বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লিবিয়ায় ৫০০০ বাংলাদেশি অবরুদ্ধ

এ পর্যন্ত সেখানে ৬ জন অপহৃত নিখোঁজ আরও ৮ জন সেইফ হাউস করতে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দের আবেদন দেশে ফিরতে চান অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি
নূর মোহাম্মদ
  ২২ মে ২০১৯, ০০:০০
দেশে ফেরার অপেক্ষায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা-ফাইল ছবি

লিবিয়ায় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে নতুন করে বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রায় ৫ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ৬ জন বাংলাদেশি অপহরণসহ আরও অন্তত ৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন। অবহৃত বাংলাদেশিদের মুক্তির জন্য উচ্চহারে মুক্তিপণ চাওয়া হচ্ছে।

লিবিয়ার বর্তমান উত্তাল পরিস্থিতিতে সেখানে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার জন্য সেইফ হাউস খোলা জন্য সরকারের কাছে বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে লিবিয়ার বাংলাদেশি দূতাবাস। ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা, অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত এপ্রিল মাসে দুই দফা চিঠি দিয়ে লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের অবস্থান জানিয়েছেন দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) আ স ম আশরাফুল ইসলাম। দুটি চিঠিতে লিবিয়ার বর্তমান ভয়াবহতার কথা উলেস্নখ করে শ্রম কাউন্সিলর লিখেছেন, গত ৪ এপ্রিল লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের স্বঘোষিত লিবিয়ান আর্মি প্রধান জেনারেল খলিফা হাফতার ত্রিপলী দখলের ঘোষণা দেয়ার পরপরই পূর্বাঞ্চলীয় সাময়িক বাহিনীর সঙ্গে ত্রিপলীভিত্তিক সরকারের অনুগত বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। এ যুদ্ধে সরকারি হিসাব মতে প্রায় ২৪০ জন সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ১২০০ মানুষ আহত ও ৩৪ হাজার নাগরিক বাস্তুচু্যত হয়েছেন। মিসাইলের আঘাতে শত শত বাড়িঘর ধূলিস্যাৎ হওয়াসহ নানা মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। যুদ্ধটি লিবিয়ার রাজধানীর ত্রিপলী থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে হলে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভয়ঙ্কর নতুন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিমান হামলা, দূরপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং আত্মঘাতী হামলায় ত্রিপলীতে নতুন করে গৃহযুদ্ধ দেখা যাচ্ছে। নিজ নিজ স্বার্থে তেল সমৃদ্ধ এ দেশটির উভয়পক্ষের একাধিক বহিঃরাষ্ট্রেও প্রত্যক্ষভাবে সমর্থনের ফলে যুদ্ধের ভয়াবহ ও দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় লিবিয়ার বিদেশি মিশনগুলো যুদ্ধের এ পরিস্থিতিতে সতর্ক সংকেত-৪ (অষবৎঃ ষবাবষ-৪) হিসেবে চিহ্নিত করে দূতাবাসগুলো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে স্থানান্তর শুরু করেছে।

লিবিয়ার বাংলাদেশি দূতাবাস চিঠিতে উলেস্নখ করেছে, এবারের যুদ্ধটি দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় সম্ভাবনায় ২০১১ সালের মতো অধিকাংশ স্থানীয় কোম্পানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে প্রবাসী কর্মীদের বৃহৎ একটি অংশ দীর্ঘসময়ের জন্য কর্মসংস্থান হারাতে পারেন। অনেক প্রবাসী স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে আসতে চাইবেন। অন্যদিকে লিবিয়া পুলিশ, সমস্ত্র বাহিনী একত্র হয়ে যুদ্ধে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্য শহরের উপকণ্ঠে অবস্থানের কারণে ত্রিপলীতে আইন-শৃঙ্খলার মারাত্মক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। অস্ত্রধারী এবং সন্ত্রাসীরা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার ফলে শহরের আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। অপরাধ ও নির্যাতনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য অপহরণের শষ্কায় আরও বেশি তীব্র হচ্ছে। ফলে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইউরোপ এবং এশিয়ার (দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও ফিলিপাইন) দেশগুলোর মিশন ইতোমধ্যে তিউনিশিয়ায় স্থানান্তরিত করেছে। শুধু আফ্রিকা গুটি কয়েক প্রতিবেশী দেশ ও এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ মিশন এই সংকেটের মধ্যেও নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ও সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের কাজ করে যাচ্ছে।

লিবিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাস আরও জানায়, দেশটির মোট জনগণের ৩০ শতাংশ বা ২০ লাখ লোক ত্রিপলীতে বসবাস করেন। তাই সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ শহর ত্রিপলীতে ঢালাওভাবে উভয়পক্ষের বিমান হামলা শুরু হলে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। ত্রিপলী ও আশপাশের সম্ভব্য ঝুঁকিপূূর্ণ শহরগুলোতে প্রায় ৫০০০ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। যাদের অধিকাংশই যুবক শ্রেণির সাধারণ কর্মী। তাদের মধ্যে প্রায় ৬০টি পরিবার রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৫০০ বাংলাদেশি বিভিন্ন কেন্দ্রে আটকা পড়েছিলেন। এর মধ্যে ২৭৫ জনকে লিবিয়ান রেডক্রিসেন্টের সহায়তায় উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে বা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে এখন রেডক্রিসেন্ট আটকে পড়া এলাকায় প্রবেশ করতে পারছে না।

চিঠিতে বলা হয়, লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য কোনো সেইফ হাউস না থাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে ত্রিপলীতে নিরাপদ স্থানের সন্ধানে আসা বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএমের ত্রিপলীর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দূতাবাস পক্ষ থেকে বৈঠক করে স্থানান্তরিত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সেইফ হাউসের বিষয়ে সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু সংস্থাটি সেইফ হাউসের ব্যবস্থা করতে বা এরূপ অস্থায়ী বাসস্থানের নিরাপত্তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দূতাবাস একটি সাময়িক সেইফ হাউসের ব্যবস্থা করলে সেখানে আইওএমের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা যেমন শুকনা খাবার সামগ্রী, সুপেয় পানি প্রয়োজনীয় কাপড় ইত্যাদি দেয়ার ব্যবস্থা করবে। ফলে এ মুহূর্তে দূতাবাস থেকে সেইফ হাউস হিসেবে একটি বাসা ভাড়া করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এরূপ সেইফ হাউস ভাড়া করা হলে বাস্তুচু্যত বাংলাদেশিদের সাময়িক অবস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। যেহেতু ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ হতে তহবিল ত্রিপলীর মিশনের সেইফ হাউস খাতে কোনো বরাদ্দ নেই, তাই লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র সচিবের কাছে ২০ হাজার মার্কিন ডলার বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। যা জরুরিভাবে অস্থায়ী বাসস্থান, অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর প্রত্যাবাসনের আনুষঙ্গিক খরচ, খাবার পানি ও ওষুধ ইত্যাদি মানবিক সহায়তা খাতে খরচ মেটানো সম্ভব। আইওএম জানিয়েছে, তাদের অর্থায়নে লিবিয়া থেকে চার্টার্ড ফ্লাইট ভাড়া করে সরাসরি বিমানে ঢাকায় বাংলাদেশি প্রত্যাবাসনের তাদের সর্বপ্রকার সম্মতি রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কোনো বিমান ভাড়া পরিশোধের প্রয়োজন হবে না। তবে ফেরত যেতে ইচ্ছুক নাগরিকদের এক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থান থেকে বিমানবন্দর নিয়ে আসার প্রয়োজনীয় বাস ভাড়া দূতাবাসকেই বহন করতে হবে।

দূতাবাসের কর্মকর্তা জানান, ২০১১ সালে লিবিয়া যুদ্ধের সময় পাশের দেশ তিউনিশিয়া থেকে আইওএম অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশি কর্মীদের প্রত্যাবাসন করেছিল। এবার তিউনিশিয়া সরকার তাদের ভূ-খন্ড লিবিয়া থেকে কোনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহায়তা করতে রাজি নন। ফলে এ পরিস্থিতিতে আইওএম কর্তৃপক্ষকে লিবিয়া হতে সরাসরি ঢাকায় চার্টার্ড ফ্লাইট অপারেট করতে হবে। এ লক্ষ্যে যুদ্ধে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক তাদের আইওএমের সহায়তায় দেশে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশি দূতাবাস রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দূতাবাসের ফেসবুকে একটি ফর্ম আপলোড করা হয়েছে। সেখানে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন। তবে যারা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না তারা দূতাবাসে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর ফেরত ইচ্ছুক নাগরিকদের এক্সিট ভিসা নেয়া ও ভিসা ফি পরিশোধের সব ব্যবস্থা দূতাবাস থেকে করবে।

এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন যায়যায়দিনকে বলেন, লিবিয়ার পরিস্থিতি এখন একটু ভালোর দিকে। তারা প্রতিদিনই খোঁজ-খবর রাখছেন। এ পরিস্থিতির মধ্যে কোনো শ্রমিক দেশে ফিরতে চাইলে তিনি রেজিস্ট্রশন করে আইওএমের মাধ্যমে দেশে ফিরতে পারবেন। প্রবাসীদের নিরাপত্তায় সেইফ হাউসের জন্য লিবিয়া দূতাবাস যে বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে তা দেখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারাই সে সিদ্ধান্ত দেবেন।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50595 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1