শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
একলা চলো নীতি

আ’লীগের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে শরিকদের

আসন বণ্টন থেকে শুরু করে এ পযর্ন্ত আওয়ামী লীগের আচরণে জোট শরিকরা ক্ষুব্ধ। কোনো কিছু নিয়েই শাসকদল তাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি
ফয়সাল খান
  ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আর মাত্র ১১ দিন পরেই বসছে একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন। অথচ এই সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে ধেঁায়াশা কাটছে না। মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়া বা বিরোধী দলে থাকার ব্যাপারে এখনো শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেনি আওয়ামী লীগ। তবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের শীষর্ নেতারা এসব বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। তাছাড়া উপজেলা নিবার্চনসহ নানা ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ‘একলা চল’ নীতিতে বিপাকে পড়েছে দীঘির্দনের জোট মিত্ররা। এ নিয়ে তৃণমূলে জোটের নেতাকমীের্দর মধ্যেও দূরত্ব বাড়ছে। বিশেষ করে জাতীয় পাটির্ ছাড়া অন্য শরিকদলগুলোর নেতাকমীর্রা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন।

খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার পর আওয়ামী লীগের শীষর্ পযার্য় থেকে ঘর গোছানোর ব্যাপারে শরিকদের ইঙ্গিত দেয়া হয়। তাছাড়া শরিক দলগুলোকে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করারও পরামশর্ দেয়া হয়। তবে এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চায় দলগুলো।

সূত্রগুলো বলছে, সংসদের অধিবেশনের আগে জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা। শনিবার বিজয় সমাবেশের পর বৈঠক হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিশালী বিরোধী দল চান। সে কারণে শরিকদলগুলোকে নিজেদের সক্ষমতা বাড়তে বলা হচ্ছে। দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পরামশর্ দেয়ার পাশাপাশি বেশকিছু নতুন প্রস্তাবও দেয়া হবে।

এদিকে, বিশাল জয় পেয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো মহাজোট ক্ষমতায় আসলেও হতাশায় ভূগছে শরিকদলগুলো। কোনো কোনো নেতার ধারণা, আওয়ামী লীগ এককভাবে শক্তিশালী হওয়ায় জোটের অন্য শরিকদের পাত্তা দিচ্ছে না। আবার কৌশলের কারণে শরিকদের দূরে রাখতে পারে বলে মনে করছেন অনেক নেতা। তদের মতে, এসব বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। আলোচনা হলে আওয়ামী লীগের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। তবে ১৪ দলীয় জোট অটল আছে বলে জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহাজোটের অন্যতম শরিক ও ওয়াকার্সর্ পাটির্র সভাপতি রাশেদ খান মেনন যায়যায়দিনকে বলেন, মন্ত্রিসভায় না থাকায় নেতাকমীর্রা হতাশ নয়। তবে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। এক এবং অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল। সেই লক্ষেই অটল থাকতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদে দলের ভূমিকা কী হবে তা এখনো ঠিক করা হয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।

তাছাড়া আওয়ামী লীগের নিবার্চনের পূবর্ ও পরবতীর্ আচরণের করানে অনেক শরিক দলই ক্ষুব্ধ। এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলেও নাম প্রকাশ না করার শতের্ শরিক দলের শীষর্ কয়েকজন নেতা যায়যায়দিনকে জানান, আসন বণ্টন থেকে শুরু করে এ পযর্ন্ত আওয়ামী লীগের আচরণে তারা ক্ষুব্ধ। বিরোধী দলে থাকা লাগবে বা মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়া হবে শরিক দলের কোনো নেতার সঙ্গে এমন আলোচনা করা হয়নি।

বিগত সময়ে সরকারের মন্ত্রী ছিল এমন একটি দলের শীষর্ নেতার ভাষ্য, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) কি চাচ্ছে- তা আমরা জানি না। সরকার গঠনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। গণমাধ্যমের সংবাদে কিছু কিছু তথ্য জেনেছি।’

অপর একজন নেতা বলেন, ‘আমরা এক ও অভিন্ন মিশন নিয়ে জোট করেছি। এখন হঠাৎ করে তাদের একলা চল নীতিতে নেতাকমীর্রা নানা প্রশ্ন করছেন। আমরা কোনো উত্তর দিতে পারি না।’ তবে জোটের সব শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবতীর্ করণীয় ঠিক করতে চায় বেশিরভাগ নেতারা।

