যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘুদের নিয়ে প্রিয়া সাহার দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান লোক উধাও হয়ে গেছে। তার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। মুসলিম উগ্রবাদীরা এ কাজ করেছে।
প্রিয়া সাহা মার্কিন সরকারের আয়োজিত ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও যোগ দিয়েছেন। তিনি ট্রাম্পের কাছে যে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন, এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায়। তার এই মিথ্যা ও কল্পিত গল্পের পেছনে বাংলাদেশকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্য স্পষ্ট।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। এখানে সব ধর্মের লোকেরা যুগ যুগ ধরে শান্তিতে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের এই মানবিক মনোভাব ও উদারতা সারা বিশ্বে প্রশংসা পাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার আশা করে, এ ধরনের বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজকরা এমন ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাবেন, যারা সত্যিকার অর্থে ধর্মীয় স্বাধীনতার মূল্য বাড়াতে অবদান রাখবেন।
প্রিয়া সাহার
বক্তব্য দেশদ্রোহী : কাদের
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার অভিযোগ অসত্য এবং গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, এ বক্তব্য শুধু নিন্দনীয় অপরাধ নয়, সাম্প্রদায়িক শক্তির জন্য উসকানিমূলক। দেশদ্রোহী এ বক্তব্যের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এর প্রক্রিয়া চলছে।
শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। সাধারণ সম্পাদক বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ নিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর আর কিছু বলার থাকে না। আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের কোনো সংগঠনে প্রিয়া সাহার প্রাথমিক সদস্য পদও নেই বলে জানান তিনি।
প্রিয়া সাহা দেশে ফিরলে
জিজ্ঞাসাবাদ : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ কোন উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে তুলেছেন, দেশে ফিরলে সে বিষয়ে প্রিয়া সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেছেন, 'এ ধরনের খবর দেয়ার পেছনে তার নিশ্চয়ই একটি কারণ ও উদ্দেশ্য রয়েছে। দেশে আসলে নিশ্চয়ই আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করব।'
ওয়াশিংটনে গিয়ে তোলা প্রিয়া সাহার অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে শনিবার ঢাকায় নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, তার উদ্দেশ্যটা কী, এটা আমাদের দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোথায় ঘটনাগুলো ঘটেছে এবং কার কার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তার সঠিক আমরা তদন্ত করি নাই বা করেছি, সেগুলো আমরা অবশ্যই দেখব।
অভিযোগ বিশেষ
মতলবে: মোমেন
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা প্রিয়া সাহা ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে করেছেন, তা নাকচের পাশাপাশি এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
তিনি বলেছেন, 'প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে যে অভিযোগ করেছেন, তা একেবারেই মিথ্যা। বিশেষ মতলবে এমন উদ্ভট কথা বলেছেন তিনি। আমি এমন আচরণের নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'
মোমেন শুক্রবার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে এক সমাবেশে যোগ দিয়ে লন্ডন রওনা হওয়ার আগে একথা বলেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী 'ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত বুধবার হোয়াইট হাউজে গিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ওই অভিযোগ করেন প্রিয়া সাহা।
প্রিয়া সাহার অভিযোগের অসারত তুলে ধরতে মোমেন বলেন, বাংলাদেশে সরকারী কর্মচারীদের ২৫ শতাংশ হচ্ছে ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু, যদিও তারা মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ।
তিনি বলেন, ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করেছেন। তাই প্রিয়া সাহার বক্তব্য যে অন্তঃসারশূন্য এবং বিশেষ উদ্দেশ্যে জঘন্য মিথ্যাচার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এ ধরনের অভিযোগে প্রকারান্তরে শান্তিপূর্ণ সমাজে বিশৃঙ্খলা উষ্কে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তা কখনও হতে দেবে না।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন 'যাদের সহ্য হচ্ছে না', সেই গোষ্ঠির উদ্দেশ্য পূরণেই প্রিয়া সাহা এই অভিযোগ করেছেন বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রিয়া সাহার বক্তব্য তার
নিজস্ব : রানা দাশগুপ্ত
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, তাদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে 'সংখ্যালঘু নিপীড়নের' যে অভিযোগ করেছেন তা একান্তই তার নিজস্ব বক্তব্য, সংগঠনের নয়।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের প্রিয়া সাহা যেসব কথা বলেছেন, তা বাংলাদেশের হাজার বছরের চেতনা বিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের দর্শনকে অস্বীকার ও অবজ্ঞা করার সামিল।
একমত নয়
হিন্দু সম্প্রদায়
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নির্যাতনের বিষয়ে যে অভিযোগ করেছেন তার এ বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় একমত নয় বলে জানিয়েছে শ্রীকৃষ্ণ সেবা সংঘ।
শনিবার সংঘের আহ্বায়ক নকুল চন্দ্র সাহা ও সদস্য সচিব সুজন দে স্বাক্ষরিক এক বিবৃতিতে একথা বলা হয়।
বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রিয়া সাহার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তার এ বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবে প্রিয়া সাহা এ ধরনের অদ্ভুত ও অসত্য বক্তব্য প্রকাশ করেছেন।
ঢাকায় প্রিয়া সাহার
বাড়ির সামনে বিক্ষোভ
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তোলার কারণে প্রিয়া সাহার ঢাকার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে একদল যুবক।
শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে প্রিয়া সাহার বাড়ির সামনে 'সচেতন ছাত্র সমাজ' ব্যানারে ২০-২৫ জন প্রথমে মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনের পর তারা প্রিয়া সাহার বাসায় তালা দেয়ার প্রস্তুতি নিলেও পরে তা আর করেননি।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া আব্দুল কাইয়ুম নামে এক শিক্ষানবীশ আইনজীবী বলেন, 'প্রিয়া সাহা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন।
তিনি সংখ্যালঘুদের কথা চিন্তা করে নয়, বরং তার যে দুই মেয়ে আমেরিকা প্রবাসী তাদের নাগরিকত্ব পেতে ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেছেন। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি অনেক কঠিন। তিনি মিথ্যাচার করে তার দুই মেয়ের নাগরিকত্ব নেয়ার পথ পরিষ্কার করছেন।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া শুভ অধিকার নামে আরেক জন বলেন, 'বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা সব ধর্মের লোক মিলেমিশে বসবাস করছি।
৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু খুন ও গুমের যে তথ্য দিয়ে প্রিয়া সাহা ট্রাম্পের কাছে নালিশ করেছেন, তা আমরা মানতে পারিনি। তাই আমাদের অবস্থান জানাতে তার বাসার সামনে দাঁড়িয়েছি।