বিএনপি জোটকে শক্তিশালী করতে নিজের প্রস্তুতির কথা জানালেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এলডিপি আয়োজিত 'মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে অলি আহমদ বলেন, 'বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে জেল থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া সম্ভব নয়। তারেক রহমানের পক্ষে লন্ডন থেকে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকাও সম্ভব নয়। সুতরাং আমাদেরই সেই দায়িত্ব নিতে হবে এবং আমি সেই দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুত।'
তিনি বলেন, 'আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, বিএনপিকে অনুরোধ করব, বিএনপি নেতাদের অনুরোধ করব; আপনারা নেতৃত্ব দেন, তা না হলে আমাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করুন। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বসে থাকলে চলবে না।'
অলি বলেন, 'বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক জায়গায় একত্রিত হোন। আমাদের হাতকে শক্তিশালী করুন। তা না হলে আপনাদের হাত শক্তিশালী করার জন্য আমাদের বলেন, আমরা সেটা করতে রাজি।'
তিনি বলেন, 'আমি মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিতে গিয়েও পারি নাই, এবার স্বৈরশাসকের হাতে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। বিএনপির যারা আছেন, আপনারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন। কারা কারা আসবেন, আমাদের সাথে আসেন।'
অলি বলেন, 'এলডিপিকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই। আপনারা নতুনভাবে এটার নামকরণ করেন। আমার নেতৃত্বে আসতে হবে, এটাও নয়। আপনাদের মধ্যে যদি কেউ নেতৃত্ব দিতে পারে, তার নেতৃত্বেও আমরা কাজ করতে প্রস্তুত; যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে জাতির কাছে। যে জাতির সঙ্গে বেইমানি করেনি, যার অভিজ্ঞতা রয়েছে, যে কারও সাথে আপস করবে না, দুর্নীতির কাছে মাথা নত করবে না। তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে আমার কোনো আপত্তি নেই।'
'বিএনপি সংসদে গিয়ে সরকারকে বৈধতা দিয়েছে' মন্তব্য করে দলটির সাবেক এ নেতা বলেন, 'এখানে ২০ দলীয় জোটের অনেকে আছেন। আপনাদের অনুরোধ করব, অন্যদিকে তাকানোর সুযোগ নেই। আপনারা এখানে মধ্যবর্তী নির্বাচনকে বিভিন্নভাবে ব্যাখা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আসলে আপনাদের এটার মূল স্পিরিটটা দেখতে হবে। বিএনপি সংসদে গেছে, এটাই হলো বাস্তবতা। বিএনপি এ সরকারকে বৈধতা দিয়েছে- এটাই হলো বাস্তবতা।'
তিনি বলেন, 'মধ্যবর্তী নির্বাচন মানে এটা নয় যে, আড়াই বছর পরে নির্বাচন হবে। এটা কালও হতে পারে, পরশুও হতে পারে। আপনাদের কে বলেছে আগামী নির্বাচনও এ সরকারের অধীনে হবে? এ সরকারের অধীনে তো আমরা নির্বাচন করে দেখলাম। এরা তো দিনের বেলা নির্বাচন করে না। কারণ তারা দিনের আলোতে ভয় পায়, রাতের বেলা অন্ধকারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তারা নিশাচর, তাই আমাদেরও মশাল হাতে নিয়ে বের হতে হবে। নিশাচরদের তালাশ করে বের করতে হবে।'
নজরুলকে মানতে নারাজ ইবরাহিম
এদিকে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। তিনি বলেন, 'আমার দৃষ্টিতে ২০ দলের প্রধান সমন্বয়কারী কর্নেল অলি আহমদ বীরবিক্রম। এটা আমি নির্বাচনের আগে বলেছি, কিন্তু এটা লিখিত, পঠিতভাবে বলা হচ্ছে না।'
২০ দলীয় জোটের কার্যকারিতা নেই বলে দাবি করে তিনি বলেন, '২০ দলীয় জোট এই মুহূর্তে কার্যকারিতার লেভেল থেকে নিচে আছে। এটাকে অ্যাফেক্টিভ করা হবে কি হবে না, জানি না। কবে হবে বা হবে না তার জন্য আমি বসে থাকতে পারব না।'
কল্যাণ পার্টি প্রধান বলেন, 'বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী ঘরের প্রত্যেকটা মানুষের অধিকার রয়েছে। তার মুক্তির জন্য ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন নেই। তবে সিদ্ধান্তের প্রয়োজন না থাকলেও আমি বলব ২০ দলীয় জোটে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই প্রত্যেকটা দল যেন আলাদাভাবে অনুষ্ঠান করে।'
বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য কার্যকর আন্দোলন দাবি করে বিএনপি জোটের এই শরিক নেতা বলেন, 'গণতন্ত্রের মুক্তি এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সমান্তরাল হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের মুক্তি হলে বেগম জিয়ার মুক্তি হবে। তবে ইলেকশনের জন্য বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি অপেক্ষা করতে হবে না। কারণ বেগম জিয়ার মুক্তির দাবি অগ্রাধিকার। এ জন্য আমাদের যা যা করণীয় তা করা দরকার।'
এলডিপির সভাপতি কর্নেল অলি আহমদের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া মোহাম্মাদ গোলাম পারোয়ার, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউলস্নাহ, নিলুফার চৌধুরী মনি প্রমুখ বক্তব্য দেন।