বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম-রংপুরে ধর্মঘট উঠলেও গাড়ি বন্ধ উত্তরের ৪ জেলায়

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:১৫
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ধর্মঘটে বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীতে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। দুপুরের পর অবশ্য ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। ছবিটি নগরীর অলংকার মোড় থেকে তোলা -স্টার মেইল

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং রংপুর বিভাগের চার জেলা থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিলেও মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে বৃহত্তর দিনাজপুরের চার জেলায় যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে শ্যামলী পরিবহনের বাস চালক জালাল উদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও সংশ্লিষ্ট ১৯ রুট, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও সংশ্লিষ্ট ৬৮ রুট এবং রংপুর বিভাগের আট জেলায় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বাস ধর্মঘট শুরু করে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। একই কারণে মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে জালাল উদ্দিনের নিজের জেলা দিনাজপুর এবং পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলায় পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। এই সময়ে দূরপালস্নার যাত্রীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও তাদের পণ্যের চালান নিয়ে বিপাকে পড়েন। দুপুর পর্যন্ত ধর্মঘট চালানোর পর 'প্রশাসনের আশ্বাস' পাওয়ার কথা জানিয়ে বেলা ১২টার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলীয় কমিটির সভাপতি মৃণাল চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাস চালকের হত্যাকারীদের দ্রম্নত গ্রেপ্তারের আশ্বাস এবং মামলার তদন্তের দায়িত্ব কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে দেয়া হয়েছে। এতে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি এবং দ্রম্নত বিচার পাব বলে আশা করছি। এ কারণে চলমান পরিবহন ধর্মঘট আমরা প্রত্যাহার করেছি। তবে রোববার বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলার সকল রুটে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী পরিবহনে ধর্মঘটের যে কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল, তা বলবৎ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখার পরই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এদিকে পরিবহন ধর্মঘটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার রংপুর শহরে সকাল থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। জালাল উদ্দিন হত্যার বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসনে স্মারকলিপিও দেয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ধর্মঘট চালানোর পর ফেডারেশনের রংপুর বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক এমএ মজিদ ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও লালমনিরহাটের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে রংপুর বিভাগের আট জেলায় আবার ধর্মঘট ডাকা হবে। সোমবার গভীর রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী থানাধীন ক্রসিং এলাকায় কক্সবাজার থেকে গাজীপুরগামী শ্যামলী পরিবহন-এন আরএর একটি বাস গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে থামানো হয়। ইয়াবার খোঁজে তলস্নাশির নামে ওই বাসের চালক জালাল উদ্দিনকে মারধর করা হয় বলে পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ। গুরুতর আহত জালালকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই তার মৃতু্য হয়। নিহত জালাল উদ্দিন দিনাজপুরের দশমাইল এলাকার আফজাল হোসেনের ছেলে। তার তিনটি ছেলের মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী। বুধবার বিকালে গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। জালাল হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বৃহত্তর দিনাজপুরের চার জেলার সকল রুটে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখে মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোশারফ হোসেন বিকালে বলেন, অন্যান্য এলাকায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলেও পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। আর দিনাজপুর মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ বাদশা বলেন, সহকর্মী জালাল উদ্দিনের হত্যার সঙ্গে জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের এদিকে ধর্মঘটে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। টার্মিনালে এসে গাড়ি না পেয়ে ফিরে যেতে হয় দূরপালস্নার যাত্রীদের। দিনাজপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকুরে নবিউল ইসলাম বলেন, তিনি নীলফামারী যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে এসে গাড়ি না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। এখন কোনো বিকল্পও পাচ্ছেন না। ঠাকুরগাঁও থেকে অফিসের কাজে দিনাজপুরে এসে ধর্মঘটে আটকা পড়ার কথা জানান সাব্বির হোসেন নামে একজন। তিনি বলেন, অফিস তো ধর্মঘটের যুক্তি মানবে না। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রম্নত সমাধানের ব্যবস্থা করা। নীলফামারী জেলা শহরের শাহীপাড়া মহলস্নার আব্দুল আজিজ চাকরি করেন ঢাকার একটি পোশাক কারখানায়। চার দিন আগে ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। ছুটি শেষে ঢাকার ফেরার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার নাবিল পরিহনের টিকিট কেটেছিলেন। কিন্তু সকালে কাউন্টারে এসে ধর্মঘটের কথা জানতে পারেন। নীলফামারীতে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন বগুড়ার রাহেদুল ইসলাম। বাড়ি ফেরার জন্য সকাল ৯টায় নীলফামারী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এসে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও যাওয়ার কোনো পথ বের করতে পারেননি তিনি। নীলফামারীর কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের শরিফুল ইসলাম চাকরি করেন দিনাজপুরে। বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরার জন্য বাস না পেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে তিনি সৈয়দপুর পর্যন্ত এগিয়েছেন। সেখান থেকে আবার অটোরিকশা বা অন্য কোনো বাহনে দিনাজপুরে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন তিনি। শরিফুল ইসলাম বলেন, ছুটি শেষ, আজকেই জয়েন করতে হবে। নাহলে পরে দুই দিন আবার বন্ধ। কিন্তু ভোগান্তির তো শেষ নেই। ঠাকুরগাঁওয়ে বাসের পাশাপাশি মাইক্রোবাস, ট্রাক, ট্যাংকলরি, ট্রাক্টরসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন শ্রমিকরা। হঠাৎ করে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। মন্দিরপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মিরাজ আলী বলেন, সকালে ঢাকা থেকে ট্রাকে করে তার মালামাল আসার কথা ছিল। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ট্রাক আর আসতে পারেনি। গোবিন্দনগর এলাকার আড়তের কাঁচামাল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, বুধবার স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে তিনি তিন ট্রাক টমেটো সংগ্রহ করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে সেগুলো ঢাকায় পাঠানোর কথা ছিল। এখন গরমের মধ্যে টমেটোগুলো নষ্ট হওয়ার অবস্থা। ঠাকুরগাঁও শহরের হলপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুসরাত জাহান বলেন, শ্রমিকরা ধর্মঘট করবে ভালো কথা, কিন্তু সেটা তো আগে থেকে জানাতে হবে। হঠাৎ করে এভাবে মানুষকে বিপদে ফেলার মানে কি। ঠাকুরগাঁও মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার বলেন, নিরপরাধ একজন বাস চালককে হত্যা করা হয়েছে; আমরা চাই এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের দ্রম্নত গ্রেপ্তার করা হোক। অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট চলবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে