শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবাই ডাকসু নিবার্চন চায়, তবুও সংশয়

বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবি, তারা অংশগ্রহণমূলক, সহাবস্থানের নিশ্চয়তা, সমান সুযোগ এবং পেশিশক্তিমুক্ত পরিবেশে নিবার্চন চায়
এস এম মামুন হোসেন
  ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

প্রায় তিন দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নিবার্চন আয়োজনের তৎপরতা শুরু হয়েছে। অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনই একে স্বাগত জানালেও এ নিবার্চনকে ঘিরে সব মহলেই উচ্ছ¡াসের পাশাপাশি উদ্বেগও রয়েছে। সাধারণ ছাত্ররা মনে করেন সুষ্ঠু নিবার্চন হলে কোনো পক্ষেরই সহজ জয় পাওয়া সম্ভব হবে না। তবে সুষ্ঠু নিবার্চনের পথে বাধা সৃষ্টি করলে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা তৈরিরও আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তারা মনে করেন সুষ্ঠু নিবার্চনের পথে বিঘœ সৃষ্টি করলে তা সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

নিবার্চনের জন্য এরই মধ্যে সব ধরনের আইনগত জটিলতা দূর হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ বলছেন, তারা আগামী মাচের্র মধ্যেই নিবার্চন আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে ভোটার তালিকার কাজ চ‚ড়ান্ত পযাের্য় নিয়ে এসেছেন কতৃর্পক্ষ। সময়োপযোগী করতে গঠনতন্ত্রও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটি ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ১৩টি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামত লিখিতভাবে গ্রহণ করেছেন।

নিবার্চনের উদ্যোগকে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলসহ বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে তারা এটাও বলছেন, ’৯০-এর ডাকসু নিবার্চনের পর ১৯৯১, ৯৪, ৯৫ এবং ২০০৫ সালেও নিবার্চনের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ এমনকি নিবার্চনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও নানা অজুহাত দেখিয়ে সে নিবার্চন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মূলত ক্ষমতাসীন এবং

প্রধান বিরোধী ছাত্র সংগঠনের মধ্যকার বৈরিতা ওই নিবার্চন না হওয়ার পেছনে দায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে। বতর্মানেও ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী হিসেবে আগের ছাত্র সংগঠন দুটিই বহাল রয়েছে। রাজনৈতিক বাস্তবতাও দুই পক্ষকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি দূরে নিয়ে গেছে। এ অবস্থায় পাশাপাশি থেকে একটি সুষ্ঠু নিবার্চন আয়োজনে তারা কতটা প্রশানসকে সহায়তা করবে তার ওপরই নিভর্র করছে ডাকসু নিবার্চন।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করছেন এবার তারা সফল হবেন। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনও নিবার্চনের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে বামপন্থিসহ বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো দাবি করছে তারা অংশগ্রহণমূলক, সহাবস্থানের নিশ্চয়তা, সমান সুযোগ এবং পেশিশক্তি মুক্ত পরিবেশে নিবার্চন চান। যদিও এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন বিরোধীদের ক্যাম্পাসে আসার ক্ষেত্রে ছাত্র-অছাত্র ইস্যুতে শতর্ আরোপ করছে। আর এ ধরনের শতর্ সুষ্ঠু নিবার্চনের পথে অন্তরায় বলে মনে করেন অনেকেই। একই সঙ্গে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের ক্যাম্পাসে কাযর্ক্রম পরিচালনার বিষয়েও তাদের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সরকার সমাথির্ত ছাত্র সংগঠনের এমন মনোভাবের মধ্যে নিবার্চন হলে ক্যাম্পাসের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সাধারণ শিক্ষাথীের্দর কাছ থেকে নানা ধরনের মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এবং ক্যাম্পাসে বামপন্থি গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী যায়যায়দিনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং হলগুলোতে ভয়ভীতি ও দখলদারিত্বের পরিবেশ পুরো মাত্রায় বতর্মান। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাদে অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকমীর্রা হলে অবস্থান করতে পারছেন না। সাধারণ ছাত্রদের অবস্থা আরো খারাপ। যারা আছে তারা এক ধরনের দাসত্ব বরণ করে আছে। আমরা অবশ্যই নিবার্চন চাই। এ জন্য দীঘর্ আন্দোলন করেছি। তবে তা হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং ভীতিহীন পরিবেশে। নিবার্চন হতে হবে ছাত্রদের স্বাথের্। কোনো দল বা মতের ক্ষমতা বাড়াতে নয়। স্বচ্ছ, ভীতিহীন পরিবেশে যেই নিবাির্চত হয়ে আসুক আমরা সকলেই তাকে স্বাগত জানাতে চাই। কিন্তু জোর জুলুম করে আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদের নেতা হিসেবে মানতে বাধ্য নয়।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকী যায়যায়দিনকে বলেন, ‘বতর্মান উপাচাযর্ স্যার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখি। তবে প্রশাসনের শুধু উদ্যোগ নিলেই হবে না। সকলের অংশগ্রহণ এবং ভীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করাও তাদের কাজ। আমরা বিশ্বাস করি বতর্মান উপাচাযর্ স্যার সেটি করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন এবং ছাত্রদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করবেন। তা না হলে এ নিবার্চনের আয়োজনটিই ব্যথর্ হয়ে যাবে। বতর্মান উপাচাযর্ যদি একটি সুন্দর নিবার্চন উপহার দিতে পারেন, তবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। আর এটি যদি কোনো পাতানো নিবার্চন হয় তবে তা কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।’

