শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সোহরাওয়ার্দীতে অগ্নিকাÐ

হাসপাতাল আংশিক চালু রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন

তবে আগুনে শিশু ওয়াডর্ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আপাতত এই হাসপাতালে শিশু রোগীদের ভতির্ করা হচ্ছে না
যাযাদি রিপোটর্
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০৮
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়াদীর্ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আংশিক কাযর্ক্রম শুক্রবার চালু হয়েছে। বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর সরিয়ে নেয়া রোগীরা ফিরতে শুরু করেছেন Ñযাযাদি

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়াদীর্ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আংশিক চালু হয়েছে। আগুন লাগার কারণে সরিয়ে নেয়া রোগীদের অনেকেই আবার হাসপাতালে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে আগুনে শিশু ওয়াডর্ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আপাতত এই হাসপাতালে শিশু রোগীদের ভতির্ করা হচ্ছে না। শুক্রবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে এবং কতৃর্পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এ কথা জানা গেছে। আগুন লাগার পর বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তরিত রোগীদের সোহরাওয়াদীর্ হাসপাতালে ফিরে আসার আহŸান জানিয়েছেন সেখানকার কতৃর্পক্ষ। সকালে নিচতলার জরুরি বিভাগের সামনে কথা হচ্ছিল যশোরের নায়েম আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, আগুন লাগার পর তিনি ও অন্য স্বজনরা মিলে তার বাবাকে পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সকালে বাবাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। নায়েম জানান, সোহরাওয়াদীর্ থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে গেছেন এমন ৭-৮ জন রোগীকে তিনি সকালেই ফিরে আসতে দেখেছেন। হাসপাতালের সামনে দঁাড়িয়ে দেখা গেল, কেউ অ্যাম্বুলেন্সে করে, কেউ সিএনজি বা রিকশায় করে রোগীদের নিয়ে হাসপাতালে ফিরে আসছেন। হাসপাতালের আইসিইউ, এনআইসিইউ, অপারেশন থিয়েটার, জরুরি বিভাগ এবং বেশ কয়েকটি ওয়াডর্ পুরোদমে চালু হয়েছে। তবে শিশু ও মহিলা ওয়াডর্ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে শিশু ওয়াডর্ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আপাতত শিশুদের ভতির্ করা হচ্ছে না। হাসপাতালের পরিচালক উত্তম বড়ুয়া সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালটি পুরোদমে চালু করার কাজ চলছে। বেশির ভাগ অংশ চালু হয়েছে। তিনি বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তরিত রোগীদের ফিরে আসারও আহŸান জানান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে হাসপাতালটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সাভিের্সর চেষ্টায় তিন ঘণ্টা পর আগুন সম্পূণর্ নিয়ন্ত্রণে আসে। হাসপাতালে থাকা প্রায় এক হাজার ২০০ রোগীকে তাৎক্ষণিকভাকে বিভিন্ন হাসপাতালে সরিয়ে নেয়া হয়। পাশের কেয়ার হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ জানিয়েছে, সোহরাওয়াদীর্ হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত হয়ে তাদের হাসপাতালে একটি শিশুকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। যদিও সোহরাওয়াদীর্ কতৃর্পক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। শটর্ সাকিের্ট আগুনের সূত্রপাত এদিকে সোহরাওয়াদীর্ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আগুনের সূত্রপাতের সঠিক স্থান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। হাসপাতালের নিচতলার ওষুধের স্টোরেজে বৈদ্যুতিক শটর্ সাকিের্টর মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানান তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালের শিশু ও গাইনি ওয়াডের্ অথার্ৎ দোতলা ও তিনতলায় আগুন পৌঁছায়নি, শুধু ধেঁায়া ছড়িয়েছে। নিচের আগুনের ধেঁায়াকেই আগুন মনে করে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ কারণে উদ্ধারকাযের্ সফলতা এসেছে। শুক্রবার রাজধানীতে নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে একই সংবাদ সম্মেলনে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সাভির্স অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আগুনের সূত্রপাত তিনতলায় শিশু ওয়াডের্। ফায়ার সাভির্স ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেছিলেন, আগুনের সূত্রপাত নিচতলায় ওষুধের স্টোরেজে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনের সংবাদ সম্মেলনেই উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। শুক্রবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বক্তব্য দুটি সাংঘষির্ক নয়। কারণ শিশু ওয়াডের্র প্রত্যক্ষদশীর্রা আগুন সেখানে দেখেছিল বলে জানিয়েছেন আমাদের। তাই আমরা সেটা জানিয়েছিলাম। আবার ফায়ারের ডিজি আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন সূত্রপাত স্টোরেজে। এখন বাকিটা তদন্তের পর জানা যাবে। ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে সবের্মাট ১২০০ রোগী ছিল। যাদের সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়েছে। এ সময় কোনো হতাহতের কিংবা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, সোহরাওয়াদীর্ হাসপাতালে কোনো শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। সেটা ঘটলেও অন্য হাসপাতালে ঘটেছে। হাসপাতালের দুটি ওয়াডর্ বাদে বাকিগুলো চালু হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে মোট ১৬টি ওয়াডর্ আছে। এর মধ্যে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া দুটি ওয়াডর্ ছাড়া বাকি ওয়াডর্গুলো গতকাল রাতে চালু করে দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াডর্গুলো দ্রæত মেরামত করে চালু করা হবে। সোহরাওয়াদীর্ হাসপাতালের আগুনের ঘটনা একটি শিক্ষা উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের অনেক হাসপাতাল ভবনগুলো পুরানো হয়ে গেছে। এগুলোর দ্রæত মেরামত করা হবে। ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা আরও আধুনিকীকরণ করা হবে। দেশের সকল হাসপাতালে বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো পুনরায় চেকিং করা হবে। প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনার বিষয়ে অবগত আছেন। তিনি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে নিদের্শনা দিয়েছেন।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সাড়ে পঁাচটায় আগুন ধরার পর সাড়ে ছয়টার মধ্যে ধাপে ধাপে ফায়ার সাভিের্সর ১৬টি ইউনিট কাজ শুরু করে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যাপক সহায়তা করেছেন। না হলে এ সফলতা আসত না। সংসদ অধিবেশন শেষ করে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলাম, আগুন নেভানো পযর্ন্ত ছিলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে