শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
নিহত বেড়ে ৩২১

ক্রাইস্টচার্চের প্রতিশোধ কলম্বোয় হামলার দায় স্বীকার আইএসের

মঙ্গলবার সকালে শ্রীলংকায় রাষ্ট্রীয় শোক পালনের কার্যক্রম শুরু হয়। পুরো দেশে সব সরকারি-আধা সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা রাখা হয় অর্ধনমিত
নতুনধারা
  ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০৯
শ্রীলংকায় বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত নেগম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ানের গির্জায় মঙ্গলবার নিহতদের স্মরণে প্রার্থনার পর কফিনের পাশে স্বজনদের আহাজারি -ইন্টারনেট

যাযাদি ডেস্ক শ্রীলংকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেটস (আইএস)। মঙ্গলবার আইএসের মুখপাত্র আমাক থেকে হামলার দায় স্বীকার করা হয়। তবে এই দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি আইএস। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে আইএসের হামলার দায় স্বীকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করেছিল, শ্রীলংকায় হামলার ধরনের সঙ্গে আইএসের হামলার ধরনের মিল রয়েছে। মঙ্গলবার সকালেই পার্লামেন্টে দেশটির প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজেবর্ধনে দাবি করেছেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে গুলি চালানোর ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই শ্রীলংকায় ইস্টার সানডে উদযাপনের সময় একের পর এক বোমা হামলা চালানো হয়। শ্রীলংকান দুটি ইসলামিক গ্রম্নপ এই হামলার সঙ্গে যুক্ত বলেও জানিয়েছেন তিনি। হামলার ঘটনার আগে একটি গোয়েন্দা সংস্থার স্মারকে বলা হয়, সন্ত্রাসী দলের একজন সদস্য তার সামাজিক যোগাযোগের অ্যাকাউন্টে চরমপন্থিবিষয়ক বিভিন্ন লেখা পোস্ট করতে শুরু করেছিলেন। সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, এ ধরনের গভীর ও জটিল হামলা চালাতে যে সরঞ্জাম লাগে, এর প্রস্তুতিতে কয়েক মাস সময় দরকার। এর মধ্যে আত্মঘাতী সদস্য জোগাড় করা ও বিস্ফোরক দ্রব্য পরীক্ষার মতো বিষয়ও রয়েছে। এদিকে তিন মিনিট নীরবতার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সকালে শ্রীলংকায় রাষ্ট্রীয় শোক পালনের কার্যক্রম শুরু হয়। পুরো দেশে সব সরকারি-আধা সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা রাখা হয় অর্ধনমিত। বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত নেগম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ানের গির্জায় শেষকৃত্য শেষে নিহতদের কয়েকজনকে শোয়ানো হয় গণকবরে। তিন মিনিট নীরবতা পালনের ওই কর্মসূচি শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে। দুই দিন আগে ঠিক ওই সময়েই ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলাকালে তিনটি গির্জা ও তিনটি পাঁচ তারা হোটেলে মোট ছয়টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কলম্বোর একটি গির্জা ও তিনটি পাঁচ তারা হোটেল, নিকটবর্তী নেগম্বো শহরের একটি গির্জায় ও দেশের অন্য প্রান্তে বাত্তিকোলার একটি গির্জায় হামলাগুলো চালানো হয়। এর পাঁচ ঘণ্টা পর কলম্বোর দক্ষিণাংশের দেহিওয়ালায় জাতীয় চিড়িয়াখানার কাছে ছোট একটি হোটেলে সপ্তম বিস্ফোরণটি ঘটে। এতে দুজন নিহত হন বলে জানিয়েছে বিবিসি। বিকালে পুলিশের অভিযান চলাকালে কলম্বোর দেমাটাগোদা এলাকায় আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে, এতে তিন পুলিশ নিহত হন। প্রথম ছয়টি হামলায় কোথায় কতোজন নিহত হয়েছেন কর্তৃপক্ষ তা প্রকাশ করেনি। অন্তত সাতজন আত্মঘাতী এসব হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আত্মঘাতী এ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২১ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ জন বিদেশি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে অন্তত আটজন ভারতীয়, আট ব্রিটিশ, তিন ডেনিশ, দুই তুর্কি, দুই অস্ট্রেলীয়, এক চীনা, এক বাংলাদেশি এবং যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড ও পতুর্গালের নাগরিকরা রয়েছেন। এক দশক আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগাররা উৎখাত হওয়ার পর এমন ভয়াবহ হামলা আর দেখা যায়নি শ্রীলংকায়। এই পরিস্থিতিতে সোমবার মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে ভারত লাগোয়া দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। জরুরি অবস্থার বলে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী আদালতের নির্দেশ ছাড়াই সন্দেহভাজনদের আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। এর আগে গৃহযুদ্ধের সময় শেষ এ ক্ষমতা ব্যবহার করেছিল দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। বিস্ফোরণের পর সরকার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। শ্রীলংকার পুলিশ জানিয়েছে, ওই হামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত মোট ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা না হলেও এদের অধিকাংশই শ্রীলংকান ও এদের জিজ্ঞাসাবাদের পর একজন সিরীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে শ্রীলংকা সরকার ও সামরিক বাহিনীর তিনটি সূত্র।

শ্রীলংকাকে সতর্ক

করেছিল ভারত

শ্রীলংকায় ভয়াবহ বোমা হামলার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাকে সতর্ক করেছিল ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী।

ভারত সরকারের এক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, হামলার বিষয়ে শ্রীলংকাকে আগাম সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, হামলার ব্যাপারে শ্রীলংকাকে ৪ এপ্রিল ও ২০ এপ্রিল দুই দিন সতর্ক করা হয়েছিল।

ওই প্রতিবেদনে কারও নাম উল্লেখ না করে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর এক কর্মকর্তা ও শ্রীলংকার নিরাপত্তার বাহিনীর এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের পদমর্যাদার শ্রীলংকান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই হামলার পূর্ব সতর্কবার্তা জানায়।

অপর একজন শ্রীলংকান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, প্রথম হামলার ঘণ্টাখানেক আগে একটি সতর্কবার্তা এসেছিল। আবার আরেক কর্মকর্তা জানান, হামলার আগের দিন শনিবার রাতেই সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে সতর্ক করেছিল ভারত।

তবে হামলার দিনই শ্রীলংকার পুলিশপ্রধান পুজুথ জয়াসুন্দরা জানিয়েছিলেন, এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ১০ দিন আগেই সতর্ক করেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত কোনো সতর্কবার্তা কাজে আসেনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে