শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
তদন্ত প্রতিবেদন

জাহালমের কারাভোগের দায় দুদকেরই

যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় উপস্থিত ছিলেন জাহালম -যাযাদি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কর্মকর্তার ভুলের কারণে আসামি না হয়েও জাহালমকে কারাভোগ করতে হয়েছে বলে দুদকেরই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়েছে, 'জাহালমকে আবু সালেকরূপে চিহ্নিত করার যে ভুলটি হয়েছে, তা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণেই ঘটেছে।'

বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিলের পর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন রেখেছে।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। জাহালমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।

জাহালমকান্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য গত ১৭ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদন চেয়েছিল আদালত। আদেশ অনুযায়ী দুদকের তদন্ত কমিটির প্রধান আবুল হাসনাত মো. আব্দুল ওয়াদুদের প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার আদালতে দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদনে কমিটির প্রধান বলেন, 'সার্বিক বিবেচনায় আমার নিকট প্রতীয়মান হয়েছে যে, জাহালমকে আবু সালেকরূপে চিহ্নিত করার যে ভুলটি হয়েছে, তা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণেই ঘটেছে।'

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ অলম খান প্রতিবেদনের বিষয়ে বলেন, 'আমার কছে মনে হয়েছে যে, সমন্বয়হীনতার কারণেই এমনটা হয়েছে। জাহালম তিন বছর জেল খেটেছে- এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এখন এর জন্য কে কতটুকু দায়ী তা আদালত নির্ধারণ করবেন।'

আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত বলেন 'দুদক স্বচ্ছভাবেই তদন্তটা করেছে বলে আমি মনে করি। প্রকৃত দোষীদের বের করে আনার জন্য তদন্তে সঠিক প্রয়াস ছিল বলেই মনে হয়েছে। ভবিষ্যতে দুদক যাতে এরকম ভুল আর না করে তার জন্য সুপারিশও আছে প্রতিবেদনে। সেই সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন হলে এমনটা আর ঘটবে না বলে আমি মনে করি। যেখানে দুদক নিজেই নিজেদের দায় স্বীকার করে নিয়েছে।'

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে।

জানুয়ারির শেষ দিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত আদালতের নজরে আনলে দুদকের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কারাগারে থাকা 'ভুল' আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেয়া হবে না এবং তাকে মুক্তি দিতে কেন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত একটি রুলও জারি করা হয়।

এরপর দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুঃখ প্রকাশ করে ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেন। আদালতের আদেশে ৩ ফেব্রম্নয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।

পাটকল শ্রমিক জাহালমের তিন বছর কারাগারে থাকার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল কি না- তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দুদক।

তবে হাইকোর্টে দুদকের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন।

কিন্তু দুদকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে ৩৩টি মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্রসহ (সিএস) যাবতীয় নথি তলব করে হাইকোর্ট।

দুদকের কার্যক্রমে উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলে, ইঁদুর ধরতে না পারলে সেই বিড়ালের প্রয়োজন নেই।

পরে আরেক অদেশে গত ১৭ এপ্রিল আসামি না হয়েও জাহালমের কারাভোগের জন্য কে বা কারা দায়ী তা দেখতে দুদকের কাছে প্রতিবেদন চায় হাইকোর্ট।

সে প্রতিবেদনই বৃহস্পতিবার দাখিল করা হয় আদালতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<57787 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1