বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের বকেয়া বিদু্যৎ বিল ৪ কোটি!

নতুনধারা
  ২৯ মে ২০১৯, ০০:০০
সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন -ফাইল ছবি

যাযাদি রিপোর্ট

প্রায় ১৫ বছর ধরে বিদু্যৎ বিলের এক টাকাও পরিশোধ করেনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (বার অ্যাসোসিয়েশন)। সুপ্রিম কোর্ট বলছে, বিল দেবে সমিতি আর সমিতি বলছে বিল দেবে সুপ্রিম কোর্ট। দুপক্ষের টানাহিঁচড়ায় বকেয়া পড়েছে চার কোটি টাকার বেশি বিদু্যৎ বিল।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বলছে, যেহেতু বিদু্যতের সুবিধা ভোগ করছেন আইনজীবীরা, সুতরাং তাদের বিল কেন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ দেবে? অন্যদিকে আইনজীবী সমিতির নেতারা বলছেন, বিদু্যৎ সুবিধা আইনজীবীরা ভোগ করলেও মিটারের মালিক সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার। যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের নামে মিটার তাই বিলও তারা পরিশোধ করবে।

জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টে প্রায় নয় হাজারেরও বেশি আইনজীবী রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই নিজ নিজ কক্ষে ফ্যান ও এসি ব্যবহার করেন। এজন্য তারা বিল পরিশোধের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত চার্জবাবদ টাকা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে জমা দেন। এরপরও কেন বিল বকেয়া রয়েছে, তা জানেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আইনজীবী।

সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বিদু্যৎ বিল পরিশোধের জন্য বার বার তাগিদ দিলেও সমিতি তা পরিশোধ করছে না। এ নিয়ে তিন পক্ষের মধ্যে (সমিতি, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ও বিদু্যৎ বিভাগ) দফায় দফায় চিঠি চালাচালি অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের প্রশাসন শাখা ও সুপ্রিম কোর্ট বার পরস্পরকে চিঠি দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই বকেয়া বিলের সুরাহা হচ্ছে না।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দাবি, সমিতির ভবন গণপূর্ত বিভাগের অধীনে নির্মিত ও রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে আসছে। সমিতি বিচার বিভাগের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। ফলে সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে বকেয়া পরিশোধের সুযোগ নেই। এ বিল পরিশোধের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের।

সূত্র জানিয়েছে, গত ১৫ বছরে নিয়মিত বিদু্যতের বিল পাঠানো হলেও পরিশোধ করেনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। ২০০৪ সালের জুলাই থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিদু্যৎ বিল দিচ্ছে না। ওই বছর থেকে আইনজীবী সমিতিকে বিদু্যতের প্রকৃত ব্যবহারকারী হিসেবে নিজস্ব তহবিল থেকে বিল পরিশোধের নির্দেশনা দেয়া হয়। এজন্য তখন সমিতির ভবনে আলাদা মিটার দিয়ে তা থেকে রেজিস্ট্রার জেনারেলের নাম বাদ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নাম প্রতিস্থাপন করা হয়। আলাদা মিটারের আলাদা হিসাব, আলাদা গ্রাহক নম্বর দেয়া হয় সমিতিকে। এর সঙ্গে ট্যাগ মিটারও রয়েছে।

ওই সময় থেকে গত ১৫ বছরে বিদু্যৎ বিল জমে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৩১ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৫ টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাট ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৮ এবং সারচার্জ যোগ হয় ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৯ টাকা। সব মিলে বকেয়া দাঁড়িয়েছে চার কোটি ১৬ লাখ ৩২ হাজার ১১২ টাকা।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সুপারিনটেনডেন্ট নিমেশ চন্দ্র দাস জানান, ১৯৭৪ থেকে ২০০৪ সালের জুন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিদু্যৎ বিল রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে পরিশোধ করা হতো। ২০০৪ সালের জুলাই থেকে রেজিস্ট্রার কার্যালয় সমিতির জন্য পৃথক মিটার ও হিসাব চালু করে। এতেই ঘটেছে যত বিপত্তি।

গত ৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) কাজী আরাফাত উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া বিল চার কোটি ১৬ লাখ ৩২ হাজার ১১২ টাকা। চিঠিতে বিদু্যতের মিটার থেকে রেজিস্ট্রারের নামের বদলে ব্যবহারকারী হিসেবে আইনজীবী সমিতির নাম প্রতিস্থাপন করতে অনুরোধ জানানো হয়।

গত ১৮ মার্চ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের এনওসিএস রমনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহসিন আবদুলস্নাহ এক চিঠিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া চার কোটি ১৬ লাখ ৩২ হাজার ১১২ টাকা পরিশোধের তাগিদ দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে। চিঠিতে বলা হয়, নিয়মিত বিদু্যৎ ব্যবহার করা হলেও বিল পরিশোধ করছে না সমিতি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমতাবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির হিসাব নম্বরের অনুকূলে বকেয়া বিল পরিশোধের অনুরোধ করা হলো।

ডিপিডিসির সচিব ও বিশেষ টাস্কফোর্সের প্রধান মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীও ২০১৫ ও ১৬ সালে বকেয়া বিদু্যৎ বিল পরিশোধে একাধিকার চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে বিল পরিশোধের ব্যর্থতায় বিদু্যৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথাও ছিল।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী বলেন, যেহেতু বিদু্যতের সুবিধা ভোগ করেন সমিতির সদস্যরা, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট কেন বিল দেবে? আর কত বছরের বিদু্যৎ বিল বাকি পড়েছে এবং টাকার পরিমাণ কত- সেটাও জানা নেই। বিষয়টা ভালো বলতে পারবেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের হিসাব বিভাগ।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আইনজীবী সমিতি যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের অংশ, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারের নামে সমিতির বিদু্যতের মিটারও, কাজেই তারাই রেগুলার বিল দেবে। আইনজীবীরা বিদু্যৎ সুবিধা নিলেও সমিতির পক্ষ থেকে বিল দেয়া হয় না কখনোই। এ কারণে হয়তো বিল বাকি পড়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি কখনো কোনো দিন বিল দেয়নি। এখন কেন বিল দেবে?

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আইনজীবীরা হলেন অফিসার অব দ্য কোর্ট। তাই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিচার বিভাগের অংশ। সুপ্রিম কোর্টের অংশ হিসেবে সমিতি ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ করে গণপূর্ত বিভাগ। সুপ্রিম কোর্ট অতীতেও সমিতির বিদু্যৎ বিল পরিশোধ করেছে। ডিপিডিসি যখনই বিল পাঠিয়েছে তখনই তা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বিল পরিশোধ করছে না বলেই ১৫ বছরের বকেয়া জমা পড়েছে। অথচ বিদু্যৎ বিল সুপ্রিম কোর্ট তথা সরকারের পরিশোধ করার কথা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<51672 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1