বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
তথ্য সরবরাহে লুকোচুরি

ডিআরসি পাচ্ছেন না সাড়ে ৫ লাখ যানবাহন মালিক

ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো দেখতে ডিজিটাল 'বস্নুবুকে' রয়েছে গাড়ি মালিকের ছবি, স্বাক্ষর ও বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ। গাড়ির সংক্ষিপ্ত বিবরণের পাশাপাশি এক্সেল লোডও লেখা থাকছে ডিজিটাল বস্নুবুকে
কিশোর সরকার
  ১৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যানবাহন চুরি বন্ধে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি) বা 'ডিজিটাল বস্নুবুক' চালু করলেও সে সুবিধা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। সারা দেশে ৪০ লাখ যানবাহনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৫ লাখের ডিআরসি দিয়েছে বিআরটিএ। আর সাড়ে ৫ লাখ যানবাহনের জন্য টাকা জমা দিলেও বছরের পর বছর ঘুরেও ডিআরসি পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। তবে টাকা জমা নেয়ার পরেও কতো যানবাহনের ডিআরসি এখনো দেয়া সম্ভব হয়নি তার সঠিক সংখ্যা না দিয়ে সকলকে অন্ধকারে রাখতে চাচ্ছে বিআরটিএ ও বিএমটিএফ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ মেশিন টুলস্‌ ফ্যাক্টরি লিমিটেডের (বিএমটিএফ) সাথে ২০১৩ সালে দেশে প্রথম ডিজিটাল ডিআরসি বা 'ডিজিটাল বস্নুবুক' সরবরাহে চুক্তি হয় বিআরটিএ'র। তবে ডাটা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএস তথ্য দিতে দেরি করায় কার্ড তৈরির কাজ ২০১৪ থেকে শুরু করা হয়েছে বলে বিএমটিএফ'র পক্ষ থেকে জানানো হয়। আর এই ডিআরসি কার্ড সরবরাহের জন্য তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ডিআরসি কার্ড তৈরির জন্য বাংলাদেশ মেশিন টুলস্‌ ফ্যাক্টরি লিমিটেডের সাথে চুক্তি রয়েছে টাইগার আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু বিএমটিএফ'র সাথে বিআরটিএ চুক্তি দেখালেও মূলত কার্ড তৈরি কাজটি করছে টাইগার আইটি। অভিযোগ রয়েছে টেন্ডার ছাড়া কাজ নেয়ার জন্য মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির নাম ব্যবহার করে ডিআরসি তৈরির কাজ নিয়েছে টাইগার আইটি। আর প্রতিটি কার্ড তৈরি বাবদ টাইগার আইটি বা বিএমটিএফকে ৫৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। যা বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অথচ বিএমটিএফ'র নাম ভাঙিয়ে টাইগার আইটি কার্ড আমদানিতেও শুল্ক বিভাগ থেকে বিশেষ সুবিধা নিচ্ছে।

তবে বিএমটিএফ'র ডিআরসি প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল রেজা বলেন, টাইগার আইটি সহযোগিতা করলেও কাজটি তারাই করছেন। আর ডিআরসি তৈরির মেশিন বিএমটিএফ'র মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

টাকা জমা দিয়েও বিপুল সংখ্যক যানবাহনের ডিআরসি না পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশ থেকে কার্ড আনতে সমস্যা হয়েছে। চট্টগ্রাম পোর্টে কাস্টম সমস্যার কারণে কার্ড খালাশ করতে দেরি হয়েছে। এখন কার্ড হাতে পৌঁছে গেছে এ ছাড়া নতুন মেশিনও স্থাপন করা হয়েছে। তাই আগামী মাস দু-একের মধ্যে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।

এদিকে যানবাহনের রেজিস্ট্রেশনের শুধু একটি কাগজে বিআরটিএ সিল দিয়ে লিখে দেয়া এবং বছরের পর বছর তারিখ পরিবর্তন করে দেয়ায় সড়কে নানাভাবে ট্রাফিক পুলিশের কাছে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

পুলিশি হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে সার্জেন্ট মামুন বলেন, বিআরটিএর সিল থাকলেও অনেক সময় ধরা যায় না কাজটি সঠিক কি না। বিআরটিএ কিছুদিন পর পর আবেদনকারীদের ডিআরসির একনলেজমেন্ট স্স্নিপে সময় বাড়িয়ে কাগজের অবস্থাও বেহাল হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সবাই ভালো মানুষ এটা বলা যাবে না। আর স্মার্ট কার্ড ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে নির্ধারিত সময়ে ডিআরসি সংগ্রহ না করার অজুহাত তুলে ট্রাফিক সার্জেন্টরা গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ নিয়ে যানবাহন মালিকদের ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ডিআরসির'র জন্য মুনতাহা ইস্টিলের একটি গাড়ি মালিক টাকা জমা দেয়। কিন্তু এখনো ডিআরসি না পাওয়ায় প্রায়ই রাস্তায় ট্রাফিক সার্জেন্টদের হয়রানির শিকার হচ্ছে।

ব্যক্তিগত গাড়ির ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি) পেতে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে গত বছরের ২২ ফেব্রম্নয়ারি রাজধানীর মিরপুরস্থ বিআরটিএ কার্যালয়ে আবেদন করেন চক্ষু চিকিৎসক ইমাম হোসেন। এর প্রায় তিন মাস পর তার বায়োমেট্রিকস (চার আঙুলের ছাপ, ডিজিটাল ছবি ও স্বাক্ষর) নেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। নির্ধারিত দিনে হাজির হয়ে বায়োমেট্রিক্স দেয়ার পর তাকে ২৮ সেপ্টেম্বর ডিআরসি সংগ্রহের জন্য একটি স্স্নিপ ধরিয়ে দেয় বিআরটিএ। তবে এর পর আরও ছয় মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত তিনি ইলেকট্র্রনিক চিপযুক্ত উচ্চনিরাপত্তা ফিচারসমৃদ্ধ ডিআরসি হাতে পাননি। যদিও এর মধ্যে তা প্রাপ্তির সময় দু দফা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ডিআরসি জোগাড়ে একই ধরনের ভোগান্তির কথা জানান ধানমন্ডির বাসিন্দা বিলকিস আফরোজা। তার অভিযোগ, কোনো ধরনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা না দিয়ে বিআরটিএ তাকে ডিআরসি দিতে এক বছর ধরে ঘোরাচ্ছে। যদিও এ সময়ে তাকে তিন দফা সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ নির্ধারিত সময়ে ডিআরসি সংগ্রহ না করার অজুহাত তুলে ট্রাফিক সার্জেন্টরা এরই মধ্যে তার গাড়ির বিরুদ্ধে দুইবার মামলা করেছেন। যানবাহনের মালিক-চালকরা জানান, বছরের পর বছর ঘুরে তারা মেশিন রিডেবল ডিজিটাল বস্নু-বুক না পাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এতে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে যানবাহন মালিক-চালকের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। তবে এসব অভিযোগের জবাবে বিআরটিএ বলছে, গাড়ি চুরি বন্ধ ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে মালিকানা নির্ধারণে কাগুজে বইয়ের বদলে ছয় বছর ধরে দেয়া হচ্ছে মেশিন রিডেবল ডিজিটাল বস্নুবুক। আর এসব তৈরি করছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। এর কার্ড আনা হচ্ছে বিদেশ থেকে। গত দুই বছর কার্ড সংকট থাকায় ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দিতে তাদের কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে এ সংকটের সমাধান হওয়ায় এ সমস্যা আর থাকবে না।

উলেস্নখ্য, ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো দেখতে ডিজিটাল 'বস্নুবুকে' রয়েছে গাড়ির মালিকের ছবি, স্বাক্ষর ও বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ। গাড়ির সংক্ষিপ্ত বিবরণের পাশাপাশি এক্সেল লোডও লেখা থাকছে ডিজিটাল বস্নুবুকে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো সহজে বহনযোগ্য এ স্মার্ট কার্ডই গাড়ির মালিকানার সপক্ষে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট হিসেবে গণ্য। ডিজিটাল এ 'বস্নুবুকে' বারকোড ও মালিকের সেলফোন নম্বর উলেস্নখ করা হচ্ছে।

তবে লাখ লাখ যানবাহনের মালিককে ডিআরসি দেয়ার নামে বছরের পর বছর হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, এর দায়দায়িত্ব বিএমটিএফের। তবে মানুষের গালমন্দ তাদেরই শুনতে হচ্ছে। তবে বিএমটিএফকে বলা হয়েছে যত দ্রম্নত সম্ভব যানবাহন মালিকদের তাদের কার্ড বুঝিয়ে দেয়ার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<58724 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1