শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোদির চ্যালেঞ্জ এবার কূটনীতি

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ মে ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২৬ মে ২০১৯, ০০:১৮
নরেন্দ্র মোদি

দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেই বিশ্বের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে কোন কোন বিদেশি অতিথি আসবেন, তা নির্দিষ্ট করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। চলছে আন্তর্জাতিক দৌত্যের ঠাসা কর্মসূচিতে দাগ মারাও। বিবদমান দেশগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে সম্পর্ক রাখা, বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি সামলানো, নিজের প্রথম ইনিংসে তৈরি ক্ষতের মেরামতি এবং নতুন করে পথ চলার মতো বহু চ্যালেঞ্জ মোদির সামনে। বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত ফল ঘোষণার অনেক আগেই রাষ্ট্রনেতাদের অভিনন্দন এসেছে। কূটনীতিকরা বলেন, সরকার বদলালেও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ধারাবাহিকতা রাখার চেষ্টা করা হয়। আর কোনো দেশের ভোটে যদি সেই সরকারই ফেরে, তা হলে সোনায় সোহাগা! ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভস্নলাদিমির পুতিন, ইমানুয়েল মাকরঁ, আবে শিনজো, শেখ হাসিনাদের আগাম বার্তা থেকে এই স্বস্তির বার্তাই স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ মে-র আগে যেখানে শেষ হয়েছিল, জুনে সেই বিন্দু থেকেই লাইন শুরু করার স্বস্তি। শপথ নেয়ার পরে পর-পর চীন, আমেরিকা, রাশিয়ার রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে বসবেন মোদি। কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক কারণে এই দেশগুলো আবার পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। জুনেই পিঠাপিঠি রয়েছে কিরঘিজস্তানে এসসিও শীর্ষ বৈঠক এবং জাপানের ওসাকায় জি-২০ সম্মেলন। আগস্টে মোদি যাবেন প্যারিসে জি-৭ বৈঠকে। ভারত ছাড়াও থাকবে অস্ট্রেলিয়া, চিলি, দক্ষিণ আফ্রিকা। ইউরোপে ভারতের অন্যতম কৌশলগত মিত্র ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁও থাকবেন সেখানে। ওসাকাতেই ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের কথা মোদির। আগামী বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই এই বছরটি ট্রাম্পের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের বিশাল বাজার আমেরিকার জন্য লোভনীয় ঠিকই, কিন্তু বাণিজ্য নীতির প্রশ্নে মতপার্থক্য ছাড়াও ইরান এবং রাশিয়া থেকে তেল এবং অস্ত্র আমদানির প্রশ্নে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নয়াদিলিস্ন-ওয়াশিংটন মতবিরোধ চলছে। এর মধ্যেই মোদি আমেরিকার সঙ্গে তার নতুন ইনিংসের প্রথম বলটি খেলবেন সেখানে। সূত্রের খবর, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানকে এড়িয়ে ভারত-আমেরিকা বোঝাপড়া গড়তে ট্রাম্পকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা থাকবে মোদির। জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে আমেরিকা এবং জাপানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও সারবেন মোদি। চীন, আমেরিকার বাণিজ্যযুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন একই মাসে চীনা প্রেসিন্ডেন্ট শি চিনফিং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক অনেকটা সরু তারের উপর দিয়ে হাঁটা বলে জানাচ্ছে দিলিস্নর বিদেশ মন্ত্রক। সম্প্রতি মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি তালিকায় ঢোকাতে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকা। চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত চীনও আপত্তি তুলে নেয়। এ বার দুটি দেশই বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে নিজ নিজ অভীষ্ট সিদ্ধ করতে চাইবে। চীনের ওবর মহাপ্রকল্পে ভারতকে সামিল করানোর জন্য প্রবল চাপ যে বেজিংয়ের তরফ থেকে আসতে চলেছে, এটা বিদেশ মন্ত্রকের অজানা নয়। এর পরের মাসেই মোদি মুখোমুখি হবেন হোয়াইট হাউসের শ্যেন নজরে থাকা রুশ প্রেসিডেন্টের। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় পূর্ব ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ভস্নাদিভস্তকে যাবেন মোদি। সেখানে পুতিনের সঙ্গে বার্ষিক বৈঠক করবেন। ইজরায়েল এবং রাশিয়া অস্ত্র রপ্তানির প্রশ্নে ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ দুই রাষ্ট্র। কিন্তু রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে ওয়াশিংটন। ২০১৪ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইজরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র, নিরাপত্তা, পানি সম্পদ, কৃষিপণ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা শুরু করেছিল মোদি সরকার। ফের তা বাড়ানোর চেষ্টা চলবে। অন্য দিকে পুরনো বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে বিগত মোদি জমানায় সম্পর্ক কিছুটা বেলাগাম হলেও ফের তাতে রাশ পরানো গিয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই হোক, বা চীনকে কিছুটা চাপে রাখা মস্কো নয়াদিলিস্নর কাছে জরুরি অস্ত্র। ভোটের মুখে দাঁড়ানো ট্রাম্পের কাছ থেকে জাতীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এই সব কূটনৈতিক ছাড়পত্র আদায়ের চেষ্টাও তড়িঘড়ি করতে হবে মোদিকে। আনন্দবাজার পত্রিকা।

