শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে বিএনপির অনাগ্রহ

৩০ মার্চ মানববন্ধনে বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় ঐক্যফ্রন্ট। এই কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নেতাদের বলা হয়েছে।
হাসান মোলস্না
  ২৬ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

জাতীয় নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর রাজপথের কর্মসূচিতেও তেমন সাড়া না থাকায় চতুর্মুখী চাপে রয়েছে জাতীয় ঐক্যফন্ট। এর মধ্যে নির্দেশ অমান্য করে গণফোরামের সুলতান মনসুরের শপথগ্রহণে জোটে আস্থার সংকট চলছে। সবমিলে রাজনৈতিক এই জোটকে টিকিয়ে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ ঘোষিত কর্মসূচিতেও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সামনে না থাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি সফল করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা।

গত শুক্রবার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, নিরাপদ সড়ক, উপজেলা নির্বাচনে অব্যবস্থা, ডাকসু নির্বাচনে অব্যবস্থা তথা ভোট ছিনতাইসহ সামগ্রিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ছিনতাই করা ও সীমাহীন অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ৩০ মার্চ বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়া সারাদেশে এপ্রিল মাসে বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ অথবা গণশুনানির মতো কর্মসূচি পালনের কথাও জানানো হন ফ্রন্টের পক্ষ থেকে। কিন্তু দাবি বা প্রতিবাদের কর্মসূচিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি না থাকায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ হন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ কারণে রোববার বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের স্মরণসভায় হট্টগোল করেন দলের নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি না থাকার কারণ জানতে চান মহাসচিবের কাছে। জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রথম কর্মসূচিতে মুক্তির কথা ছিল, এখনো কর্মসূচি চলছে। অভিযোগ মিথ্যা। এসব বলে জাতীয় ঐক্যে ভাঙনের অপচেষ্টা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান যায়যায়দিনকে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সব সময়ই প্রথম ইসু্য। গণশুনানির কর্মসূচিতে

ড. কামাল হোসেন বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। এরপর এ নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার সুযোগ নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তির সঙ্গে এখন সুচিকিৎসার বিষয়টিও যুক্ত হয়েছে- এটা সবার দাবি।

খালেদা জিয়ার মুক্তির ইসু্যটি না থাকায় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি পালনে বিএনপি নেতাকর্মীরা আগ্রহ হারাবে কিনা জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না যায়যায়দিনকে বলেন, এমন কেন হবে? খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি ঐক্যফ্রন্টের মূল এজেন্ডার মধ্যেই আছে। তাই সম্মিলিতভাবেই কর্মসূচি হবে।

ঐক্যফ্রন্ট সূত্রমতে, নির্বাচনের পর এ যাবৎ কোনো কর্মসূচিতে তেমন সাড়া না মেলায় ভাবনায় আছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। বিশেষ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের হতাশা কাটিয়ে রাজনীতির মাঠে কিভাবে ফেরানো যায়, সেই চেষ্টা চলছে।

বিএনপি সূত্রমতে, ফ্রন্টের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে শুধু তৃণমূলে অনীহা আছে, তা নয়, ঐক্যফ্রন্ট টিকিয়ে রাখার বিষয়ে বিএনপির উচ্চপর্যায়েও বিভক্তি রয়েছে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা ঐক্যফ্রন্ট টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি ফ্রন্টের নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া এবং সব ধরনের কর্মসূচি পালনের পক্ষে। অন্যদিকে স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ নেতা ফ্রন্ট ভেঙে না দিয়ে নিষ্ক্রিয় রাখার পক্ষে। আর উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন নেতাসহ দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপির বেরিয়ে আসার পক্ষে। বেশিরভাগ নেতা ফ্রন্ট টিকিয়ে রাখার বিপক্ষে থাকলেও শীর্ষ এক নেতার বিরোধিতার কারণে আপাতত তা সম্ভব হচ্ছে না।

\হখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশা পূরণে এ পর্যন্ত কোনো ভূমিকা রাখতে না পারায় আস্থার সংকটে পড়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্ট টিকিয়ে রাখার যুক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ জন্যই ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে তেমন সাড়া মেলেনি। বিএনপি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি শীর্ষ নেতারাও জোটকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামে সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিএনপি। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থেকে আপাতত বের হওয়ার পরিকল্পনা না থাকলেও নিজেদের কর্মসূচি সফলে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। সঙ্গত কারণে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের ইচ্ছা থাকলেও বেশি ও বড় ধরনের কর্মসূচি দিতে সাহস পাচ্ছেন না তারা। এপ্রিল মাসে মাসব্যাপী কর্মসূচির কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কর্মসূচির ধরনই ঠিক করতে পারেনি তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০ মার্চ মানববন্ধনে বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় ঐক্যফ্রন্ট। এই কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নেতাদের বলা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীরা ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় শীর্ষ নেতারা দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন।

তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, বিএনপির কর্মসূচিতে তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলেও ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে তারা যেতে চাচ্ছেন না। সর্বশেষ ঘোষিত কর্মসূচিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি না থাকায় তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42649 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1