেহা বেগম বলেন, ‘ভাগ্যক্রমে গত মঙ্গলবার মিন্টো রোডে আমার ছেলের সঙ্গে দেখা হয়। পুলিশ আমার ছেলেডারে অনেক মারছে। ও বঁাচতে চায়। রাশেদ কোনো অন্যায় করে নাই। মানুষের বাসায় কাজ কইরা অনেক কষ্টে বাবুডারে বড় করছি। আমার ছেলের মতো ভালো ছেলে পাইবেন না। প্রধানমন্ত্রী আপনি আমার বাবুডারে মুক্তি দেন। ও (রাশেদ) তো একটা চাকরি পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। ও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না।’

‘মা আমাকে যেন আর না মারে, আমাকে আর রিমান্ডে যেন না নেয়, তুমি সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রাথর্না করে ‘আমার মুক্তি চাও।’ রাশেদ তার মাকে এমন কথা বলেছেন উল্লেখ করে সালেহা বেগম বলেন, আমার বাবুডারে আমি একটু ধরতে চাইলে পুলিশ দেয়নি বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের বাসায় কাজ কইরা তিন সন্তানকে বড় করছি। আমার একটি কিডনি নষ্ট হইয়া গেছে। পরের বাসায় আর কাজ করতে পারি না। স্বপ্ন দেখছি, ছেলেটা অনেক বড় চাকরি কইরা আমাদের পরিবার চালাইবে, অথচ আমার বাবুডারে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করতাছে। আমার ছেলেরে মুক্তি দেন, সে আর আন্দোলন করবে না, শুধু পড়ালেখা করবে।’ এমন প্রতিজ্ঞা করে তিনি প্রধামন্ত্রীর কাছে ছেলের মুক্তির জন্য প্রাথর্না করেন।

সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া আলো বলেন, ‘রাশেদকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ আমাদের এতদিন কোনো তথ্য দেয়নি। প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে বের হয়ে থানা আর মিন্টু রোড, ডিবি অফিসে গিয়ে বসে থেকেছি। বুধবার ভাগ্যক্রমে রাশেদের সঙ্গে দেখা হয়। তাকে ভীষণ মারধর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীর মুক্তির দাবি জানাই।’

তিনি বলেন, ‘রাশেদ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। সে একজন সাধারণ মেধাবী ছাত্র। একটি ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য সাধারণ শিক্ষাথীর্রা আন্দোলন করছে। অথচ এ আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’ রাশেদের সব মামলা প্রত্যাহার করে তাকে মুক্তির দাবি জানান তিনি।

উল্লেখ্য, কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানকে গত ১ জুলাই মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বাড়ি ঝিনাইদহে। বাবা নবাই বিশ্বাস রাজমিস্ত্রি, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। রাশেদের দুটি বোন। একজন তার বড়, অন্যজন ছোট। দ্বিতীয় দফায় রাশেদ রিমান্ডে রয়েছেন। রাশেদকে গ্রেপ্তারের পর তার মুক্তির জন্য পরিবারের সদস্যরা অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

গত রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নুরের আদালতে মামলার তদন্তকারী কমর্কতার্ ভিসির বাসা ভাঙচুর ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের দুই মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে আদালত দুই মামলায় পাঁচদিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ফেসবুক লাইভে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. রাশেদ খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২ জুলাই পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন যা প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রক্রিয়াধীন। এরপরও গত ২৭ জুন রাশেদ খান কোটা সংস্কার চাই নামের একটি ফেসবুক গ্রæপ থেকে ভিডিও লাইভে এসে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে মানহানিকর বক্তব্য ও মিথ্যা তথ্য দেন।

এসব মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। এমন অভিযোগে রোববার (১ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগ থানায় রাশেদ খানের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<3151 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1