শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
বিশেষ সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

শেখ হাসিনা মিষ্টি পাঠান আর মমতা পাঠান কুর্তা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
নরেন্দ্র মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবছর নিয়ম করে তার জন্য নতুন নতুন ধরনের মিষ্টি পাঠান। আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি বছর 'নিজে পছন্দ করে তার জন্য কুর্তা কিনে পাঠান!'

মঙ্গলবার লোকসভার তৃতীয় পর্বের ভোট শেষে বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমারের মুখোমুখি হয়ে এমনই 'মনের কথা' ফাঁস করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভারতের রাজনীতির ময়দানে যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ বিজেপি-তৃণমূল। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে মোদির 'কোমরে দড়ি পরানো'র হুঙ্কার ছেড়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত পাঁচ বছরেও বহুবার কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চরমে উঠেছে। সেই সব চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ফের লোকসভা ভোট। তিন দফা হয়ে গেছে। বাকি আরও চার দফার ভোটগ্রহণ। ফের উত্তপ্ত রাজনৈতিক বাতাবরণ। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ মোদি-মমতা। পশ্চিমবঙ্গে ভোট প্রচারে গিয়ে মোদি যেমন মমতাকে তীব্র আক্রমণ করছেন, তেমনই মমতাও পাল্টা তোপ দেগে যাচ্ছেন। মোদি যেমন 'স্পিডব্রেকার দিদি' বলেছেন, সারদা, নারদা, সিন্ডিকেট নিয়ে নিশানা করছেন মমতাকে, মমতাও পাল্টা ব্যবহার করছেন 'হিটলার আঙ্কল', 'এক্সপায়ারি বাবু', 'দাঙ্গাবাজ', 'নোটবন্দি কেলেঙ্কারির নায়ক'-এর মতো শব্দবন্দ। এমনই তপ্ত রাজনৈতিক আবহে মোদি ফাঁস করলেন মমতার সঙ্গে তার 'বন্ধুত্ব'র কথা।

নায়ক অক্ষয় কুমারের প্রশ্ন ছিল, 'বিরোধীদের মধ্যে আপনার কোনো বন্ধু আছে?' মোদির জবাবে উঠে আসে মমতার নাম। তিনি বলেন, 'আপনারা শুনে আশ্চর্য হবেন এবং ভোটের মরসুমে এটা বলা আমার উচিত নয়। কিন্তু মমতা দিদি আমার জন্য প্রতি বছর উপহার পাঠান। একটি বা দুটি কুর্তা পাঠান এবং সেটা উনি নিজে পছন্দ করে কেনেন। আবার দিদি যখন জানতে পারেন শেখ হাসিনা তাকে প্রতিবছর নতুন নতুন মিষ্টি পাঠান, তখন উনিও তাকে বছরে একবার বা দু'বার মিষ্টি পাঠাতে শুরু করেন।

মোদি বলেন, 'আমি খুব সহজে রাগ করি না। যদিও এটা মানুষের চরিত্রের একটা বৈশিষ্ট্য। এটা এমন একটা আবেগ, যা নেগেটিভিটি ছড়ায়। যখন ক্যারিয়ার (রাজনীতি) শুরু করি, তখন থেকে কখনও রাগ প্রকাশ করিনি।'

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টই ছিল না! কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবেননি প্রধানমন্ত্রী হবেন। অল্প বয়সেই ছেড়েছিলেন পরিবার। দেশই ছিল তার মা-বাবা।

বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমারের সঙ্গে 'সম্পূর্ণ 'অরাজনৈতিক' কথোপকথনে উঠে আসে এমনই এক নরেন্দ্র মোদির জীবন সংগ্রাম। এমন এক প্রধানমন্ত্রীর চরিত্র, যিনি দেশ ছাড়া কিছু ভাবেন না, গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেন, ঘুমান মাত্র তিন-চার ঘণ্টা। আবার রাজনীতি, প্রধানমন্ত্রিত্বের গাম্ভীর্যের বাইরে হাসিঠাট্টাও করেন। যেমন করলেন 'নায়ক' অক্ষয় কুমারের সঙ্গে। অর্থাৎ, তিনিও যে আম জনতার মধ্যে থেকেই উঠে আসা 'কমন ম্যান', সেটাই বোঝালেন প্রধানমন্ত্রী। সামান্য 'চায়েওয়ালা' থেকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পেছনের যে সংগ্রামের কাহিনী প্রচলিত ছিল বা তথ্যভান্ডারে ছিল, সেটা যেন পূর্ণতা পায় তার নিজের কথাতেই। রাজনীতির বাইরেও তৈরি হয়ে যায় ব্যক্তি 'ব্র্যান্ড মোদি'। যদিও এটা যে পুরোপুরি 'রাজনীতি বর্জিত', এটা হলফ করে বলতে পারছেন না পর্যবেক্ষকরা।

