শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিখোঁজ স্বামীর ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ কোথায় পাবেন ফজিলা বেগম?

যশোর প্রতিনিধি
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:০৮
আবদুল হানিফ মোল্লা

অথর্কষ্টকে সঙ্গী করে খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের মানুষ করছেন ফজিলা বেগম। অথচ স্বামীর নামে ব্যাংক একাউন্টে আছে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু এক যুগ ধরে স্বামী আব্দুল হানিফ মোল্লা নিখেঁাজ। স্বামীর সন্ধান আর টাকা তোলার উপায় খঁুজে ফিরে আজ হয়রান ফজিলা বেগম। বুকে কষ্ট চেপে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘যেখানেই যাই, সবাই বলে স্বামীর ‘ডেথ সাটিির্ফকেট’ নিয়ে আস। তাই এখন বুকে পাথর চেপে স্বামীর ডেথ সাটিির্ফকেট চাই।’ একথা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। যশোর শহরের রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে কোনোরকমে মাথা গঁুজে বাস করছেন ফজিলা। তার স্বামী আব্দুল হানিফ মোল্লা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণ গ্রামের মৃত কাদের মোল্লার ছেলে। সেনাবাহিনীর ল্যান্সনায়েক পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব চালাতেন। আর চার ছেলে মেয়ে নিয়ে যশোরে বসবাস করতেন। সব হারানো সেই দিনটির কথা মনে হলে আজও ভেঙ্গে পড়েন ফজিলা বেগম। দিনটি ১৬ ফেব্রæয়ারি ২০০৭। ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে বাসা থেকে বের হন আব্দুল হানিফ। এরপর আর তার কোনো সন্ধান মেলেনি। দু’দিন পর ট্যাক্সিক্যাবটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ঢাকার রাজমনি সিনেমা হলের পেছনে পাওয়া যায়। হানিফ মোল্লা নিখেঁাজের ঘটনায় লিঙ্কস ক্যাব (বিডি)’র কমর্কতার্ ওবায়দুল হক ২০০৭ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি ঢাকার কাফরুল থানায় একটি জিডি করেন। জিডি নং-১২৬৪, তাং-১৯.০২.০৭। ফজিলা বেগম বলেন, স্বামী হানিফ মোল্লা নিখেঁাজের খবরে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তিনি ঢাকায় ছুটে যান। থানা-পুলিশ বহু জায়গায় ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু স্বামীর সন্ধান মেলেনি। একদিকে, স্বামী নেই, অন্যদিকে ছোট ছোট চারটি সন্তান। উপায়ন্ত না পেয়ে ছুটেছেন স্বামীর সবের্শষ কমর্স্থলে। গেছেন খুলনার সোনালী ব্যাংক স্যার ইকবাল সড়ক শাখায়, যেখানে স্বামীর অবসর ভাতা গ্রহণের একাউন্ট। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। না পেয়েছেন স্বামীর সন্ধান, না পেরেছেন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে। অশ্রæসিক্ত কণ্ঠে ফজিলা জানান, কোনো রকমে দুটি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। একটি মেয়ে লেখাপড়া করছে। অথার্ভাবে ছোট ছেলেটির লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। সে এখন একটি দোকানে কাজ করে। স্বামী নিখেঁাজের পর খেয়ে না খেয়ে এই এক যুগ পার হচ্ছে তার। অথচ স্বামীর একাউন্টে লাখ লাখ টাকা পড়ে আছে। প্রতিমাসে পেনসনের টাকা ওই একাউন্টে জমা হচ্ছে। টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছে না। তিনি নমিনি হলেও কিছুই করতে পারছেন না। ব্যাংক কতৃর্পক্ষ বলছে, স্বামীর ডেথ সাটিির্ফকেট নিয়ে আসলে, তিনি টাকা পাবেন। ‘কিন্তু নিখেঁাজ স্বামীর ডেথ সাটিির্ফকেট কোথায় পাবেন তিনি? তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো বহু মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করেন। আমি কোনো টাকা পয়সা সাহায্য চাই না, আমার স্বামীর টাকা যাতে পেতে পারি, সেই ব্যবস্থা করে আমার ছেলে মেয়েদের বঁাচান।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে