বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট উচ্চাভিলাষী ও জনবিরোধী : বিএনপি

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ জুন ২০১৯, ০০:০০
শুক্রবার বিকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসন কার্যালয়ে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় -যাযাদি

জাতীয় সংসদে সদ্য প্রস্তাবিত বাজেটকে 'উচ্চাভিলাষী' ও 'জনবিরোধী' বলে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করে, বাজেটে বিপুল ব্যয়ের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও সরকারের আয়ের সামর্থ্য কমে গেছে। প্রত্যেক বছরের শেষ দিকে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ যেভাবে কাট-ছাঁট করা হয় তাতে বিরাট আকারের এই বাজেটের অন্তঃসার শূন্যতাই প্রকাশ পায়। এছাড়া ঋণনির্ভর বাজেটে জনগণের উপর করের বোঝা চাপানো হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসন কার্যালয়ে বাজেটের এক আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। পরে মির্জা ফখরুলসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন।

নেতারা বলেন, এ বাজেটের পরিকল্পনা, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, খাতভিত্তিক বরাদ্দ ও সমস্যা নির্ধারণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের মদদপুষ্ট একটি শ্রেণিকে বিশেষ সুবিধা দিতেই এ বাজেট। এ নিয়ে গণমানুষের কোনো আগ্রহ নেই। জনমনে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। দেশবাসীর মূল সমস্যা বাজেটে স্থান পায়নি। বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতিকে প্রভাবিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতকে কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ বাজেট জনকল্যাণমুখী নয়। একজন ব্যবসায়ী অর্থমন্ত্রী এবার বাজেট দিয়েছেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো হয়নি।

শুরুতে লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ বাড়ছে। প্রতি বছরই বাজেটে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ঘাটতি মেটাতে ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। বাজেট বাস্তবায়নের হারেও দেখা যায় নিম্নমুখিতা। বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। কোথাও যেন আস্থার অভাব আছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারের ওপর কেউ আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ সরকারই যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় এবং এর ফলে  জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতাও নেই।

ক্ষমতাসীন সরকারকে অনির্বাচিত ও অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র অনির্বাচিত সরকার এখন বাংলাদেশে। তাই এই সরকারের বাজেট দেয়ার নৈতিক অধিকার নেই। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধও নয়। দেশের অর্থনীতি কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। তারা বাজেট প্রণয়ন করছে। তারা অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার তারাই সরকার পরিচালনা করছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঋণনির্ভর বাজেট দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে প্রকল্প ব্যয় বহুগুণ বাড়িয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। করের মাধ্যমে, ভ্যাটের মাধ্যমে বা অন্যান্য মাধ্যমে এই টাকা সরকার সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নেবে। অনির্বাচিত সরকার একটি অনির্বাচিত সংসদে এই বাজেট দিয়েছে। গণতন্ত্র না থাকায় সুশাসন নেই দেশে। সুশাসনের অভাবে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বন্ধ, শেয়ার বাজারে অস্থিরতা, ব্যাংকে তারল্য সংকট চলছে। সরকার দেশকে ঋণনির্ভর অর্থনীতির বৃত্তে আবদ্ধ করে রেখেছে। এই ঋণ শোধ দিতে দেশের মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। নাগরিকদের ভুগতে হবে চরমভাবে। রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বেকার বাংলাদেশে। প্রবৃদ্ধির যে কথা বলা হচ্ছে, তার সত্যতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্ন আছে। দেশের অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা একটি শ্রেণির কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে। সরকার জনগণকে বাইরে রেখে যেভাবে নির্বাচন করেছে, একইভাবে বাজেটও দিচ্ছে। যেভাবে জনগণ এই নির্বাচন গ্রহণ করেনি, তেমনি বাজেটও তারা গ্রহণ করবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, অবশ্যই এ বাজেট উচ্চবিলাষী ও জনবিরোধী। কারণ, এ বাজেটে জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বরং তাদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী উচ্চাভিলাষী বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাজেটের আকার বড় করার চমক সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। বাজেটের আকার কত বড় এ নিয়ে আর জনমনে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। কেননা প্রত্যেক বছরের শেষ দিকে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ যেভাবে কাট-ছাঁট করা হয় তাতে বিরাটাকার বাজেটের অন্তঃসার শূন্যতাই প্রকাশ পায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা হয়েছে। আয় ও সম্পদের বৈষম্য বেড়েছে। বিদ্যমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও বেড়েই চলেছে। উপকৃত হচ্ছে সরকারদলীয় কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। নব্য ধনিক শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছে। ধনী সৃষ্টিতে বাংলাদেশ বিশ্বমানচিত্রে ১ নম্বরে রয়েছে। আর এ সকল ধনিক শ্রেণির সকলেই সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট। সংসদেও গরিব সাধারণের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে। ধনিক ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থই রক্ষিত হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে। আয় বৈষম্যের চেয়ে সম্পদ বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে। এটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাজেটে সোনার দাম কমানো হয়েছে যা ব্যবহার করে সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণি। অথচ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ সেই মোবাইল, সিম ও সার্ভিসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাজেটে অর্থমন্ত্রী সিগারেটের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু সিগারেটের উপর শুল্ক না বাড়ায় সিগারেট কোম্পানির ৩১ শতাংশ আয় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে! অথচ সারা বিশ্বে সিগারেট নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ এক শুভংকরের ফাঁকি।

তিনি বলেন, এ  মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হলেও হতাশ কৃষক ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসা, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ না বাড়া, ফি বছর বেকারত্বের হার বৃদ্ধির কারণেও উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারকে যারা ক্ষমতায় বসিয়েছে তাদের জন্যই এই বাজেট।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বাজেটে কৃষকদের দুঃখ নিয়ে কোনো কথা নেই। বাজেটে যত বড় প্রজেক্ট তত বড় দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বাজেটে বাংলাদেশের জনগণকে করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অগণতান্ত্রিক ও অনির্বাচিত সরকারের বাজেটও জনবিরোধী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53682 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1