শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
বিস্ফোরণ ঘটায় ৭ আত্মঘাতী

শ্রীলংকায় হামলার দায় স্বীকার জঙ্গি গোষ্ঠীর!

যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ছ'টি বিস্ফোরণ। তার দু'ঘণ্টার মধ্যে আরও দুটি। রোববার ইস্টার প্রার্থনার সেই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে ওঠার আগেই ফের বিস্ফোরণ আতঙ্ক শ্রীলংকায়। সোমবারও কলম্বোর একটি চার্চের কাছে একটি গাড়িতে রাখা বোমা ফেটে যায়। কলম্বো সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে মিলেছে অন্তত ৮০টিরও বেশি ডেটোনেটর। সব মিলিয়ে আতঙ্ক যেন আরও গ্রাস করেছে দ্বীপ রাষ্ট্রকে। সেই কারণেই সোমবার সকালে কার্ফু তুলে নেয়ার পর মধ্যরাত থেকে জারি হয়েছে জাতীয় জরুরি অবস্থা।

কিন্তু এত বড় বিস্ফোরণের নেপথ্যে কারা? কলম্বোর দাবি, মূলচক্রী জঙ্গি গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে ফেলেছেন তদন্তকারীরা। ইতোমধ্যেই এই গোষ্ঠীর মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও দাবি শ্রীলংকার। সরকারের মুখপাত্র রাজিতা সেনারত্নে জানিয়েছেন, শ্রীলংকা সরকার মনে করছে, বিস্ফোরণের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় মুসলিম কট্টরপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠী ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত (এনটিজে)। কিন্তু নাম জানার পরও কার্যত বিভ্রান্ত গোয়েন্দা এবং তদন্তকারী অফিসাররা। কারণ, শ্রীলংকায় এটাই প্রথম বড় এবং দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় নাশকতা ঘটাল এই জঙ্গি গোষ্ঠী। তাই এদের সম্পর্কে কার্যত কোনো তথ্যই নেই গোয়েন্দাদের হাতে। এই জঙ্গিদের মাথা কে, তাদের 'মোডাস অপারেন্ডি' বা নাশকতা চালানোর ধরন, বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রকৃতি থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুই কার্যত অজানা। সেনারত্নে জানিয়েছেন, এই জঙ্গিদের পিছনে আন্তর্জাতিক কোনো গোষ্ঠীর সমর্থন রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে।

এদিকে দুবাইভিত্তিক আল অ্যারাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেলকে উদ্ধৃত করে রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, জামাত আল-তাওহিদ আল-ওয়াতানিয়া নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী শ্রীলংকায় রোববারে ভয়াবহ বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে।

আল অ্যারাবিয়া টুইটারে সোমবার এই দায় স্বীকারের বিষয়টি জানায়। তবে এই জঙ্গি গোষ্ঠী সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানায়নি চ্যানেলটি।

এই সমস্যার জেরেই কার্যত গোটা শ্রীলংকায় এখন চলছে তলস্নাশি, ধরপাকড়। তার মধ্যেই সোমবার কলম্বোর একটি গির্জার কাছে বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়ায়। একটি ভ্যানে রাখা বোমা নিষ্ক্রিয় করছিল কলম্বোর স্পেশাল টাস্ক ফোর্স এবং বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড। কিন্তু নিষ্ক্রিয় করার আগেই সেটি ফেটে যায়। বিস্ফোরণে উড়ে যায় ওই ভ্যানটি। তবে ওই ঘটনায় কেউ আহত হননি। অন্য দিকে এদিনই পেট্টা এলাকায় সেন্ট্রাল কলম্বো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কয়েকটি ডেটোনেটর (যা দিয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়) ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। সেগুলো দেখে এলাকায় তলস্নাশি চালাতেই উদ্ধার হয় ৮০টিরও বেশি ডেটোনেটর।

এই দুটি ঘটনার জেরে উদ্বেগ বেড়েছে শ্রীলংকা প্রশাসনের শীর্ষস্তরে। কারণ তাদের সন্দেহ, আরও অনেক জায়গাতেই এই ধরনের বোমা রাখা থাকতে পারে। গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে আত্মঘাতী জঙ্গিরাও। কিন্তু বোমা কোথায় রাখা হতে পারে বা জঙ্গিরা কীভাবে কোন জায়গায় লুকিয়ে থাকতে পারে, তার নির্দিষ্ট কোনো ইঙ্গিত বা সূত্র এখনো মেলেনি। তাই আপাতত ধৃত ২৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং কার্যত সব জায়গায় চিরুনি তলস্নাশি চালাচ্ছেন নিরাপত্তা আধিকারিকরা। অন্য দিকে চলছে নতুন জঙ্গি গোষ্ঠী এনটিজে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ। কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি ভাঙচুর করা ছাড়া এই জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আপাতত বিশেষ কোনো তথ্য নেই গোয়েন্দাদের হাতে।

রোববার বিস্ফোরণের পর থেকে সোমবার সকাল ছ'টা পর্যন্ত কার্ফু জারি করা হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। কার্ফু উঠে যাওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে যখন কিছুটা স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছিল বিস্ফোরণ বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কা, তখনই ডেটোনেটর উদ্ধার এবং বোমা ফেটে যাওয়ায় নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয় প্রশাসন ও নিরাপত্তার শীর্ষস্তরে। সোমবার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি)-এর পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মৈথিলি সিরিসেনা। সেই বৈঠকেই সোমবার মধ্যরাত থেকে দেশজুড়ে শর্তাধীন জরুরি অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রাষ্ট্রপতির মিডিয়া ইউনিটের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে সে কথা জানিয়েও দেয়া হয়েছে। তবে শর্তগুলো এখনো জানানো হয়নি।

হামলা চালায়

৭ আত্মঘাতী

শ্রীলংকা সরকারের ফরেনসিক বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা ও তদন্তকারী আরিয়ানন্দ ওয়েলিঙ্গা বলেছেন, গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে সাত আত্মঘাতী বোমারু। তার মধ্যে সাংগ্রি-লা হোটেলে নিজেদের উড়িয়ে দেয় দুই আত্মঘাতী। অন্যরা তিনটি গির্জা ও দুটি হোটেলে হামলা চালায়। এ ছাড়া চতুর্থ একটি হোটেল ও একটি বাড়িতে টার্গেট করা হয়েছিল। তবে কীভাবে এসব হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে সরাসরি সরকারি বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ওয়েলিঙ্গা বলেছেন, এ বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46468 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1