বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৪৮ হাজার ছাড়াল ডেঙ্গু রোগী, মৃতু্য আরও ৪

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
তপন কুমার মন্ডল

কোরবানির ঈদের ছুটিতে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও তা আবার বাড়তে শুরু করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৯২৯ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮১১ জন নতুন রোগী, ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১১৮ জন।

বুধবার ঢাকায় নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ৭৫৫ জন, আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ১২৫ জন।

হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার বলেন, 'ঈদের দ্বিতীয় দিনের তুলনায় তৃতীয় দিনে নতুন রোগী ৪৯ জন বেড়েছে। তবে ঢাকার বাইরে আজ নতুন রোগী কিছুটা কমেছে।'

তিনি বলেন, 'আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে, এমনটি আগে বলেছি আমরা। আরও ৭ থেকে ৯ দিন দেখার পর আমরা বলতে পারব, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে না কমবে।'

তবে আয়শা আক্তারের ধারণা, জনসাধারণ আগের চেয়ে সতর্ক হওয়ায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই কমে আসবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ হাজার ২৮০ জন।

তাদের মধ্যে ৪০ হাজার ৬৭০ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭ হাজার ৫৭০ জন।

এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে আছেন ৩ হাজার ৯১০ জন, অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩ হাজার ৬৬০ জন।

যারা বাসায় থেকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের সংখ্যা এই হিসাবে আসেনি।

সরকার চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪০ জনের মৃতু্যর তথ্য নিশ্চিত করা হলেও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১২৪ জনের তথ্য পাওয়া গেছে।

সরকারি হিসাবে চলতি বছর এপ্রিলে ৫৮ জন, মে মাসে ১৯৩ জন, জুনে ১৮৮৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। জুলাই মাসে তা এক লাফে ১৬ হাজার ২৫৩ জনে পৌঁছায়। আর আগস্টের ১৪ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৯ হাজার ৮১৯ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ২৯৫ জন নতুন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ২০৯ জন, খুলনা বিভাগে ১৫১ জন, রংপুর বিভাগে ৮১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৩০ জন, বরিশাল বিভাগে ১৭১ জন, সিলেট বিভাগে ২৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গুতে আরও চারজনের মৃতু্য

এদিকে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা, মাগুরা, মাদারীপুর ও চাঁদপুরে চারজনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এক পোশাককর্মী। আর মাগুরায় মারা গেছেন এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি যিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সেবার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। মাদারীপুরে মারা গেছেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী। আর চাঁদপুরে মারা গেছে এক মাদ্রাসাছাত্র।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মৌসুমী বেগম নামের ২৫ বছর বয়সী এক নারী ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে বৃহস্পতিবার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে সেখানেই তার মৃতু্য হয়।

মৌসুমীর স্বামী মো. মামুন বলেন, তাদের বাসা তালতলা মোলস্নাপাড়ায়। মৌসুমী ৬০ ফুট এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। আর মামুন কাজ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।

তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সকালে মৌসুমীর জ্বর এলে শ্যামলীর একটি হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

কিন্তু সোহরাওয়ার্দীর চিকিৎসকরা মৌসুমীকে দ্রম্নত ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দেন। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায় মৌসুমীকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে ভর্তি করার পর দুই ঘণ্টার মাথায় তার মৃতু্য হয় বলে জানান মামুন।

তাদের কোনো সন্তান নেই জানিয়ে মামুন বলেন, মৌসুমীর লাশ পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় তাদের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।

এদিকে মাগুরা সদর উপজেলার নরসিংহাটি গ্রামে জয়নাল শরীফ (৫২) নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যান বলে জেলার সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ কুমার সাহা জানান।

জয়নাল শরীফ নরসিংহাটি গ্রামের গফুর শরীফের ছেলে। ঢাকার একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করতেন।

তার ভাই হারুন অর রশিদ জানান, গত ৮ অগাস্ট ঢাকায় জ্বরে আক্রান্ত হলে জয়নালের ডেঙ্গু ধরা পড়ে।

ওই অবস্থায় জয়নাল বাড়িতে চলে যান এবং ১০ অগাস্ট মাগুরা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেও চিকিৎসকরা তার রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হন।

সেখানে জয়নালের অবস্থার অবনতি হলে মাগুরার চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ফরিদপুরে নেয়ার পর জয়নালের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।

ফরিদপুরের চিকিৎসকরা ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দিলেও পরিবারের সদস্যরা বুধবার জয়নালকে মাগুরায় বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িতেই তার মৃতু্য হয় বলে জানান তার ভাই হারুন।

মাগুরার সিভিল সার্জন প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, 'আমাদের এখানে পরীক্ষা করেও জয়নালের ডেঙ্গু পাওয়া গিয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় না নিয়ে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছিল। আজ বাড়িতেই সে মারা গেছে।'

এদিকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের বড়াইলবাড়ী গ্রামের জদুনাথ মন্ডলের ছেলে ও মাদারীপুর সদরের স্বাস্থ্য সহকারী তপন কুমার মন্ডল (৩৫)। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।

সিভিল সার্জন অফিস ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদরে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারী তপন কুমার মন্ডল ১৬ দিন আগে সরকারি আদেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৮ নং ওয়ার্ডে ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য যান। সেখানে কর্তব্যরত অবস্থায় গত ১১ আগস্ট ডেঙ্গুজ্বরে আক্রন্ত হন। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এলে অসুস্থতা বাড়লে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে বুধবার থেকে আইসিইউতে থাকার পর বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে মারা যান। এই নিয়ে মাদারীপুরে ডেঙ্গুজ্বরে সাতজনের মৃতু্য হলো।

অন্যদিকে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আবু বকর সিদ্দিক সিয়াম (১৪) নামে এক মাদ্রাসাছাত্র মারা গেছে। বুধবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়।

সিয়াম শাহরাস্তি উপজেলার টামটা পশ্চিমপাড়া নোয়াবাড়ি জাকির হোসেনের ছেলে। সিয়ামের মা-বাবা ও দুই বোন রয়েছে। সে হাজীগঞ্জ উপজেলার গর্ন্ধব্যপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিল।

জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মাদ্র্রাসা থেকে জ্বর নিয়ে বাড়ি আসে সিয়াম। গত মঙ্গলবার শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে জ্বর পরীক্ষা করতে গিয়ে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। বুধবার তাকে কুমিলস্নায় রেফার করা হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে রাতে মারা যায় সে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62472 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1