শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত হত্যা মামলায় স্ত্রী মিন্নির জামিন নাকচ

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি

বরগুনার শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় কারাবন্দি তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আদালত।

রোববার দুপুরে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সিরাজুল ইসলাম গাজী এ আদেশ দেন।

তার আদালতেই গত শুক্রবার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় 'স্বীকারোক্তিমূলক' জবানবন্দি দেন নিহত রিফাতের স্ত্রী।

অবশ্য মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের অভিযোগ, 'নির্যাতন ও জোরজবরদস্তি করে' তার মেয়েকে ওই জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

মিন্নিকে গ্রেপ্তারের পর গত ১৭ জুলাই আদালতে হাজির করার দিন কোনো আইনজীবী তার পক্ষে না দাঁড়ালেও রোববার মোট ১৩ জন তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন। তবে কারাগারে থাকা মিন্নিকে এ দিন আদালতে হাজির করা হয়নি।

আদালতে মিন্নির পক্ষে জামিনের আবেদনটি করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী আসলাম।

তার সঙ্গে আইন ও শালিশ কেন্দ্রের দুইজন এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (বস্নাস্ট) সাতজনসহ মোট ১৩ জন আইজীবী শুনানিতে অংশ নেন।

শুনানি শেষে আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, "রিফাত হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী মিন্নি জড়িত বলে এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। এ কারণে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছে।"

এখন বরগুনার জজ আদালতে মিন্নির পক্ষে জামিনের আবেদন করা হবে বলে জানান তার আইনজীবী।

গত ২৬ জুন রিফাতকে প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়।

পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন; তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে।

সম্প্রতি মিন্নির শ্বশুর তার ছেলের হত্যাকান্ডে পত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়।

তবে শ্বশুর অভিযোগ তোলার পর মিন্নি তা অস্বীকার করে পাল্টা বলেছিলেন, দুলাল শরীফ 'ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচনায়' পড়ে তাকে জড়িয়ে 'বানোয়াট' কথা বলছেন।

এরপর গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নেয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সেদিন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, তিনি তিনজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তাদের দাঁড়ানোর কথাও ছিল, কিন্তু তারা শুনানিতে অংশ নেননি।

ওই তিন আইনজীবী শুনানিতে না দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে ওকালতনামায় সই না হওয়ার কথা বললেও মিন্নির বাবা বলেন, 'প্রতিপক্ষের ভয়েই' আইনজীবীরা তার মেয়ের পক্ষে দাঁড়াননি।

আইনজীবী না থাকায় সেদিন মিন্নিকেই কথা বলার সুযোগ দেন বিচারক। মিন্নি তখন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, "আমার স্বামী রিফাত শরীফ। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। হত্যাকান্ডে আমি জড়িত নই। এ মামলায় আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।"

রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নিকে পুলিশ যেভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়। এর পেছনে প্রভাবশালী কারও প্ররোচনা রয়েছে কিনা, সেই প্রশ্ন তোলেন একজন সংসদ সদস্য।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে শুক্রবার বিকালে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়।

এ সময় মিন্নির বাবা মোজ্জাম্মেল হোসেন আদালত প্রাঙ্গণে চিৎকার করে বলতে থাকেন, 'জোর জবরদস্তি ও নির্যাতন করে' তার মেয়ের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, "মেয়ে আমার জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই তার অপরাধ? এ সবকিছুই শম্ভু বাবুর (সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে সেফ করার জন্য আমাদের বলি দেয়া হচ্ছে।"

এ বিষয়ে বরগুনা-১ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বা তা ছেলের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তিনি শনিবার রাতে মিন্নির আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলামকে তার চেম্বারে ডেকে নেন বলে আইনজীবীরা জানান।

মাহাবুবুল বারী আসলামকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "এমপি শম্ভু একজন সিনিয়র আইনজীবী। তার সাথে দেখা করেছি। তবে রিফাত হত্যা মামলা নিয়ে কোনো কথা হয়নি।"

এদিকে রিফাত হত্যার আসামিদের ফাঁসির দাবিতে রোববার দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে 'সর্বস্তরের জনগণের' ব্যানারে মানববন্ধন হয়।

রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ, রিফাতের মা ডেইজি বেগম, রিফাতের বোন ইসরাত জাহান মৌ, রিফাতের চাচা আবদুল আজিজ শরীফ, আবদুস সালাম শরীফ, রিফাতের চাচী কামরুন নাহার ও চাচাত বোন অনন্যা সেখানে বক্তব্য দেন।

পরে রিফাতের পরিবারের সদস্যরা বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নিকেই এ হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী করেন। একই সঙ্গে তারা মিন্নির মা-বাবাকে গ্রেপ্তার ও হত্যাকান্ডে জড়িত অন্য আসামিদেরও ফাঁসির দাবি জানান তারা।

এ মামলার এজাহারভুক্ত ছয়জন ও মিন্নিসহ মোট ১৩ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যা মামলার মূল আসামি সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<59297 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1