বিভিন্ন মহলের আপত্তির পরেও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই নিবার্চনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু নিবার্চনে ভয়াবহ বিপযের্য়র পর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে জামায়াত বড় বাধা হয়ে দঁাড়িয়েছে। যুদ্ধাপরাধসহ নানা বিতকের্র তকমা লাগানো জামায়াতকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন থেকে বাদ দেয়ার জোর দাবি উঠেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। প্রকাশ্যে এখনই জামায়াত ছাড়ার ব্যাপারে বিএনপি সরাসরি কোনো অবস্থান না নিলেও তৃণমূল থেকেও ব্যাপক চাপে আছে দলের হাইকমান্ড। ঐক্যফ্রন্টের সূত্র মতে, আগামী তিন মাসের মধ্যে আরেকটি সংসদ নিবার্চনে টাগের্ট নিয়ে কাজ করছে তারা। এর মধ্যে বহিবিের্শ্ব সমথর্ন আদায় এবং আন্তজাির্তক আদালতে মামলা, জামায়াতকে বাদ দিয়ে ফ্রন্টের পরিধি বাড়িয়ে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক সংগঠনকে একমঞ্চে আনা এবং তৃণমূলের সংগঠনকে শক্তিশালী করা ও ঐক্যবদ্ধ রাখার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আন্তজাির্তক পযাের্য় জনমত নিজেদের পক্ষে আনা ও আইনি বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ঐক্যফ্রন্টের শীষর্ নেতা ড. কামাল হোসেন এবং ফ্রন্টের মুখপাত্র মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্রæত সময়ের মধ্যে বিদেশ সফরে যেতে পারেন। তৃণমূলকে সুসংগঠিত করতে আঞ্চলিক পযাের্য় কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরও শুরু হচ্ছে। আর জামায়াতকে বাদ দিতে বিভিন্ন পযাের্য় অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। সূত্রমতে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতকে ছাড়াই পথ চলতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি নেতাদেরও জানানো হয়েছে। বিএনপিতে জামায়াতপন্থী কিছু নেতা ছাড়া অনেকেই এই বিষয়টি যৌক্তিক বলে সমথর্নও করছেন। এ ছাড়া জামায়াত ছাড়া ২০ দলের অন্য দলগুলোকেও সরাসরি ঐক্যফ্রন্টে অন্তভুর্ক্ত করা, বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক জোট ও ইসলামী আন্দোলনসহ সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন বেগবান করার কথাও ভাবা হচ্ছে। নিবার্চনের আগে জামায়াতকে বাদ দেয়ার নানা আলোচনা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন জামায়াতকে বাইরে রেখে আন্দোলনে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে সূত্রগুলো বলছেন, মূলত তিনটি কারণে জামায়াতকে বাদ দেয়া নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এক. জামায়াতের কারণে ভারতসহ বহিবিের্শ্বর আস্থা অজর্ন সম্ভব হয়নি। দুই. সরকারবিরোধী অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল জামায়াত থাকায় ঐক্যফ্রন্টে আসেনি এবং তিন. নতুন প্রজন্মের অনেকে জামায়াতের কারণে ঐক্যফ্রন্টকেও স্বাধীনতাবিরোধীদের মদদদাতা হিসেবে ভেবেছে। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, সম্ভাব্য আন্দোলনের আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার জোর দাবি উঠেছে ঐক্যফ্রন্টে। জামায়াতকে বাদ দিয়ে সুনিদির্ষ্টভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার কথাও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি নেতাদের জানিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্টের পরিধি বাড়াতে বাম জোট ও কয়েকটি ইসলামি দলের বিভিন্ন পযাের্য়র নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। জামায়াতকে বাদ দিলে বৃহত্তর ঐক্যের ভাঙন বলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ফয়দা লুটার চেষ্টা করবে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে জোট থেকে জাময়াতকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ফ্রন্টের শীষর্ এক নেতা বলেন, জামায়াতকে বাদ দিলে বা চলে গেলে বৃহত্তর ঐক্যে ভাঙন বলা যাবে না। বরং এই ঐক্য আরো সুদৃঢ় হবে। সন্দেহ অবিশ্বাস কমার পাশাপাশি ভোটের রাজনীতি গুরুত্বহীন হলেও সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত বাম ও ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানা সহজ হবে। এর পাশাপাশি আন্তজাির্তক মহলের চাহিদা পূরণ করে তাদের সমথর্ন আদায় অনেক সহজ হবে। সঙ্গত কারণে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে জামায়াতকে দূরে সরানোর চিন্তাভাবনা হচ্ছে। সূত্র মতে, জামায়াতকে নিয়েও বিএনপিতে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, আন্তজাির্তক যে সমীকরণ দঁাড়িয়েছে, তাতে জামায়াতকে জোটে রেখে আর বেশি দূর এগোনো যাবে না। ফলে বিএনপি জোট থেকে জামায়াত বেরিয়ে যাক, এমনটা চাইছেন বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকমীর্। অনেকের মতে, দলীয় ফোরামের বৈঠক হলে এ ইস্যু সামনে আসবে এবং তখন দলটির বিএনপির সঙ্গে টিকে থাকা কঠিন হবে। এ দিকে জামায়তপন্থী বিএনপি নেতারা অবশ্য এ নিয়ে আরো ভাবার পক্ষে মত দিয়েছেন। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের একের পর এক দাবি মানা হয়েছে। রাখা হয়েছে, অনেক অন্যায় আবদারও। কিন্তু দেশি ও আন্তজাির্তক পযাের্য় ম্যানেজের রাজনীতিতে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা একেবারেই ব্যথর্ হয়েছেন। এখন জামায়াতকে বাদ দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার কথা বললেও পরবতীের্ত বিএনপি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে পারে। তখন জোট টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। আর জামায়াতকেও হারাতে হবে। তাই সবদিক বিবেচনা করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আর গণফোরামের নিবাির্চত দুই সদস্যের শপথের বিষয়ে তারা কী সিদ্ধান্ত নেয় তা না দেখে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না।