মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাগলো যে দোল...

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরান ঢাকায় বাসন্তী শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে তরুণ-যুবারা মেতেছিলেন রঙের উৎসবে। ছবিটি ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে তোলা -যাযাদি

বাসন্তী শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে তরুণ-যুবারা মেতেছিলেন রঙের উৎসবে। রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কেউ গেয়েছেন : 'ওরে গৃহবাসী খোল্‌, দ্বার খোল্‌?, লাগলো যে দোল। স্থলে জলে বনতলে লাগলো যে দোল। দ্বার খোল্‌?, দ্বার খোল্‌?'। বেলা যত গড়িয়েছে শহর থেকে গ্রামে সবাই মেতে উঠেন রঙের খেলায় পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যেন দেশকে আর পেছনে না নিয়ে যেতে পারে, সে প্রার্থনা করা হয়েছে মঠ-মন্দিরে।?

বৃহস্পতিবার দোলযাত্রা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সারাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেন। এর মধ্যে ঢাকা ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে দোল উৎসব অনুষ্ঠানমালায় পূজা, আবির খেলা ও কীর্ত্তন এবং দুপুরে প্রসাদ বিতরণের আয়োজন করে। ভক্তরা প্রাণরসে উপভোগ করেন সেসব আয়োজন।

এছাড়া দোল উৎসবের অনেক আয়োজন ছিল চট্টগ্রাম নগরের হাজারি গলি, রাজাপুকুর লেইন, জামাল খান, দেওয়ানজি পুকুরপাড়, ফিশারি ঘাট, অভয়মিত্র ঘাট, নালাপাড়া, পাথরঘাটা, চকবাজার, টেরীবাজার, গোসাইলডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায়।

এদিন সকালে নন্দনকানন তুলসীধাম, লোকনাথ ধাম, আসকার দিঘীর পাড় রামকৃষ্ণ মিশন, ইসকন প্রবর্তক মন্দির, শ্রীকৃষ্ণায়ন, কৈবল্যধাম, রঘুনাথবাড়ীসহ মন্দিরগুলোতে অনুষ্ঠিত হয় দোলপূজা। দক্ষিণমুখ করে দোলমঞ্চে বসানো শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধিকাকে উত্তর-দক্ষিণে দোল দেয়ার পর চরণে আবীর মাখিয়ে তা ভক্তরা ধারণ করেছেন নিজেদের কপালে।

ঋতুচক্রের শেষ উৎসব দোলযাত্রা। পাতা ঝরার এই সময়টাতে থাকে বৈশাখের প্রতীক্ষা। বাংলার দোলযাত্রায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব রীতি প্রাধান্য পেয়েছে। পুরনো জঞ্জাল, রুক্ষতা, শুষ্কতা সরিয়ে নতুনের আহ্বান থাকে দোল উৎসবে।

পন্ডিতরা জানান, এ উৎসব বসন্ত উৎসব বা হোলি উৎসব নামেও পরিচিত, রং খেলা যার প্রধান আকর্ষণ। ঘরোয়াভাবেও অনেকে স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের রং লাগিয়ে দোল উৎসবে শামিল হন। ভগবান যখন মন্দির থেকে ভক্তদের মধ্যে নেমে আসেন, তখন তাকে যাত্রা বলা হয়। শাস্ত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বাদশ প্রকার যাত্রার কথা বলা হয়েছে, এর মধ্যে দোলযাত্রা অন্যতম। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব-এর আবির্ভাব তিথি।

ইতিহাস মতে, পূর্বভারতে আর্যরা এই উৎসব পালন করতেন। যুগে যুগে এর উদযাপন রীতি পরিবর্তিত হয়ে এসেছে। পুরাকালে বিবাহিত নারী তার পরিবারের মঙ্গল কামনায় পূর্ণিমায় রঙের উৎসব করতেন। নারদ পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ ও 'জৈমিনি মীমাংসা' গ্রন্থে রং উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এক শিলালিপিতে রাজা হর্ষবর্ধন কর্তৃক 'হোলিকোৎসব' পালনের কথা জানা যায়। হর্ষবর্ধনের নাটক 'রত্নাবলী'তেও হোলিকোৎসবের উলেস্নখ আছে, যা দোলযাত্রার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মধ্যযুগের বিখ্যাত চিত্রশিল্পগুলোর অন্যতম প্রধান বিষয় রাধা-কৃষ্ণের রং উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান মথুরা ও বৃন্দাবনে এই উৎসব বিশেষ মর্যাদায় পালন করা হয়। ১৬ দিন ধরে চলে রং পঞ্চমী।

ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে এ সময়ে দুর্বল দেহে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তৎকালে আধুনিক চিকিৎসা ছিল না বলে প্রতিরোধক হিসেবে 'আবীর' গায়ে মাখানো হতো। কালক্রমে তা রং ছুঁড়ে দেয়া বা মাখানোর রীতিতে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতা।

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে দোল উৎসব উপলক্ষে মন্দির সড়কের দুই পাশে বসেছে মেলা। মেলা কমিটির আয়োজনে পৌরসদরের গজারিয়া দীঘির পাশে পঞ্চদোলে গতকাল সকাল থেকে ভক্তরা ভিড় করেন। পূজা শেষে থালায় থাকা আবীর একে অপরকে মাখিয়ে দিয়ে সবাই মেতে ওঠেন দোল খেলায়।

এছাড়া রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশের সনাতন ধর্মাবলম্বী অধু্যষিত এলাকাগুলোতে সব বয়সীরা নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন রঙের বর্ণছটায়। বসন্তের হাওয়ায় রঙিন মুখগুলো এদিন যেন আরও রঙ্গিন হয়ে উঠেছিল, আনন্দে ভাসিয়েছিল কৃষ্ণপ্রেমীদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42096 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1