বড় হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবেন, ভেবেছিলেন? মোদির জবাব, 'আমি কখনও ভাবিনি প্রধানমন্ত্রী হব। সাধারণ মানুষ কখনও সেটা ভাবেও না। যে ধরনের পরিবার থেকে উঠে এসেছি, তাতে আমি একটা সরকারি চাকরি পেলেই আমার মা হয়তো লাড্ডু বিলি করে বেড়াতেন।'

পরিবার এবং তার নিজের অবস্থা বোঝাতে নিজেই উলেস্নখ করেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রসঙ্গ। মোদি বলেন, 'আমার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টই ছিল না। আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখন দেনা ব্যাংকের লোকজন এসে একটি পিগি ব্যাংক দিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমার কাছে তেমন টাকা পয়সা ছিল না। পরে ব্যাংকের লোকজনই এসে বলেন, আমার অ্যাকাউন্টে লেনদেন না হওয়ার জন্য সেটি বন্ধ করে দেয়া হবে। ৩২ বছর পর ওরা আমাকে বলেছিল, ছোট বয়স থেকেই আমার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী হলাম (গুজরাটের) আমার মাইনে পড়ত ওই অ্যাকাউন্টে। ওদের বলেছিলাম, আমি ওই টাকা দান করতে চাই। ওরা বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলা আছে, আমার দরকার হতে পারে। কিন্তু আমি তাদের জোর করে বলেছিলাম, ২১ লাখ টাকা আমি গরিবদের দান করতে চাই।'

আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো তিনি নন। বাড়ি-ঘর, সংসার ছেড়েছেন কিশোর বয়সেই। কিন্তু কখনও কি মনে হয় না পরিবারের সঙ্গে, মা, ভাই-বোনের সঙ্গে থাকার কথা? মোদির জবাব, 'আমি ছিলাম কার্যত পরিব্রাজক। আমি নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছিলাম। যুবক বয়সেই আমি নিজের পথে চলেছি। সেটার থেকেই জন্ম হয়েছে একটা বিচ্ছিন্নতার। পরে যখন আমি মাকে বলেছি আমার সঙ্গে থাকতে, উনি গ্রামেই থাকতে চেয়েছেন। উল্টো দিকে আমি নিজেও মায়ের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পাইনি।'

অর্থাৎ কার্যত সন্ন্যাস নিয়েছেন। কিন্তু তা বলে মানুষের সহজাত অনুভূতি -আবেগগুলোও কি মরে গিয়েছে? কখনও কি রাগ হয় না, হলে কী করেন? প্রশ্ন শুনেই মোদি বললেন, আমি খুব সহজে রাগ করি না। যদিও এটা মানুষের চরিত্রের একটা বৈশিষ্ট্য। এটা এমন একটা আবেগ, যা নেগেটিভিটি ছড়ায়। যখন ক্যারিয়ার (রাজনীতি) শুরু করি, তখন থেকে কখনও রাগ প্রকাশ করিনি। আরও একটি গোপন কথা ফাঁস করেছেন মোদি। জানিয়েছেন, রাগ বা অন্য কোনো অনুভূতির আতিশয্য হলেই সেটা তিনি লিখে রাখেন। তার পর সেটা নিয়ে ভাবতে থাকেন। 'এটা আমার নিজের ভুল বুঝতে সাহায্য করে। তবে হ্যাঁ, ওটার পেছনে বেশি সময় দিই না। যে কোনো পরিস্থিতিতে এ ভাবেই প্রতিক্রিয়া দেয়ার মতো আমি নিজেকে তৈরি করে ফেলেছি' বলছেন মোদি। এই ফাঁকে রাগ হলে তিনি নিজে কী করেন, সেটাও জানিয়ে দেন। বলেন, 'আমার বাড়িতে একটা বক্সিং ব্যাগ আছে। রাগ না কমা পর্যন্ত ওই ব্যাগে প্রচুর ঘুষি মারতে থাকি।' আনন্দবাজার অনলাইন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46730 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1