এনডিএ নেতা নির্বাচিত

এদিকে দিল্লির সংসদের সেন্ট্রাল হলে শনিবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সমস্ত শরিক দল হাজির হয়ে এনডিএ জোটের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করেন নরেন্দ্র মোদিকে।

এনডিএ শীর্ষবৈঠকে হাজির ছিলেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা মুরলীমনোহর জোশী এবং লালকৃষ্ণ আদবানী। হাজির ছিলেন জনতা দল (ইউনাইটেড) নেতা নীতীশকুমার, লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান রামবিলাস পাসওয়ান, শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেসহ বিজেপি শরিক দলের শীর্ষনেতারাও।

নরেন্দ্র মোদিকে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করার পর তাকে পুষ্পস্তবক দিয়ে স্বাগত জানান বিজেপি ও অন্যান্য শরিক দলের নেতৃবৃন্দ। এর পর তাকে অভিনন্দন জানিয়ে ভাষণ দেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। একই সঙ্গে তিনি শরিক দলগুলোকেও পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তার পর বক্তব্য রাখতে ওঠেন নরেন্দ্র মোদি।

তিনি বলেন, ‘ভারতমাতার থেকে আর কোনো বড় দেবতা নেই আমাদের। পৃথিবী এখন এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে ভারতের পথিবীকে অনেক কিছু দেয়ার আছে। সারাবিশ্বেই ভারত একটা আশার নাম।’

নরেন্দ্র মোদি বলেন, এক যুগ সন্ধিক্ষণে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পেয়েছেন। ২০২২ সালে দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর।

তিনি বলেন, দেশের সংখ্যালঘু মানুষের সঙ্গেও ছলনা করা হয়েছে। ওদের শিক্ষা দেয়া হয়নি। কাল্পনিক ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে ওদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি দেশ থেকে ভেদাভেদ তুলে দেবেন। গরিব মানুষের টাকা নিয়ে নয়ছয় করা হচ্ছিল। তিনি এসে সেই সবকিছু বানচাল করে দিয়েছেন। সরাসরি গরিব মানুষের হাতে টাকা তুলে দিয়েছেন।

মোদি বলেন, ‘কোনো বিশেষ জাতি বা বর্ণ আমাকে জেতায়নি। আমাকে জিতিয়েছে দেশের জনতা। অনেক নতুন সঙ্গী আছেন। মিথ্যাবাদীদের হাত থেকে আপনাদের সচেতন করা আমার দায়িত্ব। অহঙ্কার সরিয়ে রেখে কাজ করতে হবে। কাউকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। নতুন ও পুরনো, সব সঙ্গীকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মিথ্যাবাদীদের এই দেশ ক্ষমা করবে না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে