শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিলাসবহুল গাড়ি মালিকের খেঁাজে মাঠে এনবিআর

একজন টিআইএনধারীর বিপরীতে ২০টি বিএমডবিøউ গাড়ি থাকার প্রমাণ আছে এনবিআরের কাছে বিশ্বব্যাংকের কমর্কতাের্দর শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ১২টি বিলাসবহুল গাড়ির কোনো হদিস নেই
আহমেদ তোফায়েল
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

দেশের ৯৩০টি বিলাসবহুল গাড়ির মালিকের ‘আয়কর রিটানর্’ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোডর্ (এনবিআর)। যুক্তি হিসেবে সরকারের রাজস্ব আদায়কারী এ সংস্থাটি বলছে, নিদির্ষ্ট গাড়ির বিপরীতে তাদের বিরুদ্ধে কর ফঁাকির যে অভিযোগ রয়েছে তা খতিয়ে দেখতেই এমন সিদ্ধান্ত।

এনবিআর কতৃর্পক্ষ জানিয়েছে, এ জন্য গাড়ির লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজ খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোটর্ অথরিটির (বিআরটিএ) সঙ্গে কাজ করবে জাতীয় রাজস্ব বোডর্। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পযর্ন্ত সব ধরনের বিলাসবহুল গাড়ির নিবন্ধনগুলো যাচাই করবে তারা। বিআরটিএর তথ্যমতে, দেশে এখন ৯৩০টি নিবন্ধিত বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে।

কর কতৃর্পক্ষ সাম্প্রতিক সময়ে যাচাই-বাছাই করে দেখেছে যে, একজন ই-টিআইএনধারীর বিপরীতে ১০ থেকে ২০টি বিলাসবহুল গাড়ি নিবন্ধিত রয়েছে। এর বেশিভাগ গাড়িই বিশ্বখ্যাত জামার্ন অটোমোবাইল কোম্পানি বিএমডবিøউ ব্র্যান্ডের।

এবিআরের কমর্কতার্রা বলছেন তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের মধ্যে যাদের একাধিক গাড়ি আছে আয়কর রিটানর্ জমার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মালিকই একটি গাড়ির হিসাব জমা দিয়ে থাকেন। কর ফঁাকি দিতেই তারা এই রাস্তা বেছে নিয়েছেন। অথচ আয়কর অডির্ন্যান্স ১৯৮৪ সালের আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তির যদি একাধিক গাড়ি থাকে তবে তাকে দ্বিতীয় গাড়ির জন্য আরও ৫০ শতাংশ বেশি কর দিতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোডের্র এক সদস্য (আয়কর) যায়যায়দিনকে বলেন, এসব বিলাসবহুল গাড়ির অধিকাংশ মালিকেরই একাধিক গাড়ি রয়েছে। একজন টিআইএনধারীর বিপরীতে ২০টি বিএমডবিøউ গাড়ি থাকারও প্রমাণ আছে। এনবিআরের ইনকাম ট্যাক্স উইংয়ের অধীনস্থ ‘দ্য সেন্ট্রাল সাভের্ জোন’ (সিএসজেড) ইতোমধ্যে বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। তারা মিলিয়ে দেখছে তাদের ট্যাক্স রিটানের্ দেয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল আছে কিনা।

তিনি আরও জানান, সিএসজেডের তথ্য খেঁাজার ক্ষেত্রে বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের নাম, ঠিকানা ও ই-টিআইএনের সঙ্গে বিআরটিএ থেকে পাওয়া তথ্যের মিল আছে কিনা তা গভীরভাবে পযের্বক্ষণ করছে। শুধু তাই নয়, কমর্কতার্রা ওইসব গাড়ির ব্র্যান্ড, মডেল, ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি, চেসিস নাম্বার, কেনা দাম ও বিক্রেতার নামও সংগ্রহ করছেন।

এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ’র ডাইরেক্টর সীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, বিআরটিএ কেবল নিবন্ধিত বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য সরবরাহ করেছে। তার প্রতিষ্ঠানের কমর্কতাের্দর তদন্তের পর গাড়ির চেসিজ নাম্বার পাল্টানোর কোনও সুযোগ নেই। আর ব্যাংকের মাধ্যমে গাড়িগুলোর যে অ্যাডভান্স ট্যাক্স সংগ্রহ করা হয় তা গাড়ির ইঞ্জিন ক্যাপাসিটির ওপর নিভর্র করে।

বিআরটিএর তথ্যমতে, ৯৩০টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধিত বিএমডবিøউ। দেশের রাস্তায় বতর্মানে ৪০৭টি নিবন্ধিত বিএমডবিøউ চলাচল করে। মাসিির্ডজ বেঞ্জ আছে ১৯৭টি, অডি আছে ১৮৫টি, জাগুয়ার ৫৬টি এবং ভলভো ব্র্যান্ডের গাড়ি আছে ৩৮টি।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড ভেহিকলস ইম্পোটাসর্ অ্যান্ড ডিলাসর্ অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন বলেন, বিআরটিএর দেয়া বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে। তিনি মনে করেন, দেশে নিবন্ধিত বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা ১ হাজারের ওপর হওয়া উচিত। তিনি আরও জানান, জাপানি অথবা ইউরোপিয়ান গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে এনবিআরের পক্ষ থেকে বিলাসবহুল গাড়ির সংজ্ঞা নিধার্রণ করা উচিত। একজন বিক্রেতা হিসেবে তার কাছেও ট্যাক্সের কাগজপত্র থাকে।

গত অক্টোবরে সিএসজেড কমর্কতার্রা দেশে বিলাসবহুল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নিবন্ধিত গাড়ির মালিকদের করের হিসাব নেয়ার উদ্যোগ নেয়। যুক্তি হিসেবে তারা বলছে, এসব গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে করদাতার নিবন্ধন করার সময় কর ফঁাকি দিতে আসল দাম ও ব্র্যান্ডের নাম লুকান। ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিএমডবিøউ, ভলভো, মাসিির্ডজ-বেঞ্জ, অডি, লেক্সাস জাগুয়ার, হামার, প্র্যাডো, পেট্রোল টাবোর্ ওয়াগন, ডিসকভারি ও হ্যারিয়ারসহ আরও বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড।

আয়কর আইন অনুযায়ী, যদি কোনও গাড়ির মালিকের গাড়ির ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ১ হাজার ৫০০ সিসি’র বেশি হয় তবে প্রতি বছর নিবন্ধন কিংবা রিনুয়্যালের সময় ১৫ হাজার টাকা অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়। আর গাড়ির ক্যাপাসিটির ওপর নিভর্র করে ট্যাক্স রেটও বাড়ে। যেমন- ২ হাজার সিসির জন্য ৩০ হাজার টাকা, ২ হাজার ৫০০ সিসির জন্য ৫০ হাজার টাকা, ৩ হাজার সিসির জন্য ৭৫ হাজার টাকা, ৩ হাজার ৫০০ সিসির গাড়ির জন্য ১ লাখ টাকা ও ৩ হাজার ৫০০ সিসির ওপরের গাড়িগুলোর জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বাৎসরিক অ্যাডভান্স ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের কমর্কতাের্দর ছেড়ে যাওয়া ক‚টনীতিক হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ১২টি বিলাসবহুল গাড়ির হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বিলাসবহুল ওই গাড়িগুলোর নথিপত্র শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে জমা দেয়া হলেও সেগুলো এখন কোথায় আছে জানে না ঢাকা শুল্ক কতৃর্পক্ষ। এসব গাড়ির বিপরীতে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাওনা রয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কমর্কতার্রা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন ক‚টনৈতিক মিশনে কমর্রত বিদেশি নাগরিকরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় (কাটের্ন ডি প্যাসেজ) গাড়ি নিয়ে থাকেন। ক‚টনৈতিক সুবিধা নিয়ে যাদের নামে এসব আমদানি করা গাড়ি আনা হয় দায়িত্ব পালন শেষে তাদের চলে যাওয়ার সময় তা শুল্ক কর্তৃর্পক্ষের কাছে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কাযার্লয়ের অনেক কমর্কতার্ দায়িত্ব পালন শেষে ঢাকা ছেড়ে গেলেও তারা গাড়ি ও গাড়ির পাসবুক জমা দিয়ে যাননি।

২০১৭ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি একটি চিঠি দিয়ে এরকম ১৬টি গাড়ির নথিপত্র তলব করে বিশ্বব্যাংককে সাত দিন সময় দেয় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। চিঠি পেয়ে গাড়িগুলোর তথ্য দিতে ছয় মাস সময় চায়। পরে তারা শুল্ক পরিশোধ করে চারটি গাড়ি ছাড়িয়ে নেয়। অপর গাড়িগুলোর বিষয়ে বিশ্বব্যাংক এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

শুল্ক গোয়েন্দার ওই চিঠিতে বলা হয়, শুল্ক সুবিধায় আনা গাড়ির বিপরীতে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অনাদায়ী রয়েছে। এটি শুল্ক আইন অনুযায়ী দÐনীয় অপরাধ। ১৯৬৯ সালের শুল্ক আইনে এবং ২০১২ সালের অথর্ পাচার প্রতিরোধ আইনে এ ধরনের অপরাধের বিস্তারিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা যেকোনো সময় এসব গাড়ি জব্দ করতে পারে।

শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আনা ওইসব কমর্কতার্ হলেনÑ বিশ্বব্যাংকের আইএফসি উইংয়ের কমর্কতার্ প্রমিতা দাস গুপ্ত (এজব ০৭৭), শুকন্তলা আকমিমানা (এজে ২৭-০৪৩), ক্যাথিনোয়ের খু (ডিএ ৪০২৫), বিনয় সরূপ (এজে ২৭-০৪২), ওসমানি সেকেল (এজব ০৬৩), জোস অ্যাডগাডোর্ লোডেজকামডস (এজে ২৭-০৪৩), মিরভা তুলিয়া (এজব ০৭১), দায়িদ (ডিএ ৪১-০৪৩), মি. গ্রিনা ইগরচায়না নিকডর বকরগার (এজেজে ২৭-০৩১), মৃদুলা সিং (এজেটি ০৬৮), তাহসীন সৈয়দ খান (এজব ০৬৮), মায়োমি ইসোগায়েন (জিআরই ০৫৬), মিস তানিয়া মানা ডি মাইতারাজকো (ডিএ ৩১-০৫), সেরেন ওজের (এজট ০৩০), ফাবিকো পিতালুগা (একেডি-২৮১) ও হেলেন জয় ক্রেক (ডিএ ০৪১)। এর মধ্যে ফিনল্যান্ডের নাগরিক মিভার্ তুলিয়া ও ভারতের নাগরিক মৃদুলা সিংয়ের গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের হাতে তুলে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। পরে আরও দুটি গাড়ি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় শুল্ক পরিশোধ করে ছাড়িয়ে নেয়। অপর ১২টি গাড়ির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<36570 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1