শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মিনারে গৌরবের গান

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতির শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অর্ঘ -যাযাদি

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, ফুলেল শ্রদ্ধায় তাদের স্মরণ করেছে বাংলাদেশ।

যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছিল ভাষার অধিকার, সেইসব শহীদ স্মরণে বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে জেগে ওঠে সব শহীদ মিনার।

'একুশ মানে মাথা নত না করা' এই প্রত্যয়ের প্রতিধ্বনিতে রফিক, জব্বার, সফিউরদের স্মরণ করছে পুরো জাতি।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারি বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। রক্তের দামে এসেছিল বাংলার স্বীকৃতি আর তার সিঁড়ি বেয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।

মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালির এই আত্মত্যাগের দিনটি এখন আর বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়; ২১ ফেব্রম্নয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। বাঙালির ভাষার সংগ্রামের একুশ এখন বিশ্বের সব ভাষাভাষীর অধিকার রক্ষার দিন।

গর্ব আর শোকের এই দিনটি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করে জাতি, যার সূচনা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে।

প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় বাজছিল অমর সেই গান 'আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো

একুশে ফেব্রম্নয়ারি ...।'

তারা ফুল দেয়ার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ফুল দেন শহীদ বেদিতে।

এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্যানেল মেয়র মোস্তফা কামালও প্রথম প্রহরে ফুল দেন শহীদ মিনারে।

ঢাকার বিভিন্ন মিশনের কূটনীতিকরাও ফুল নিয়ে হাজির ছিলেন শহীদ মিনারে। শ্রদ্ধা জানান একাত্তরের সেক্টর কমান্ডারস এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নেতারা।

সহকর্মীদের নিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আকতারুজ্জামান। প্রথম প্রহরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শ্রদ্ধা জানায় জাসদের দুই অংশ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবি, সাম্যবাদী দল, বাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় এবারও প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে অনুপস্থিত ছিল বিএনপি। গতবার তারা সকালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল।

ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে শ্রদ্ধা জানায় ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।

শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই হাজারো মানুষ হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে যান শহীদ মিনার অভিমুখী লাইনে। বিশিষ্টজনদের শ্রদ্ধা জানানোর পর উন্মুক্ত হয় শহীদ মিনার।

শ্রদ্ধানুষ্ঠান ভাবগাম্ভীর্য ও শান্তিপূর্ণভাবে পালনের লক্ষ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা করা হয়; পথ চলায়ও রয়েছে নিয়ন্ত্রণ।

ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ সারা দেশে প্রথম প্রহরেই শহীদ মিনারে শুরু হয় শ্রদ্ধা জানানোর পালা, ফুলে ফুলে ভরে উঠছে স্মৃতির মিনার।

একুশে ফেব্রম্নয়ারি উপলক্ষে বাণীতে ভাষাশহীদদের স্মরণ করার পাশাপাশি দিনটি বিলুপ্তির হাত বিভিন্ন ভাষাকে রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, 'বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। এ চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষী মানুষের সাথে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপিত হোক, লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো আপন মহিমায় নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উজ্জীবিত হোক, গড়ে উঠুক নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য বিশ্ব- মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ কামনা করি।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, 'একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে গত ১০ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদু্যৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।'

'সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছেন। আমাদের ওপর দেশের মানুষ যে দৃঢ় আস্থা রেখেছেন, আমরা তার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করব। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত করব।'

একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সালাম, রফিক, বরকত, সফিউরসহ নাম না জানা অনেকে।

এরপর বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয় তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর এক ঘোষণায় ২১ ফেব্রম্নয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

২১ ফেব্রম্নয়ারি দেশে সাধারণ ছুটির দিন। ভাষাশহীদদের স্মরণে এদিন জাতীয় পতাকা থাকে অর্ধনমিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<37823 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1