শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসবে জনপ্রিয় হচ্ছে ইপিডুরাল

জাহিদ হাসান
  ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

দেশে গভর্বতী মায়েদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ইপিডুরাল বা ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব পদ্ধতি। পাশ্বর্প্রতিক্রিয়াহীন ও ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় এ সেবাটির ব্যয়ভার কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা। একই সঙ্গে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার পরামশর্ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

প্রসূতি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গভর্বতী মায়েদের মনে প্রসবকালীন ব্যথার ভয় বেশি কাজ করে। আর এই সুযোগ নিয়ে কষ্ট লাঘবের আশ্বাস দিয়ে সিজারের পরামশর্ দেন অনেকে। এ কারণে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সিজারিয়ান শিশু জন্মদান। গত দশ বছরে বাংলাদেশে অস্ত্রোপচারের (সিজার পদ্ধতি) মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পঁাচ গুণ। সিজার-পরবতীর্ সময়ে মায়েদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নারীদের দীঘের্ময়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি নানা ধরনের পাশ্বর্প্রতিক্রিয়াও বাড়ছে। ফলে ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসবে রোগীর চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ইপিডুরাল পদ্ধতি গ্রহণ মা ও নবজাতকের জন্য সহায়ক হবে বলছেন চিকিৎসকরা।

এ সম্পকের্ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্ অ্যান্ড গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সালমা রউফ যায়যায়দিনকে বলেন, ইপিডুরাল পদ্ধতিতে শরীরের কোনো অংশ কাটাছেঁড়া করতে হয় না। মায়েরা স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করতে পারেন। এতে সবকিছুই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রেখে সন্তান ডেলিভারি করানো হয়। কোনো সিজার বা অস্ত্রোপচারের দরকার পড়ে না। এ প্রক্রিয়ায় অন্যান্য স্বাভাবিক প্রসবে মায়েদের শরীরে যে তীব্র ব্যথা হয় এখানে সেই ব্যথাও সইতে হয় না। প্রসূতি মা কোনো ধরনের ব্যথা-বেদনা অনুভব ছাড়াই স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করেন। পদ্ধতিটিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন অ্যানেস্থেসিয়া (অবেদন বা অসাড়করণ)। এক্ষেত্রে প্রসবজনিত ব্যাথার শুরুতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক প্রসূতির কোমরের নিদির্ষ্ট স্থানে একটি ছোট ইনজেকশন দিয়ে থাকেন।

চিকিৎসকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, উন্নত বিশ্বে সিজারকে অনুৎসাহিত করতে ইপিডুরাল ডেলিভারি সিস্টেম চালু হয়েছে বহু বছর আগে। দেশের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেও এ পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গত বছরের এপ্রিল মাসে রাজধানীর তেজগঁাওয়ের ইমপালস হাসপাতালসহ কয়েকটি চিকিৎসাকেন্দ্র এটি চালু করেছে। সেখানে রোগীদের পদ্ধতিটির গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ সালের শুরুতে (১ জানুয়ারি) ইউনিসেফের দেয়া তথ্য অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম দিনেই বাংলাদেশে অন্তত ৮ হাজার ৪২৮ শিশু জন্ম নিয়েছে। এমনকি ওই দিন সারাবিশ্বে যে পরিমাণ শিশুর জন্ম হয়েছে (অন্তত ৩ লাখ ৯৫ হাজার ০৭২ জন শিশু) তার মধ্যে ২ দশমিক ১৩ শতাংশের জন্ম হয়েছে বাংলাদেশে। পাশাপাশি ইউনিসেফের তথ্যে এও বলা হয়েছে যে ২০১৭ সালে প্রায় ১ মিলিয়ন শিশু জন্মের দিনই মৃত্যুবরণ করে। ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন শিশু প্রাণ হারায় তাদের জন্মের মাসেই। যাদের বেশির ভাগই জন্মদানের সময়ের জটিলতা যেমন; মায়ের প্রসবকালীন ব্যাথা সহ্য করতে অক্ষম হওয়ায় গভের্র সন্তানের পজিশন পরিবতর্ন, অপরিণত বয়সে জন্ম, নিউমোনিয়ার মতো ইনফেকশনজনিত কারণ। অথচ এমন সব সমস্যা প্রতিরোধযোগ্য ছিল।

