শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি পুনগর্ঠনের দাবি মোশাররফ-মওদুদের

যাযাদি রিপোটর্
  ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে রাজধানীর সুপ্রিম কোটর্ বার মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর Ñযাযাদি

একাদশ নিবার্চনে ফল বিপযের্য়র পর কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্বে পরিবতের্নর দাবি উঠেছে। দলের সবোর্চ্চ নীতিনিধার্রণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যের কাছ থেকে। শুক্রবার বিকালে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমদের বক্তব্যে সরাসরি দল পুনগর্ঠনের আহŸান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যের ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপিকে ঘুরে দঁাড়াতে হবে। ঘুরে দঁাড়াতে হলে দলকে পুনগর্ঠন করতে হবে। ২০০৮ সালে এমনিভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিএনপি পরাজিত হয়েছিল। তারপর কিন্তু আমরা দলের কাউন্সিল করে ঘুরে দঁাড়িয়েছিলাম এবং সারা দেশে আমাদের নেতাকমীর্রা সাহসের সাথে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। সেটার প্রমাণ ৩০ তারিখে সে সরকার ভোট করতে সাহস পেল না।’

তিনি বলেন, ‘একটি কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে পুনগর্ঠন করতে হবে। তুলনামূলকভাবে ত্যাগী এবং এই নিবার্চনে যারা পরীক্ষিত নেতাকমীর্ তাদের নেতৃত্বে আনতে হবে। আমরা যারা ব্যথর্ বলে পরিচিত হয়েছি তাদের পদ ছেড়ে দিতে হবে তরুণদের জন্য। তাহলেই বিএনপি ঘুরে দঁাড়াবে।

কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনের ধানের শীষের প্রাথীর্ খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির মাকাের্ক, বেগম খালেদা জিয়ার মাকাের্ক ভয় পায়। তারা যে ভয় পায় তার বড় প্রমাণ, ৩০ তারিখে জনগণকে কেন্দ্রে আসার সুযোগ দেয়নি, ২৯ তারিখ রাতে ভোটের কাজ শেষ, ভোটের ডাকাতি শেষ। জনগণের অধিকারকে ডাকাতি করা হয়েছে। আজকে যারা বলেন বিএনপি পরাজিত হয়ে এসেছে। তিনি পরাজিত হয়ে এসেছেন

বলে মানতে পারেন না। তারা মনে করেন জনগণের কাছে তারা বিজয়ী হয়েছেন, নৈতিকভাবে বিএনপি ও ধানের শীষ বিজয় হয়েছে। আর নৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। জনগণের মাঝে তাদের এই বিজয়কে ধরে রাখতে হবে। তাদের প্রাথীর্রা, নেতাকমীর্রা হতভম্বিত, ভাষা নেই তাদের। তাদের অবশ্যই ঘুরে দঁাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, দলকে পুনগর্ঠন করতে হবে। তাহলে বিএনপি ঘুরে দঁাড়াবে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদশর্-দশর্ন এদেশের মানুষ গ্রহণ করেছে, সময়ের পরীক্ষায় উত্তীণর্ সাময়িক কিছু সমস্যা হয়েও থাকে কিংবা একটু হতভম্ব হয়েও থাকি এ সময়টা কাটিয়ে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। দাঁড়াতে পারলেই জাতীয়তাবাদী দল শক্তিশালী করে জিয়ার আদশর্ সফল করার জন্য আমরা যদি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই তাহলেই তার জন্মবাষির্কী সফল হবে।

মওদুদ আহমদ বলেন, নতুন করে দলকে আবার পুনগর্ঠন করতে হবে। যারা দুঃসময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা দলের জন্য কাজ করেছেন তাদেরকে সামনের দিকে এনে দলকে পুনগর্ঠন করতে হবে। দরকার হলে আমরা যাদের বয়স হয়ে গেছে সরে যাব। তারপরেও এই দলটাকে তো রাখতে হবে। এর একমাত্র উপায় হলো নতুন করে পুনগর্ঠন করা। এই কাজ আমাদের কয়েক মাসের মধ্যেই করতে হবে। তাহলেই আমরা আবার ঘুরে দঁাড়াতে পারব।

নিবার্চনের পরিস্থিতি তুলে ধরে নোয়াখালী-৫ আসনের প্রাথীর্ মওদুদ আহমদ বলেন, নিবার্চনের আগের দিন ৪০ শতাংশ ভোট ভরে দিতে হবে- এটা ছিল নিদের্শ। সেজন্য আমাদের সেই আশা, সেই প্রত্যাশা সম্পূণর্ভাবে ধূলিসাৎ হয়ে যায় ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ থেকে শুরু করে ২৯ ডিসেম্বর পযর্ন্ত। এমনকি নিবার্চনের আগের দিন পযর্ন্ত মামলা দিয়েছে। মামলা দিয়ে নেতাকমীের্দর সবাইকে এলাকা ছাড়া করেছে। কাকে নিয়ে নিবার্চন করব? কমীর্ ছাড়া নিবার্চন হয়, যুব দল-ছাত্র দল ছাড়া নিবার্চন সম্ভব?

