শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আ'লীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় ৬ নেতা

ফয়সাল খান
  ১৯ জুন ২০১৯, ০০:০০

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছে দলটি। এ লক্ষ্যে রোজার আগে থেকেই নিজ নিজ বিভাগে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের তৎপরতায় চাঙ্গা হতে শুরু করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। এখনো দিন তারিখ ঠিক না হলেও আগামী অক্টোবরে হতে পারে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন।

তবে বরাবরের মতোই সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। সম্মেলনে কে হবেন দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক- তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। এ পদের ঘুরে ফিরে বর্তমান সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সুস্থ থাকলে এ পদে পরিবর্তনের তেমন সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে অথবা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা থাকলে এ পদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হওয়ার পর থেকে এ পদ নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। সুস্থ হওয়ার পর বর্তমানে সরকার পরিচালনা ও দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন তিনি। ঈদের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে দলের নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ও করেছেন তিনি। তাই এ পদে পরিবর্তনের খুব বেশি সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

তারা বলছেন, ওবায়দুল কাদেরের প্রাণশক্তি কমেনি। তিনি আগের মতোই দলের হাল ধরেছেন। তারপরও বয়স বিবেচনায় সরকার ও দলের গুরু দায়িত্ব পালন নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে বলে মনে করেন অনেকে। তারা বলছেন, বর্তমান শারীরিক অবস্থায় তার ওপর দল ও সরকারের বাড়তি কাজের চাপ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম থাকলেও নানাভাবে দলীয় সভাপতি ও নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গণভবন ও তৃণমূলে তাদের যাতায়াত বেড়েছে। দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়েও নিয়মিত সময় দিচ্ছেন তারা। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে নিজেদের রাজনৈতিক সক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ারও চেষ্টা করছেন।

গত সম্মেলনের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে এবারও সামনে চলে এসেছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের নাম। নেতাকর্মীদের কাছে সজ্জন হিসেবে পরিচিত ড. রাজ্জাক ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দায়িত্ব পালন করেছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের ইশতেহার প্রণয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সম্মেলনকে সামনে রেখে দলীয় ও সরকারি বিভিন্ন কর্মকান্ডে ড. রাজ্জাকের তৎপরতা বেড়েছে। মন্ত্রণালয় সামলানোর পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও।

গঠনতন্ত্র (২৫ এর গ) অনুযায়ী ওবায়দুল কাদেরের অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ও সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠকসহ দলের দিবস কেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃণমূলে সাংগঠনিক সফরও করেছেন। ওবায়দুল কাদেরের অনুপস্থিতিতে সাংগঠনিকভাবে নিজেকে মেলে ধরেন হানিফ। যশোর, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বেশ কয়েকটি জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় অংশ নেন। এ ছাড়া নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও সদর উপজেলায় ফণীর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমানকে মনোনয়ন না দিয়ে সারাদেশের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। কোনো ধরণের ক্ষোভ প্রকাশ না করে অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন তারা। নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে তাদের সক্রিয় ভূমিকা সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। পরবর্তীতে মনোনয়ন বঞ্চিত এই দুই নেতাসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে দলটির একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম মনোনযন বঞ্চিত কেন্দ্রীয় নেতাদের কাজের ব্যাপারে প্রশংসা করেন। এ ব্যপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী তাদের পুরষ্কৃত করার আশ্বাস দেন।

তাদের মধ্যে দলের অন্যতম জাহাঙ্গীর কবির নানক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা থেকে শুরু করে নিয়মিত সময় দিচ্ছেন দলীয় কর্মকান্ডে। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হয়ে দেশের বাইরে থাকাকালীন সময়ে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ রংপুরের কয়েকটি উপজেলায় সম্মেলন নিয়ে কাজ করছেন। রাজধানীতেও বিভিন্ন দলীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। তাছাড়া ডাকসু নির্বাচন ও ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন কার্যক্রমও তদারকি করেছেন তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। সময়-সুযোগ পেলেই আগামীর রাজনীতির জন্য নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন তিনি। সাংগঠনিকভাবে নিজের দায়িত্ব পালনেও বেশ তৎপর। সম্প্রতি যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। সর্বশেষ জটিল অবস্থায় থাকা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিষয়টিও সমন্বয় করছেন। এর আগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খুলনা বিভাগের সব জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতাদের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার আয়োজন করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও দলীয় রাজনীতিতে খুব সক্রিয়। রাজনীতিতে ধারাবাহিকতা ধরে দলে ও সরকারে বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন তিনি। আগামী সম্মেলনকে ঘিরে হাছান মাহমুদের তৎপরতাও বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সরকারি বা বেসরকারি অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিচ্ছেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে ঘায়েল করে বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ইসু্যতে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রায়ই সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রচার উপ-কমিটির ব্যানারে নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করে যাচ্ছেন। এ কমিটির উদ্যোগে ইফতার আয়োজন করেও বেশ সাড়া ফেলেছে। চট্টগ্রামে দলের বর্ধিত সভায়ও অংশ নেন।

সম্মেলন ঘিরে এক অদৃশ্য তৎপরতা থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন না নেতারা। তারা বলছেন, আগামী অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে তৃণমূলে সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<54291 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1