ডাকসু নিবার্চন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমরা চাই সব ছাত্র সংগঠন নিজেদের জায়গা থেকে নিবার্চনে অংশ নিক। ক্যাম্পাসে অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। কেউ সেটা নষ্টের চেষ্টা করবেন না বলেই আমরা মনে করি। সকলে অংশ নিলে একটি ভালো নিবার্চন হবে।’

ছাত্রদলের বিষয়ে আপনাদের মনোভাব কী? এমন প্রশ্নে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই সকলে নিবার্চনে অংশ নিক এবং ছাত্ররাই অংশ নিক। যারা ছাত্র না তারা ক্যাম্পাসে এসে কোনো বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করুক আমরা তা চাই না।’

তবে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের বক্তব্যকে স্ববিরোধী বলে মনে করেন ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকী। তার মতে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এবং ঢাবি শাখার বেশিরভাগ নেতাও নিয়মিত ছাত্রত্ব অথার্ৎ মাস্টাসর্ শেষ করেছেন। সে অথের্ তারাও আর ছাত্র নয়।

দীঘির্দন ডাকসু নিবার্চনের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষাথীর্ অধিকার মঞ্চের আহŸায়ক বীর বাহাদুর যায়যায়দিনকে বলেন, ‘নিবার্চন হবে এটা ভালো। কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা তাদের ইচ্ছামতো নেতা বেছে নিতে পারবে কিনা এটাই বড় বিষয়। বতর্মান পরিবেশে শান্তিপূণর্ সুষ্ঠু নিবার্চন কতটা সম্ভব তা সময়ই বলে দেবে।’

ডাকসু নিবার্চন আয়োজনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ অধ্যাপক আখতারুজ্জামান যায়যায়দিনকে বলেন, ‘অতীতে কী হয়েছে সে ইতিহাস ঘঁাটাঘঁাটি বড় বিষয় নয়। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য গঠিত কমিটি কাজ করছে। আশা করি, সবকিছু ঠিক থাকলে যথাসময়ে নিবার্চন হবে।’

প্রসঙ্গত, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯২২-২৩ শিক্ষাবষের্ ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সৃষ্টি হয়। মোট ৩৬ বার এ নিবার্চন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৪৮ বছরে মাত্র সাতবার ডাকসু নিবার্চন হয়েছে। ডাকসুর সবের্শষ নিবার্চন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। এরপর ৯১, ৯৪, ৯৫ ও ২০০৫ সালে তফসিল, এমনকি নিবার্চনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও কিছু সহিংস ঘটনা, সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকা ও ছাত্র সংগঠনের বিরোধিতা ইত্যাদি কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘শিক্ষাথীর্ অধিকার মঞ্চ’ থেকে বিক্ষোভ, ধমর্ঘট, কালো পতাকা মিছিলের মাধ্যমে ডাকসু নিবার্চনের দাবি জানান সাধারণ শিক্ষাথীর্ ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকমীর্রা। আদালতে মামলার কারণে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে এ দাবি আবার সামনে আসে। ওই বছরের ২৯ জুলাই ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া উপাচাযর্ প্যানেল নিবার্চনকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও শিক্ষাথীের্দর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। যা ঢাবি প্রশাসনকে তীব্র সমালোচনার মুখে ফেলে। শিক্ষাথীের্দর আন্দোলন, রাষ্ট্রপতির নিদের্শ এবং আদালতের চাপের মুখে ২০১৮ সালে এসে বতর্মান উপাচাযর্ ২০১৯ সালের মাচের্র মধ্যে নিবার্চন আয়োজনের ঘোষণা দেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32395 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1