তিনি বলেন, এটা একটা পূবর্পরিকল্পিত নীল নকশার উপর নিভর্র করে নিবার্চন হয়েছে। এটাকে নিবার্চন বলা চলে না। এটা কখনোই আমাদের সংবিধানসম্মত নিবার্চন হয় নাই। আজকে ৯৭ শতাংশ আসন মহাজোট পেয়েছে- এটা শুনলেই আপনি যদি নিউইয়কর্ টাইমস পড়েন, ওয়াশিংটন পোস্ট পড়েন, গাডির্য়ান পত্রিকা পড়েন, লন্ডনের অবজারভার পড়েন সারা দুনিয়াতে কেউ বিশ্বাস করে না এটা একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চন হয়েছে। এই নিবার্চনে চুরি হয়েছে, ভোট চুরির নিবার্চন হয়েছে। এই নিবার্চনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে নাই।

স্থায়ী কমিটির প্রবীণতম এই সদস্য বলেন, আমাদের ঠাÐা মাথায় চিন্তা করতে হবে। আমার কাছে মনে হয় আমাদের এখন দুই কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্। একটি হচ্ছে পনবার্সন। আমাদের সারাদেশে হাজার নেতাকমীর্ ও তাদের পরিবার গত দেড়মাস প্রচÐভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই নিবার্চন যাওয়ার কারণে। ?যদি আগে থেকেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত ছিলেন। তাদেরকে পুনবার্সন করতে হবে। এদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, এদের দেখাশুনা করতে হবে, আহতদের সেবা করতে হবে, তাদের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে হবে, যারা পুঙ্গ হয়ে গেছে তাদের সেবা করতে হবে, যাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে- এসব পুনবার্সন কমর্সূচি আমাদের দ্রæত নিতে হবে। কয়েক মাসের মধ্যে এই কমর্সূচি নিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে, সেই গণতন্ত্রকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আজকে সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। হতাশার কোনো জায়গায় নেই। অন্ধকারের মধ্য থেকেই আলোতে উঠে আসতে হবে। এখন তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে, যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। এই দেশটা রক্ষা করতে হবে। ভোটের অধিকার রক্ষা করতে হবে। যা জিয়াউর রহমান শিখিয়ে গেছেন। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া, পরাজিত না হওয়া। পরাজিত বোধ করলেই পরাজিত।

তিনি বলেন, পরাজিত হয়েছে আওয়ামী লীগ, সম্পূণর্ভাবে পরাজিত হয়েছে। তারা নৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে, তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, জনগণ থেকে একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এই নিবার্চন একটা কাজ করেছে যে, আওয়ামী লীগকে চিরদিনের জন্য মানুষের মন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, দলের যে সমস্ত ভাইয়েরা পঙ্গু হয়েছে, যারা কারারুদ্ধ হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পাশে দঁাড়াতে হবে। যে সমস্ত মায়েরা-বোনেরা নিযাির্তত হয়েছে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করে আনতে হবে। সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমগ্র দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দুবার্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে, ভাইদের মুক্ত করতে হবে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে- এই শপথ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে নেতাকমীর্র কম উপস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ?ওমর বীরোত্তম বলেন, কিছুদিন আগে আমাদের একটা বিপযর্য় হয়ে গেছে। এতে হতাশার কিছু নেই। আবার আমরা অবশ্যই ঘুরে দঁাড়াব।

তিনি বলেন, অনেকে জানেন ব্রিটেনের এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী মাগাের্রট থ্যাচারের কথা। তার সময়ে বিরোধী লেবার পাটির্ আমাদের মতো কারচুপির ভোটে নয়, সুষ্ঠু ভোটেই মাত্র ২৪ আসন পেয়েছিল। সেই লেবার পাটির্ সেখানে থেমে থাকেনি। একদিন সেই লেবার পাটির্ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, টনি বেøয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তাই হতাশার কিছু নেই। নেতাকমীের্দর বলব, হতাশ হবেন না।

তিনি বলেন, যারা বতর্মানে দলের নেতৃত্বে আছেন তাদেরকে আরও একটিভ হতে হবে। জিয়ার আদশের্ক ধারণ করে নেতৃত্বকে এগিয়ে নিতে হবে। এটা না করতে পারলে এই নেতৃত্বে থাকার প্রয়োজন নেই।

সুপ্রিম কোটর্ আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৪তম জন্মদিন উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি। সুপ্রিম কোটের্র এই আলোচনা অনুষ্ঠানে নেতাকমীের্দর উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। নিবার্হী কমিটির কয়েকজন ছাড়া কেউই ছিলেন না। মিলনায়তনে অধের্ক আসনই ছিল খালি। প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, আবদুল মান্নান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিনসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32848 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1