শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা

উপজেলা নির্বাচনে আস্থা হারাচ্ছে জোট শরিকরাও

প্রথম দফায় নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে পরবর্তীতে ধাপের ভোট বর্জনের চিন্তা করছেন জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের শরিক দলগুলোর তৃণমূল নেতারা
ফয়সাল খান
  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মহাজোটের শরিকরা উপজেলা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় জোরেশোরে মাঠে নামলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের একচ্ছত্র দাপটে এরই মধ্যে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়েও তাদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে শরিক দলের প্রার্থীরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে অনেকটাই আস্থাহীনতায় ভুগছে। এ অবস্থায় শরিক দলগুলো প্রথম দফা নির্বাচনকে 'টেস্ট কেস' হিসেবে নিয়েছে। প্রথম দফায় নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে পরবর্তীতে ধাপের নির্বাচন বর্জনের চিন্তা করছেন জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের শরিক দলগুলোর তৃণমূল নেতারা। তবে মহাজোটের শরিক হওয়ায় এ ব্যাপরে কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা নাও আসতে পারে বলে জানা গেছে।

শরিক দলগুলোর তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই। সংসদের বাইরে থাকা দলগুলো নির্বচনে অংশ না নেয়ায় ক্ষমতাসীন মহাজোটের অনেক শরিকের মধ্যেও আগ্রহের ভাটা পড়েছে। ফলে অনেকটাই নিরুত্তাপ হয়ে পড়েছে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন। রাজনৈতি দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমেই একপেশে নির্বাচনের সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।

শরিক দলের নেতাদের মতে, আগামী ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে পরবর্তী ধাপের নির্বাচনে অংশ নেবেন না তারা। বিএনপি-জামায়তসহ সংসদের বাইরে থাকা দলগুলোর মতো মহাজোটের শরিকরাও যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তেমন কোনো প্রতিদ্বান্দ্বীই অবশিষ্ট থাকবে না। ফাঁকা মাঠে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন অনেকটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।

মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির একজন জেলা সভাপতির ভাষ্য, জাতীয় নির্বাচনে কী হয়েছে তা সবাই জানে। উপজেলা নির্বাচনও একই পদ্ধতিতে হলে তারা আর অংশ নেবেন না। শুধু শুধু নিজেদের পয়সা খরচ করে অন্যের পথ সুগম করার কোনো কারণ নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির বরিশাল জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুল যায়যায়দিনকে বলেন, ৩০ ডিসেম্বর তারা কেমন ভোট করেছেন তা সবাই জানেন। তারা নিজেরাও জানেন। এখন অপেক্ষায় আছেন প্রথম দফা ভোট দেখবেন। যদি আবারও ৩০ ডিসেম্বরের মতো ভোট হয় তবে বরিশালের কোনো উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে না।'

প্রসঙ্গত, উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে আগামী ৩১ মার্চ বরিশাল জেলার ৯ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়াদ শেষ না হওয়ায় মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার নির্বাচন আরও পরে হবে।

সূত্রমতে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় মহাজোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়াও সাংগঠনিক তৎপরতা আছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু) ও বাংলাদেশ জাসদ (আম্বিয়া), তরিকত ফেডারেশনসহ (মাইজভান্ডারি) বিভিন্ন ছোট দলের। দলগুলো সাংগঠনিক শক্তি অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলেও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে তৃণমূলে সাড়া পাচ্ছে না মহাজোটের শরিক দলগুলো। উপজেলাগুলোতে এককভাবে জয় লাভ করা বা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার মতো সাংগঠনিক অবস্থা জাতীয় পার্টি বাদে অন্য কোনো দলের নেই বললেই চলে। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান বেশিরভাগ দলের নেতাকর্মীরা।

এর কারণ হিসাবে তারা বলছেন, নির্বাচন ও সরকার গঠন পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিকদের সম্পর্ক সুখকর নয়। এরই মধ্যে সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ শরিকদের ছাড় দেবে না বলে ধারণা তৃণমূল নেতাদের। তাই শুধু শুধু নির্বাচন করে স্থানীয় নেতারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চান না।

তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, উপজেলা নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে- এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু শরিক দলগুলোর শক্তিমত্তা না থাকায় ক্ষমতাসীনদের এমন বক্তব্যে ভরসা রাখতে পারছে না তৃণমূল নেতারা।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা কোনোভাবেই শরিকদের ছাড় দিতে চায় না। অনেকে প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান থেকে নির্বাচন করছেন। আবার কেউ কেউ নতুন মনোনয়ন পেয়েছেন। দল ক্ষমতায় থাকার কারণে সবাই চাইবে নিজে নির্বাচিত হতে। সেক্ষেত্রে কোথাও কোথাও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে চাইলেও শরিকদের কোণঠাসা করে রাখা হতে পারে বলে মনে করছেন দলগুলোর তৃণমূল নেতারা। তাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহাজোটের শরিক একটি বাম দলের নেতা যায়যায়দিনকে বলেন, নির্বাচনে জনগণের ভোটের প্রতিফলন হলে সব দলই অংশ নিতো। পেশিশক্তির প্রয়োগের ফলে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ নেই। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও আগ্রহ কমছে। মহাজোটের শরিক থাকার কারণেই বর্জনের ঘোষণা দিতে না পারলেও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে তৃণমূল থেকেই প্রার্থীরা সরে দাঁড়াবেন।

অন্য একটি দলের নেতার ভাষ্য, 'সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় ভোট নিয়ে কারও মধ্যে আগ্রহ নেই। সংসদে আমাদের দলের প্রতিনিধিত্ব থাকায় নির্বাচন করতে হয়। তাই নির্বাচন করছি।'

এসব বিষয়ে আলাপকালে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাসদের (ইনু) সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত পেশিশক্তির প্রয়োগ বেশি হয়। তবে আমরা আশা করব, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে আন্তরিক হবে। সব দলের জন্য সমান সুযোগ দেবে। প্রথম ধাপে সুষ্ঠু ভোট না হলে দলীয় ফোরামে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

তবে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন এক তরফা হলেও ওই বছর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া বেশিরভাগ উপজেলায় বিভিন্ন পদে জয়লাভ করে বিএনপি-জামায়াত। এর বাইরে জাতীয় পার্টি কয়েকটি উপজেলায় জয় পায়। মূলত রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-জামায়াত এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় অনেকটাই নিরুত্তাপ হয়ে পড়েছে।

২০১৪ সালে পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত ৪৫৫ উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ২২৫টি, বিএনপি ১৫৫, জামায়াত ৩৬, জাতীয় পার্টি ৪টি এবং বাকিগুলোতে সতন্ত্র ও অন্যন্য প্রার্থীরা বিজয়ী হন। এর মধ্যে প্রথম দফা নির্বাচনে ৯৭ উপজেলার মধ্যে ৫৬টিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়। বিএনপি ৪৩টি ও জামায়াত ১৩টি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ পায় ৩৪টি চেয়ারম্যান পদ। জাতীয় পার্টি ১টি এবং বিদ্রোহীসহ অন্যান্য দল পায় ৫টি উপজেলার চেয়ারম্যান পদ। ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ৩২ ও ভাইস চেয়ারম্যন (মহিলা) পদে ৩৪ উপজেলায় জয়ী হয় বিএনপির প্রার্থী। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভাইস চেয়াম্যান (পুরুষ) পদে ২৪ ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে ৩৪ উপজেলায় জয়ী হয়। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ২৩ ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে ১০ উপজেলায় জয়ী হয়। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ৩ ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে ১ জন জয়ী হয়েছে। অন্যান্য দল ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ১০ ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে ৩ জন জয়ী হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<37404 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1