শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি পুনগর্ঠনের দাবি জোরালো হচ্ছে

যাযাদি রিপোটর্
  ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে ‘ভরাডুবির’ পর দল পুনগর্ঠনের দাবি উঠেছে বিএনপিতে। মহাসচিবসহ গুরুত্বপূণর্ পদে পরিবতর্ন চাইছেন দলের নেতারা।

জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে প্রায় একযুগ আগে বহিষ্কৃত হন শাজাহান মিয়া সম্রাট। তারপরও বিএনপির সভা-সমাবেশ- প্রেস কনফারেন্সে সক্রিয় তিনি।

নিবার্চনের পর বিএনপি নেতাকমীের্দর অবস্থা সম্পকের্ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সরকার নিবার্চনের নামে তাদের ক্ষমতা নবায়ন করেছে। আমাদের নীতি নিধার্রকরা কৌশলগতভাবে ফেল করেছে। আমাদের নেতাকমীের্দর অবস্থা ভালো নেই। এখন আমাদের দলের মহাসচিব পরিবতর্ন হওয়া দরকার। একজন শক্ত সাংগঠনিক লোককে মহাসচিব করা দরকার। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের নীতি নিধার্রক পযার্য় থেকে তৃণমূল পযর্ন্ত পুনগর্ঠন হওয়া দরকার।’

তিনি বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গত একযুগ ধরে বহিষ্কৃত। আশা করি দল পুনগর্ঠন হলে আমি কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক নিবাির্চত হব।’

দল পুনগর্ঠন প্রশ্নে বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের খপ্পরে পড়ে বিপযর্স্ত হয়ে পড়েছে বিএনপি। দল পুনগর্ঠনের জন্য যে পরিবেশ দরকার সে পরিবেশ এখন দেশে বিদ্যমান নেই। পুনগর্ঠন আমরা কাদের দিয়ে করব? নেতাকমীর্রা তো এলাকা ছাড়া। মিথ্যা মামলায় তারা ফেরারি হয়ে ঘুরছে। ঢাকায় ঘুরছে কিন্তু জামিন হচ্ছে না। তাদের যদি আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে না পারি তাহলে কীভাবে আমরা দল পুনগর্ঠন করব। আমাদের দল পুনগর্ঠন তো তৃণমূলের নেতাকমীের্দর দিয়েই করতে হবে। তারাই যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পারে তাহলে কাদের দিয়ে করব? তারপরও সেটা আমরা মাথায় রাখছি। এসবের পাশাপাশি আমাদের চিন্তায় আছে দল পুনগর্ঠনে সবার আগে আমাদের প্রয়োজন নেতাকমীের্দর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। জামিনের ব্যবস্থা করা, এলাকায় অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করা।’

তিনি বলেন, ‘সবার আগে নেতাকমীের্দর পাশে দঁাড়াতে হবে। এরপরই আমরা দল পুনগর্ঠনের কথা চিন্তা করতে পারি।’

নাম প্রকাশ না করার শতের্ বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘নিবার্চনের পর আমাদের নেতাকমীের্দর মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, দল বিপযর্স্ত। এসবের দায় দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির নেতারা এড়াতে পারেন না। তাছাড়া শোনা যাচ্ছে, মহাসচিব সংসদে যোগ দেয়ার জন্য বিদেশি ক‚টনীতিকদের মাধ্যমে তারেক রহমানের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছেন। কেউ বা তাদের ব্যবসা ধরে রাখার ফায়দা অঁাটছেন। সাবির্ক বিষয় বিবেচনা রেখে দল পুনগর্ঠন হওয়া দরকার। তবে অসম্মানজনকভাবে কাউকে বিদায় দেয়া উচিত হবে না। আগামী মাচের্ কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ উত্তীণর্ হতে চলেছে। আগামী জুন-জুলাইতে কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে এসব পরিবতর্ন আনলে দলকে গতিশীল করা সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব রাজনীতিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বয়স্করা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন- সেটা বিবেচনায় রেখে নীতি নিধার্রণী ফোরাম, দলের মুখপাত্র, দপ্তর, চেয়ারপারসনের কাযার্লয় সবর্ত্র পুনগর্ঠন হওয়া উচিত।’

জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, ‘আমি মনে করি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল পুনগর্ঠন হবে। দল শক্তিশালী করতে হলে শক্তিশালী মানুষ দরকার।’

দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান বলেন, ‘দলের সব পযাের্য় পুনগর্ঠন সব সময়ই হয়, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। গত দশ বছরে অত্যাচার, নিযার্তন, গুম, খুন, হামলা-মামলায় নেতাকমীর্রা বিপযর্স্ত। বলা যায়, এ সময়ে ১০ হাজার নেতাকমীর্ খুন হয়ে গেছে। ১০ লাখ পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে এ রকম দেখা যায় না। এটা ইতিহাসে বিরল। এরমধ্যে দলের পুনগর্ঠন জরুরি। কারণ সম্পূণর্ভাবে ভোটের অধিকারকে জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে রাতের অন্ধকারে সিল মেরে এ সরকার প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। এরপর আমাদের দলকে শক্তিশালী করাটাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব এবং কতর্ব্য মনে করছি। আমরা সব সময় মনে করি বিএনপি জনগণের দল, জনগণের সুখে-দুখে বিএনপি পাশে থাকবে, পাশে ছিল, পাশে আছে। অতএব ভবিষ্যতেও জনগণের পাশে থাকতে হলে, জনগণের কাছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হলে, জনগণের কাছে রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হলে এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হলে, জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে সে অবস্থাটা ফিরিয়ে আনতে হলে বিএনপিকে শক্তিশালী দল হিসেবে সক্রিয় থাকতে হবে। তার জন্য আমরা মনে করি এ মুহূতের্ আমাদের প্রথম কাজ হলো দল পুনগর্ঠন।

তিনি আরও বলেন, ‘সব জায়গাতেই নতুন পুরাতনের সমন্বয় থাকা উচিত। অভিজ্ঞ এবং নবীনদের সমন্বয় থাকা উচিত। শুধু যদি অভিজ্ঞরা থাকে বা পুরাতনরা থাকে তাহলে যেমন চলে না। আবার শুধু নতুনদের দিয়েও চলে না। অভিজ্ঞ এবং নতুনদের সমন্বয় রেখেই চলতে হয়। যখনই পুনগর্ঠন হয় তখনই কিন্তু পুরাতনদের সঙ্গে নতুনদের জায়গা হয়। স্বাভাবিকভাবেই ধরুন, আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির এখন প্রায় অধের্ক পদ খালি আছে। কারণ অনেকেই মারা গেছেন। পদ প্রথম থেকেই পূরণ করা হয়নি। কাজেই যারা অভিজ্ঞ আছেন তাদের অভিজ্ঞতা যেমন আমাদের কাজে লাগাতে হবে, তেমনি নতুনদেরও জায়গা দিতে হবে। শুধু স্থায়ী কমিটি না; সব কমিটিই নতুন পুরনোদের সমন্বয়ে গঠিত হওয়া উচিত। এর মধ্য দিয়েই দলটাকে শক্তিশালী করতে হবে আগামী দিনে জনগণের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য।’

দল পুনগর্ঠন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘হ্যঁা, দল পুনগর্ঠন হওয়া উচিত। আমিও তাই মনে করি। আমি মনে করি, একেবারে গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে গ্রাসরুট থেকে টপ পযর্ন্ত যাদের জনসম্পৃক্ততা আছে তাদের নিয়ে পুনগর্ঠন হওয়া উচিত। কারণ জনসম্পৃক্ততা গুরুত্বপূণর্।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32689 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1