বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সোহেল তাজের ভাগ্নে সৌরভকে ময়মনসিংহ থেকে উদ্ধার

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে যাওয়া হয় তাকে
যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ জুন ২০১৯, ০০:০০
ইফতেখার আলম সৌরভ

চট্টগ্রাম থেকে 'নিখোঁজ' হওয়ার ১১ দিন পর বাবা-মায়ের কাছে ফিরেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজের ভাগ্নে ইফতেখার আলম সৌরভ।

বৃহস্পতিবার ভোরে ময়মনসিংহের তারাকান্দায় একটি রাইস মিলের সামনে একটি গাড়ি থেকে সৌরভকে ফেলে যাওয়া হয়।

পরে পুলিশের পাহারায় ২৮ বছর বয়সী এই যুবককে ঢাকার বনানীতে সোহেল তাজের বাসায় মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

গত ১১ দিন সৌরভের কোথায় কিভাবে কেটেছে, সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার শুধু বলেছেন, সৌরভকে কোথাও আটকে রাখা হয়েছিল।

আর সৌরভের মামা সোহেল তাজ বলেছেন, তারাকান্দায় ফেলে যাওয়ার সময় তার ভাগ্নের হাত-পা ও চোখ ছিল বাঁধা; পরনে ছিল শুধু পায়জামা।

সোহেল তাজের মামাতো বোনের ছেলে সৌরভ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন; ঢাকায় ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভাসির্টিতে পড়াশোনার পর চট্টগ্রামের একটি স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করছিলেন।

গত ৯ জুন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার আফমি পস্নাজার সামনে থেকে নিখোঁজ হন সৌরভ। তার পরিবার অভিযোগ করে, ঢাকার এক ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের জের ধরে তাকে অপহরণ করা হয়েছে।

এর পেছনে সরকারি কোনো বাহিনীর কর্মকর্তার হাত রয়েছে বলেও এক ফেসবুক পোস্টে সন্দেহ প্রকাশ করেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।

এরপর সোমবার সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান ও বাবা সৈয়দ মো. ইদ্রিস আলমকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তিনি।

সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৮ জুন দুপুরে সৌরভের কাছে একটি ফোন আসে। তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে সব কাগজপত্র তৈরি রাখতে বলা হয়। পরদিন বেলা ৩টায় আবার ফোন করে সৌরভকে চট্টগ্রাম মিমি সুপার মার্কেটের আগোরার সামনে থাকতে বলা হয়।

সন্ধ্যা ৭টায় চাকরির প্রয়োজনীয় কাগজ, পাসপোর্ট দিতে গিয়ে আমার ছেলে আর ফিরে আসেনি। তার মোবাইল বন্ধ।

ওই ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এর আগেও কয়েকবার সৌরভকে তুলে নিয়ে গিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয় সেই সংবাদ সম্মেলনে।

পরদিন মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ কাজ শুরু করেছে, সৌরভকে শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

এরপর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ফেসবুক লাইভে এসে সৌরভের উদ্ধার হওয়ার খবর জানান মামা সোহেল তাজ।

তিনি বলেন, ভোর ৫টা ২৭ মিনিটে সৌরভের মায়ের কাছে একটি ফোন আসে। সেখানে বলা হয়, সৌরভকে একটি গাড়ি থেকে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সোহেল তাজ এরপর চট্টগ্রামে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপকমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। উপকমিশনার যোগাযোগ করেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারের সঙ্গে। পরে পুলিশ সুপার নিজে গিয়ে সৌরভকে পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে নেন।

বিপদের সময় সঙ্গে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সোহেল তাজ ফেসবুক লাইভে বলেন, এ রকম ঘটনা আর কারও ক্ষেত্রে ঘটবে না বলেই তিনি আশা করছেন।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, তারাকান্দার বটতলা এলাকার জামিল রাইস মিলের সামনে সৌরভকে ফেলে যাওয়া হলে ওই মিলের এক কর্মচারী বিষয়টি সৌরভের পরিবারকে জানায়।

সৌরভ কেমন আছে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার তখন বলেন, 'সে বর্তমানে সুস্থ আছে, এই মুহূর্তে এর বেশি বলতে পারছি না, কারণ তার সাথে কথা বলার মতো অবস্থা হয়নি। সে বলেছে যে সে পরে কথা বলবে।'

এই ১১ দিন কোথায় কিভাবে ছিলেন- সে বিষয়ে সৌরভ কিছু বলছেন কি না, তা জানতে চেয়েছিলেন একজন সাংবাদিক।

উত্তরে শাহ আবিদ হোসেন বলেন, সে এটা বলতে পারে না। তবে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল, এটাই বলেছে শুধু।

\হসে আসলে কোনো কিছুই এ মুহূর্তে বলতে পারছে না। তার বাহ্যিকভাবে কোনো সমস্যা আমরা দেখছি না। আমরা খাবার খাইয়ে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।

সৌরভকে কারা সেখানে ফেলে রেখে গেছে- এই প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, এটা তদন্তের বিষয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবারও ফেসবুক লাইভে আসেন সোহেল তাজ। প্রথমে তিনি বনানীর বাড়ির সামনে অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

সৌরভ কেমন আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সৌরভের কনডিশন ভালো ছিল না, যেটা শুনতে পাচ্ছি, ওকে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ওর গায়ে কোনো জামা ছিল না, শুধু পায়জামা পরা ছিল। চোখ বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে।'

সোহেল তাজ জানান, সৌরভকে উদ্ধার করার পর ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার তাকে নিজের বাসায় নিয়ে যান।

এসপি সাহেব উনার বাসায় নিয়ে গোসলের ব্যবস্থা করে দেন। এবং কিছু নাশতার ব্যবস্থা করে দেন, কারণ ও ক্ষুধার্ত ছিল। ও তো বুঝেই উঠতে পারেনি ও কোথায়। কারণ আপনারা তো বুঝতেই পারছেন, ও কি অবস্থায় ছিল।

সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগে বলেছিলেন, যদি সৌরভকে মুক্ত করে দেয়া না হয়, তাহলে যারা তাকে ধরে নিয়ে গেছে, তিনি তাদের নাম বলবেন। এখন সৌরভের মুক্তির পর তিনি কী করবেন- তা জানতে চেয়েছিলেন একজন সাংবাদিক।

জবাবে সোহেল তাজ বলেন, ১১ দিন ধরে ছেলেটি নিখোঁজ ছিল। এখন সময় হচ্ছে এই ফ্যামেলির মুখে একটু হাসি দেখা। এখন এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় না। আমরা এখন জাস্ট ছেলেটাকে রিসিভ করতে চাচ্ছি। ... ওকে একটু স্বস্তি দেয়া।

আপনারা বুঝতে পারছেন, ও যেখানেই ছিল, ও শান্তিতে ছিল না। ও যেখানেই ছিল, ও অলরেডি আমাকে আভাস ইংগিত করেছে, ওর কি দুরবস্থা ছিল। আমি ওকে আশ্বস্ত করেছি, ওর ওপর কোনো ধরনের চাপ দেয়া যাবে না, ও মানসিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত। আমরা এ বিষয় নিয়ে এখন আলাপ করব না।

সোহেল তাজ ফেসবুক লাইভে থাকতে থাকতেই একটি মাইক্রোবাসে করে পুলিশ পাহারায় সৌরভকে বনানীর ওই বাসায় নিয়ে আসা হয়। গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে মাকে এবং পরে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে দেখা যায় সৌরভকে।

সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত থাকলেও সৌরভ তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। মা-বাবা আর মামার সঙ্গে তিনি লিফটে ওঠার পর সোহেল তাজের ফেসবুক লাইভ শেষ হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<54559 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1