পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্তিত করতে যেসব পলিটিক্যাল গিঁট রয়েছে তা খুলে দেয়া হবে। উন্নয়ন কাজের গতি বাড়াতে প্রয়োজনে আইএমডির বিধি সংশোধন করা হবে। আর এ কাজ করা হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে তার কার্যালয়ে যায়যায়দিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা-ত্রম্নটির সঙ্গে আশার কথাও শোনান। নিচে সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হলো-
যাযাদি: উন্নয়ন কাজে আরও গতি বাড়াতে আপনি নতুন কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
এমএ মান্নান : বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তথা উন্নয়ন কাজের লক্ষ্য শতভাগ পূরণ করতে অনেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। আমি বলব নতুন উদ্যোগ বলে কিছু নেই। প্রকল্প বাস্তবায়নে যেসব পলিটিক্যাল গিঁট রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে তা খুলে দেয়া (সরানো) হবে। এ কাজ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করা হবে।
যাযাদি: বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের এজেন্সি অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে এডিপি বেশি করে বাস্তবায়ন দেখায়। এ ব্যাপারে আপনি কী পদক্ষেপ নেবেন?
এমএ মান্নান: দেখুন আমি সেই ১৯৭৪ সালে ক্যাডার পদে সরকারি চাকরি শুরু করি। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প-বিসিকের চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসরে যাই। এ দীর্ঘ সময়ে দেখেছি উন্নয়নকাজ কিভাবে হয়েছে। আবার ফাঁকিও দেখেছি। কাজেই এসব দেখভাল করার জন্য আমি এবারে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েই খুলনা ও সিলেট বিভাগ পরিদর্শন করেছি। প্রকল্প পরিচালক-পিডিদের নিয়ে বসেছি। জানতে চেয়েছি সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা থাকার পরও অনেকেই এখনো একাধিক পিডির দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু তা-ই নয়, তাদের বলেছি, প্রকল্প এলাকাতেই আপনাদের থাকতে হবে। যেসব গাড়ি দেয়া হয়েছে, তা ঢাকা শহরে থাকার জন্য নয়। গ্রামের প্রকল্পে থাকার জন্যই ওই সব গাড়ি কেনা হয়েছে। এই মেসেজ দিয়েই তাদেরকে সত্য তুলে ধরার সংকেত দেয়া হয়েছে।
যাযাদি: মেগা প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার দিলেও বাস্তবায়নে গতি বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারছে না। এ ব্যাপারে আপনার করণীয় কী?
এমএ মান্নান: আগে যাই হোক আগামীতে যাতে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের গতি বাড়ে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের সব প্রকল্প পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের আগামী ২১ মার্চে ডাকা হয়েছে। তাদের নিয়ে বসা হবে। তাদের কাছে আসল তথ্য জানতে চাওয়া হবে। তারা বলবেন কোথায় সমস্যা। জানার পরই উন্নয়ন কাজের গতি যাতে বাড়ে সেই দিকে নজর দেয়া হবে। পলিটিক্যাল গিঁট থাকলে তা অত্যন্ত সতর্ক ও সাবধানে খোলা হবে।
যাযাদি: উন্নয়ন কাজে প্রকল্প পরিচালকরা (পিডি) বিভিন্ন ফাঁকি দেয়ায় অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও ত্রম্নটি তুলে ধরতে আইএমইডিকে কি আরও ঢেলে সাজানো হবে?
এমএ মান্নান: পিডিদের কাজের মূল্যায়ন করার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ আইএমইডিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম ও ত্রম্নটি তুলে ধরে তা সংশোধনের জন্য সুপারিশ করছে। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে বোঝানো হচ্ছে বিভিন্নভাবে। তাদের (পিডিদের) মানসিকতা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে কোনো আইন বা বিধি সংশোধন করা হবে না। যদি দেখা যায় তাতে কাজ হচ্ছে না তবে এক বছর পরে বিধি সংশোধন করা হবে।
যাযাদি: পিডি নিয়োগে নতুন করে কোনো নীতিমালা করা হবে কি না?
এমএ মান্নান: উন্নয়ন কাজে পিডিরাই হচ্ছেন প্রাণ। তাদের ওপরই নির্ভর করে কাজের উন্নয়ন ও কোয়ালিটি। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে একজন পিডি একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন। এতে অর্থের অপচয় হচ্ছে। কাজেরও বিঘ্ন ঘটে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পরই বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ শুরু করেছি। প্রকল্প পরিচালকদের মোটিভেশন (উদ্দীপনা) দেয়া হচ্ছে। তাদের দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। এক পিডি একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। তাই পুরোপুরি যাতে পিডিরা সেই নিদের্শনা মেনে চলেন তার ব্যবস্থা করা হবে।
যাযাদি: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো-বিবিএসের বিভিন্ন প্রতিবেদনের ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা তো বটেই, খোদ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও প্রশ্ন তোলে। তাই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো-বিবিএসকে কি আরও যুগোপযোগী করা হবে?
এমএ মান্নান: বিবিএসের তথ্যের ভিত্তিতেই প্রতি বছরে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি ও মাসে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করা হয়। এছাড়া কৃষি শুমারিসহ বিভিন্ন শুমারির প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। বিবিএস খুবই ভালো কাজ করছে। বহির্বিশ্বে বিবিএস অত্যন্ত প্রশংসা অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা সেই তথ্যের আলোকেই তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে। শুধু তা-ই নয়, জাতিসংঘ স্ট্যাটিস্টিকস কমিশনের কাছে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে আমাদের বিবিএস। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সচিব সম্প্রতি সেখানে গেছেন।
উলেস্নখ্য, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ডুংরিয়া গ্রামে ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করে প্রথমে গ্রামের স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু করেন মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান (এমএ মান্নান)। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান থেকে ও-লেবেল পাস করেন। এরপরে দেশের মাটিতে ফিরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে ১৯৭৪ সালে ক্যাডার পদে চাকরি শুরু করেন। ২০০৩ সালে অবসরের ১৬ বছরের ব্যবধানে তিনি মন্ত্রিসভায় ঠাঁই করে দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেখছেন দেশের উন্নয়ন, কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।