২০০৫ সালে জোট গঠনের পর থেকে তৃণমূল পযাের্য় শরিক দলের নেতাকমীের্দর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকমীের্দর ভালো সম্পকর্ গড়ে উঠে। কিন্তু এই সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় শরিক দলগুলোর সঙ্গে দূরুত্ব তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।

কয়েকটি দলের অভিযোগ, তাদের নেতাকমীের্দর এখন আর তেমন মূল্যায়ন করছে না আওয়ামী লীগ। এসব বিষয়ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায় তারা। তবে প্রথমে সরকারের লক্ষ্য বা কৌশল জানতে চায় দলগুলো।

নাম প্রকাশ না করার শতের্ আওয়ামী লীগের সম্পাদকমÐলীর এক সদস্য বলেন, গত ১২ জানুয়ারি দলের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে অথার্ৎ ১৪ দলের শরিকদের নিজের পায়ে দঁাড়ানোর পরামশর্ দিয়েছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এখন সরকারে। আমি চাই বিরোধী দলেও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি থাকুক।’ তিনি শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এর ফলে বিএনপির অনুপস্থিতিতে রাজপথে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।’

এ প্রসঙ্গে ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৪ দলীয় জোট থাকবে। তবে শরিকদের সরকারের ওপর নিভর্রশীল না থেকে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধির জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা সরকারের ত্রæটি-বিচ্যুতি ধরিয়ে দেবে, এটা প্রত্যাশা করি। এর ফলে বিরোধী দলের যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হবে। আর সেটা পূরণ করবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি।’ তিনি মনে করেন, ১৪ দলের শরিকরা মুক্তিযুদ্ধ ও অসা¤প্রদায়িক ইস্যুতে এক থেকে কথা বলবে। কারণ সা¤প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি কোণঠাসা হলেও তাদের এখনো নিমূর্ল করা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে ওয়াকার্সর্ পাটির্র সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আদশির্ক ঐক্যের ওপর ১৪ দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এক হয়েছিলাম। এখন কী করে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করি। ১৪ দলে থেকে বিরোধী দল হতে হবে, এটা স্পষ্ট নয়।’ আওয়ামী লীগ বিষয়টি তাদের কাছে স্পষ্ট করবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘একসঙ্গে থাকলে বিভিন্ন ইস্যুতে মতপাথর্ক্য হতে পারে, সেটা নিজ দলেও হয়। বাজেটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অতীতে আমরা মতামত দিয়েছি। তার অথর্ সরকারি জোটে থেকে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন নয়।’

খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, চার দলীয় জোট সরকারের শেষ দিকে ১১ দল মিলে বাম জোট গঠন করা হয়। জোটের অংশীদার ছিল সিপিবি, ওয়াকার্সর্ পাটির্, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, বাসদ (খালেক), বাসদ (মাহবুব), গণতন্ত্রী পাটির্, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পাটির্ ও শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল।

২০০৫ সালে এই জোটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হলে সিপিবি, বাসদের দুই অংশ এবং শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল ওই জোট থেকে বেরিয়ে যায়। অন্য সাতটি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠনে এগিয়ে যায়। এদের সঙ্গে যুক্ত হয় জাসদ (ইনু) ও ন্যাপ মোজাফ্ফর। গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। এই জোট বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে।

নবম সংসদ নিবার্চনের প্রাক্কালে প্রধান দুই জোটের কাছেই গুরুত্বপূণর্ হয়ে ওঠে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পাটির্। এরশাদ কখনো চারদলীয় জোট, কখনো ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে থাকার কথা বলে রাজনীতিতে নিজের অবস্থানকে গুরুত্বপূণর্ প্রমাণের চেষ্টা চালান। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নবম সংসদ নিবার্চনের তারিখ ঘোষণার পর এরশাদ ও খেলাফত মজলিসকে সঙ্গে নিয়ে মহাজোট গঠন করে ১৪ দলীয় জোট।

২০০৮ সালে সরকার গঠনের সময় বিএনপি জামায়াত সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করলেও ২০১৪ সালের নিবার্চন বয়কট করে তারা। একতরফা ওই নিবার্চনের পর প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে জাতীয় পাটির্। এর পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রিত্বও নেয় দলটির নেতারা। ফলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে এবার মন্ত্রিত্ব নেয়নি জাপার কোনো নেতা। মন্ত্রিসভা গঠনের আগেই প্রধান বিরোধী দলে থাকার ঘোষণা দেয় দলটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<33037 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1