ইপিডুরালের সুবিধা বিষয়ে রাজধানীর মোহাম্মাদপুরে কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও বিএসএমএমইউ’র অবস্ অ্যান্ড গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক পারভিন ফাতেমা যায়যায়দিনকে বলেন, দিন দিন এই চিকিৎসার চাহিদা বাড়ছে। সচেতন নারীরা এখন ব্যথামুক্ত প্রসবের জন্য ইপিডুরাল পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন। কারণ এই পদ্ধতিতে রোগী কোনো ধরনের ব্যথা অনুভব করেন না। স্বাভাবিক হঁাটাচলা করতে পারেন। ওয়াশরুমে যেতে পারেন। গভর্বতী মা তার পেটে সন্তানের মুভমেন্ট বুঝতে পারেন। এমনকি প্রসবকালীন সময়ে বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে আসার মাধ্যমে ঝঁুকিমুক্ত ও সহজ প্রসব হয়ে থাকে।

পদ্ধতিটির পাশ্বর্প্রতিক্রিয়া সম্পকের্ এই চিকিৎসক জানান, এটা একটি লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া, যা কোমরের নিদির্ষ্ট জায়গাজুড়ে লোকালি কাজ করে। ফলে পদ্ধতিটির কোনো প্রকার পাশ্বর্প্রতিক্রিয়া বা জটিলতার সৃষ্টি হয় না। তবে এই ইনজেকশন দেয়ার পর রোগীকে মনিটরিংয়ে রাখতে হবে। বাচ্চার হাটির্বট, মায়ের জরায়ুর অবস্থা, জরায়ুর মুখ কেমন খুলে গেল পযের্বক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া সতকর্তা অবলম্বনের ক্ষেত্রে ইপিডুরাল দেয়ার ফলে মায়ের বøাড প্রেসারসহ অন্য সব দিকগুলো ঠিক আছে কিনা সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের আরেক চিকিৎসক যায়যায়দিনকে বলেন, ইপিডুরাল পদ্ধতিটি লেবার পেইন মডিফায়েড বলে এ ধরনের সেবা পাওয়া এক ধরনের চিকিৎসা অধিকার। দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এটি প্রমোট করা দরকার। এই মুহ‚তের্ ঢামেকে ভতির্ থাকা সন্তানসম্ভবা মায়েদের শতকরা ৫০ ভাগ স্বাভাবিক এবং ৫০ শতাংশ সিজারের মাধ্যমে প্রসব হচ্ছে। এটি চালু করলে নরমাল ডেলিভারি বাড়বে সিজার কমবে। তবে এ প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক প্রসব হলেও মনে রাখতে হবে সন্তান জন্মদানকালীন কিছুটা ব্যথাবেদনা পোহাতে হবে এটাও স্বাভাবিক। আরেকটি ব্যাপার হলো যেহেতু এটা লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া, তাই কখনো মায়ের বøাড প্রেসার ফল করতে পারে। এ ছাড়া অ্যানেস্থে’সিয়া দেয়ার পরও ৯০ ভাগ হয়তো ব্যথামুক্ত হয়েও ১০ ভাগ ব্যথা করতে পারে। তবে সিজার কমানো ও ব্যথা হ্রাসের মাধ্যমে সাধারণ ডেলিভারির জন্য ইপিডুরাল সম্পকের্ সচেতনতা বৃদ্ধির দরকার। এ জন্য পযার্প্ত ও দক্ষ অ্যানেসথিয়েস্ট চিকিৎসক, সাপোটির্ং স্টাফ ও পেশেন্ট মনিটরিং জনবলও তৈরি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32513 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1