বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শবেবরাত: তারিখ নির্ধারণ নিয়ে এবার কেন এই জটিলতা?

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) গত ৬ এপ্রিল জানিয়েছিল যে আগামী ২১ এপ্রিল রোববার দিবাগত রাতে মুসলমানদের শবেবরাত পালিত হবে।

তারা বলেছিল: 'ওই দিন [৬ এপ্রিল] দেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। সে কারণে ৮ এপ্রিল সোমবার থেকে শাবান মাস গণনা শুরু হবে।'

ইফা সচিব কাজী নূরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ৬৪ জেলার প্রতিটিতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে যে কমিটি রয়েছে সেসব কমিটি ও আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে শাবান মাস ও শবেবরাতের বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

নূরুল ইসলাম বলেন, চাঁদ দেখা কমিটিগুলোতে ডিসি, থানা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি ছাড়াও স্থানীয় আলেমদের প্রতিনিধিরা থাকেন। 'দেশের প্রতিটি জেলা কমিটি নিশ্চিত হয়ে জানিয়েছিল যে তাদের জেলায় কেউ চাঁদ দেখেনি সেদিন [৬ এপ্রিল]।'

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির যে সভায় ২১ এপ্রিল শবেবরাত পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে সভাপতিত্ব করেছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নিজেই।

ধর্ম সচিবসহ মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা ছাড়াও মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা ওই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন।

কমিটির সদস্য তালিকায় কয়েকটি মসজিদের খতিব ও ইমামসহ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আলেমও রয়েছেন।

কিন্তু চাঁদ দেখা নিয়ে ইফার সিদ্ধান্ত সঠিক নয় দাবি করে মজলিসে রুইয়াতুল হিলাল নামে একটি সংগঠন।

বিতর্কের শুরু কীভাবে? : মজলিসে রুইয়াতুল হিলালের সভাপতি এ বি এম রুহুল হাসান বলেন, তারা নিয়মিত চাঁদ পর্যবেক্ষণ করেন এবং চাঁদসংক্রান্ত গবেষণার পাশাপাশি সারাদেশে তাদের স্বেচ্ছাসেবীরাও

চাঁদ উঠেছে কি না সেটি দেখতে কাজ করেন।

'যেদিন আমরা চাঁদ খুঁজি তার আগেই আমরা তা অনুধাবন করি। কয়েকটি প্যারামিটার আছে। সবগুলো প্যারামিটারেই অত্যন্ত সম্ভাবনা ছিল।'

তিনি জানান, 'সেদিন কিছু জায়গায় আকাশ মেঘলা ও কিছু জায়গায় পরিষ্কার ছিল। সেজন্যই স্বেচ্ছাসেবীদের আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে বলেছিলাম।'

তার দাবি, ৬ এপ্রিলেই খাগড়াছড়িতে চাঁদ দেখা গেছে ৬টা ৩৫ মিনিটে, যা স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে দেখেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জেও চাঁদ দেখা গেছে সেদিন।

'আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কেউ আমলে না নিয়ে শাবান মাস ও শবেবরাতের তারিখ ঘোষণা করেছেন।'

এ বি এম রুহুল হাসান বলেন, শরিয়ত অনুযায়ী দুজন মুসলমান পুরুষ যদি চাঁদ দেখেন তাহলে তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে।

'আমরা খাগড়াছড়ি ও মুন্সীগঞ্জ থেকে সতেরো জন সাক্ষী এনেছিলাম, যার মধ্যে মসজিদ মাদ্রাসার ইমামও রয়েছেন।'

মজলিসে রুইয়াতুল হিলালের পক্ষ থেকে পরে সংবাদ সম্মেলন করা হলে জরুরি সভা ডাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

চাঁদ নিয়ে ভিন্নমত, দাবি যাচাই কমিটি

ইফা সচিব কাজী নূরুল ইসলাম বলেন, ভিন্নমত আসায় শনিবার তারা বৈঠক করেছেন যেখানে ভিন্নমত প্রদানকারীরাও যোগ দিয়েছিলেন।

'আমরা আলেম-ওলামাদের সমন্বয়ে এগারো সদস্যের একটি উপ-কমিটি করেছি। আশা করছি আগামী দুদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমরা পাব।'

তবে মজলিসে রুইয়াতুল হিলালের সভাপতি এবিএম রুহুল হাসান বলেন, ওই বৈঠকে তাদের বক্তব্য ঠিকমতো শোনা হয়নি।

তিনি বলেন, '২০ এপ্রিল শবেবরাত পালনের কথা। অথচ তারা ২১ এপ্রিল [পালনের] ঘোষণা দিয়েছে।'

'কিন্তু আমরা চাই শরিয়ত অনুযায়ী কাজ হোক। সঠিক তারিখে হোক। ধর্মীয় চেতনা থেকেই এটা বলছি আমরা।'

সমস্যা আসলে কোথায়?

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটিতে আছেন এমন কয়েকজন বলেছেন, দেশে একটি সম্প্রদায় আছে, যারা একদিন আগে রোজা শুরু বা ঈদ পালন করে তাদেরই একটি অংশ এবার 'শবেবরাত নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছে'।

যদিও ভিন্নমত পোষণকারী মজলিসে রুইয়াতুল হিলালের সভাপতি এবিএম রুহুল হাসান বলছেন, চাঁদ দেখার বিষয়টি যথাযথ পালনর সক্ষমতাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নেই।

'চাঁদের জন্ম ও দেশের আকাশে চাঁদ দেখা যাওয়া এগুলোর যথাযথ প্রশিক্ষিত পর্যবেক্ষকও এ প্রতিষ্ঠানটির নেই। সে কারণেই চাঁদ দেখা নিয়ে সমস্যা হয়।'

'আবার স্থানীয় পর্যায়ে কেউ চাঁদ দেখলে সেটি প্রশাসনকে জানানোও সহজ কাজ নয়। ফলে অনেকে দেখেও আগ্রহী হন না।'

তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, খালি চোখে দেখা না গেলে তখন বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ ও মহাকাশ গবেষণার সাথে জড়িতরা চাঁদ নিয়ে নির্ভুল তথ্যই দিয়ে থাকে বলে মনে করেন তারা।

সে কারণেই এ নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই বলে মনে করছেন তারা।

কিন্তু যেহেতু এখন একটি উপ-কমিটি কাজ করছে তাই আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য তারা করতে রাজি হননি।

কীভাবে কাজ করে

চাঁদ দেখা কমিটি?

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যে বিভাগটি চাঁদ দেখার মূল দায়িত্ব পালন করেন সেটি হলো প্রতিষ্ঠানটির দীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগ।

বিভাগটির কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত ঢাকায় ধর্মমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বৈঠকে বসেন চাঁদ দেখা কমিটির সদস্যরা। এ কমিটির মাধ্যমেই প্রতি মাসের চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

এই মূল চাঁদ দেখা কমিটির সাথে একযোগে প্রতিটি জেলায় একটি করে কমিটি কাজ করে। দেশের কোথাও চাঁদ দেখা গেলে সেটি স্থানীয় প্রশাসন বা ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জেলা কমিটির কাছে পৌঁছায়।

পরে জেলা প্রশাসন দ্রম্নত সেটি নিশ্চিত করে বিভিন্ন ভাবে- যেমন স্থানীয় অনেকে চাঁদ দেখেছে কি না কিংবা স্থিরচিত্র বা ভিডিও চিত্র এসব দ্রম্নত সংগ্রহ করে নিশ্চিত হয়ে থাকে স্থানীয় প্রশাসন। বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<45543 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1